• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

আট বছরে দুই সিটি করপোরেশন

চ্যালেঞ্জ মশা, দূষণ ও জলাবদ্ধতা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০২১

ধূলিদূষণ, মশার উপদ্রব, জলাবদ্ধতায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। বছরের পর বছর ধরে এসব খাতে অনেক ব্যয় ও অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে আট বছর আগে রাজধানী ঢাকাকে বিভক্ত করে দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়। এ দীর্ঘ সময়ে দুই সিটি করপোরেশন পেয়েছে বেশ কয়েকজন নগরপিতা ও প্রশাসক। কিন্তু দুই-একটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন এলেও এখনো প্রধান সমস্যাগুলোর কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি কোনো সিটি করপোরেশনই। সমস্যাগুলো দিন দিন আরো প্রকট আকার ধারণ করছে।

গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীতে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। হাঁকডাক দিয়ে মশার ওষুধ আমদানি ও এ খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং করোনা মহামারীর মধ্যেও ডেঙ্গু নীরব ঘাতকে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগর কর্তৃপক্ষকে লোক দেখানো পদক্ষেপ বাদ দিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণে আরো মনোযোগী হয়ে উপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। ধূলিদূষণে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় শহরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম। অথচ এই শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দুটি স্বতন্ত্র সংস্থা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরও এ নিয়ে কাজ করছে। তার পরও গত কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণের শহরের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ঢাকা। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮০০২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ অবস্থায় শহরে নির্মল বায়ুর প্রবাহ নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুই সিটি করপোরেশনকে নজর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও নগরবিদরা।

শুধু তাই নয়, সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর রাস্তাঘাট মিনি নদীতে পরিণত হয়। নগরবিদদের মতে, নগরীর খাল, জলাশয় ও ড্রেনগুলো বেদখল হয়ে পড়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে দীর্ঘ ৩১ বছর পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ওয়াসা থেকে ২৬টি খালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুই সিটি করপোরেশনকে। যদিও এ খালগুলোর মধ্যে কয়েকটির দায়িত্ব ইতোপূর্বেও সিটি করপোরেশনের ছিল। কিন্তু এসব খাল দখলমুক্ত করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি করপোরেশন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বিগত বছর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নতুন বছরের কাজ শুরু করতে হবে। ২০২১ সালে পরিবেশ ও প্রতিবেশকে ঠিক রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কীভাবে শহর ও তার মানুষকে রক্ষা করা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্মল বায়ুর প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দীর্ঘ সময় আমরা শহরের মৌলিক পরিবেশ হারিয়েছিলাম। হারিয়ে যাওয়া পরিবেশ উদ্ধার করতে হবে। উন্নয়নের কাঠামোগত দিক পরিবর্তন করতে হবে। প্রোডাকশন থেকে ফিরে আসতে হবে। এখনো পুরনো পদ্ধতিতে খোঁড়াখুঁড়ি রয়ে গেছে। উন্নত শহরগুলোতে এর ধরন কিন্তু ভিন্ন। তাদের উন্নয়নকাজে ধূলিদূষণ একেবারেই হয় না। এছাড়া একদিকে উচ্ছেদ অন্যদিকে দখল খেলা চলছে। দুই মেয়রকে এসব বন্ধ করতে হবে। তবেই শহরকে ধূলিদূষণ থেকে মুক্ত করা যাবে।

এ পরিকল্পনাবিদের মতে, ঢাকা শহরে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তা একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যথেষ্ট। উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে। সবুজায়ন বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। জলাবদ্ধতার জন্য বড় বড় প্রকল্পই দায়ী। শহরের ড্রেনগুলোতে মশার উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। নর্দমা, বক্স-কালভার্ট ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখতে পালে জলাবদ্ধতা দূর হওয়ার পাশাপাশি মশার প্রজননস্থলও ধ্বংস হবে। নতুন বছরে মেয়রদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা, তারা এ সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন। জানতে চাইলে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে হলে নতুন বছরে আমাদের জনঘনত্ব বিবেচনা করে জোনিংয়ে হাত দিতে হবে। যানজট নিরসনে পাবলিক ট্রন্সপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। সেটা হতে পারে মেট্রোরেল, বিআরটি বা অন্য কিছু। আমাদের অনেক জলাশয় ও লেক হারিয়ে গেছে। সিএস নকশা ধরে সেগুলো উদ্ধার করতে হবে। পাশাপাশি একটি ওয়াটার বেজড নেটওয়ার্ক তৈরি করে ত্রিমুখী যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলেই ঢাকা হবে পৃথিবীর সুন্দর শহরগুলোর একটি।

নগরবিদদের প্রত্যাশার সঙ্গে একমত পোষণ করে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিটি সমস্যা চিহ্নিত। এখন শুধু প্রয়োজন সমাধানে যাত্রা শুরুর। আমরা সে পথেই হাঁটছি। নগর পরিকল্পনাবিদ ও নাগরিকদের সমন্বয়ে আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আশা করি নতুন বছরে তা আরো দৃশ্যমান হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads