• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

মিথ্যা মামলায় বাসস্থান হারাচ্ছেন বিহারিরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ নভেম্বর ২০২০

মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে অবস্থিত বিহারিদের শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ওপর মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের বাসস্থান দখল করে নিচ্ছেন আইনজীবী অ্যাড. মোঃ আবদুল মোমিন। আদালত থেকে একই ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ওপর চাঁদাবাজির ৩টি মামলা করেছেন এই আইনজীবী। তার মামলার জালে আটকাপড়ে একমাত্র বাসস্থান হারাতে হয়েছে বিহারি ক্যাম্পের ১০টি পরিবারকে। চলতি বছরে নতুন করে ওই ক্যাম্পের ৫ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেন তিনি। এ মামলার সত্যতা যাচাই করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন পল্লবী থানার এস আই পিন্টু কুমার সাহা। কিন্তু বিহারিদের অভিযোগ এই মামলার কোনো তদন্ত না করেই প্রতিবেদন দিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্লবীর সেকশন ১০, ১১ ও ১২ তে বিহারিদের ৩৯টি ছোট-বড় ক্যাম্প রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা এ ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছে। কিন্তু ১৯৯৫ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ওই ক্যাম্পের জায়গাগুলোকে খালি জায়গা দেখিয়ে বহিরাগতদের মাঝে বরাদ্দ দিয়ে দেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় বিহারিদের আবাসন বাঁচানোর লড়াই। জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে হামলা, মামলা, অগ্নিসংযোগ ও খুনের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

২০১৪ সালে পল্লবীর কালশীতে ৯ বিহারিকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার পর এ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে জায়গা খুঁজে বের করার জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। বিহারি ক্যাম্পের জায়াগাগুলো প্রায় ৪০০ জনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সবাই বিহারিদের পুনর্বাসনের জন্য অপেক্ষা করলেও মরিয়া হয়ে উঠেছেন আইনজীবী মোঃ আবদুল মোমিন। নিজের প্লট উদ্ধারের কৌশল হিসেবে বিহারিদের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা দিয়ে যাচ্ছেন। আদালত থেকে এ পর্যন্ত তিনি বিহারিদের বিরুদ্ধে ৩ টি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন। সবগুলো মামলাতেই ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ এনেছেন তিনি। বিহারি ক্যাম্পগুলো উচ্ছেদ না করতে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থার আদেশ থাকলেও সেটা না মেনে নিজের মতো করে প্লট উদ্ধারের সব চেষ্টাই করে যাচ্ছেন এই আইনজীবী। এ পর্যন্ত তিনি ১০ টি পরিবারকে এইভাবে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করে ক্যাম্পের জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। কিছু পরিবারকে খুবই সামান্য টাকা দিয়ে ক্যাম্প থেকে বের করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মোঃ জামিল অভিযোগ করে বলেন, ২০০৮ সালে শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পের বাসিন্দা জামিল, জাহিদ, মিঠু ও আশরাফের নামে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেন অ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল মোমিন। এরপর ওয়ারেন্ট ইস্যু করিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করান। জামিনের চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। এরপর মামলার আসামিদের স্বজনদের কিছু টাকার বিনিময়ে ক্যাম্পের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। সে পরিবারগুলো ক্যাম্প খালি করে দিলে জামিল, জাহিদ, মিঠু ও আশরাফের জামিনের ব্যবস্থা করেন এই আইনজীবী। ২০১৮ সালে একইভাবে ওই ক্যাম্পের বাসিন্দা মেরাজ, মমতাজ, সেন্টু, মোস্তফার বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা দেন মোমিন। মামলার পর গ্রেপ্তার করিয়ে সুকৌশলে তাদের জায়গা নিজের দখলে নিয়ে তাদেরও জামিনের ব্যবস্থা করে দেন তিনি।

চলতি বছরে আবারো ওই ক্যাম্পের বাসিন্দা জামিল, মেরাজ, মুন্না, জুয়েল ও কায়সারের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির মামলা দেন এই আইনজীবী।

ওই ক্যাম্পের বাসিন্দা রোজি জানান, ৬ অক্টোবর সকালে শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পে আসেন মোমিন ও তার সঙ্গপাঙ্গরা। প্রথমে ঝামেলায় না গিয়ে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন এই আইনজীবী। এতে রাজি না হলে তার সাথে আসা ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসী ক্যাম্পের ৫ জন বাসিন্দাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেন। এসময় সেই ক্যাম্পের বিহারি বাসিন্দাদের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। নারীরা এগিয়ে আসলে তাদেরও মারধর করা হয়। এরপর পুলিশ এসে সেখান থেকে দুইজনকে ওয়ারেন্টের আসামি বলে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান।

তাৎক্ষণিকভাবে গণভবনে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ২ টি বাসে প্রায় শতাধিক বিহারিরা বেরিয়ে পড়েন। পরে দারুসসালাম রোডে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে পুলিশি হেফাজতে বাড়ি ফিরেন বিহারিরা।

শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পের বাসিন্দা মোঃ জামিল জানান, অ্যাডভোকেট মোমিন যেভাবে মামলার পর মামলা দিচ্ছে এতে আমাদের বসবাস করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের সবার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। আমরা বাসায় থাকতে পারিনা। এমন সময় আমাদের বাসায় গিয়ে মহিলাদের হুমকি দেয়। মাঝে মাঝে কুপ্রস্তাবও দেয়। এদিকে সে আদালতে মামলা করলে পুলিশ তদন্ত না করেই আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়ে দেয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য অ্যাডভোকেট মোমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা আমার জায়গা তারা দখল করে রেখেছে। আমি জায়গা দখল নিতে গেলে তারা আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন আমিও দু’জন সাংবাদিক ঠিক করেছি, আমাদের পক্ষে বলার জন্য। আমার এ বিষয়টি ওসি ও র্যাব কর্মকর্তারা জানেন।

এ বিষয়ে পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার শাহ কামাল বলেন, বিহারিদের পক্ষ থেকে যে  অভিযোগ করা হয়েছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।

অ্যাডভোকেট মোমিন কর্তৃক দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ২৪ অক্টোবর মিরপুর সেকশন ১০ ব্লক এ শহীদ এ মিল্লাত ক্যাম্পের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা উর্দুভাষী যুব-ছাত্র আন্দোলন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads