• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

ওষুধ ছিটালেও মরে না মশা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ জানুয়ারি ২০২১

বারো মাসই মশার উপদ্রব থাকে রাজধানী ঢাকার কমবেশি সব এলাকায়। এজন্য বছরব্যাপী ওষুধ ছিটিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু মশার কাছে এবার সে চেষ্টাও যেন বিফল। ঢাকার উত্তর কিংবা দক্ষিণ, সব জায়গাতেই চলছে মশার লাগামহীন উপদ্রব। এতে চরম অতিষ্ঠ যেমন নগরবাসী, তেমনি বিপাকে পড়েছে দুই সিটি করপোরেশন।

২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৭৯ জনের মৃত্যুর পর অনেকটা গা ঝাড়া দিয়ে মশার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল ঢাকার দুই সিটি। ফলে পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে মশার উপদ্রব থাকলেও তা ছিল লাগামের মধ্যে। এমনকি বছরটিতে করোনার বিপর্যয়ে মাঝেও দুই সিটি নিয়মিত ওষুধ ছিটানোসহ মশা নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় কার্যে জোরদার করেছিল মনিটরিং ব্যবস্থা। এতে ডেঙ্গুর উপদ্রব দেখা দিলেও তা গত বছর খুব বেশি মাথাচাড়া দিতে পারেনি।

কিন্তু ডেঙ্গুর মৌসুম শেষে আবারো বেড়েছে মশার উপদ্রব। তবে এবার আর এডিশ মশা নয়, বিরক্তিকর কিউলিক্সে সয়লাব সব জায়গা। তবে নগরবাসীর অভিযোগ, ওষুধ ছিটানোকালেও মশার উপদ্রব কমে না।

রাজধানীর ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, গণকটুলি, বংশাল, সূত্রাপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মিরপুর-১, ১০ এবং ভাসানটেকসহ আশপাশের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটাচ্ছে সিটি করপোরেশনের মশককর্মীরা। কিন্তু ওষুধ ছিটালেও মশার উপদ্রব কমেনি। রাত তো দূরের কথা এসব এলাকায় দিনের বেলায়ও মশায় অতিষ্ঠ থাকেন বলে জানান বাসিন্দারা।

ঝিগাতলার হাজী আফসার উদ্দিন লেনের নিরাপত্তা প্রহরী আসলাম বলেন, ‘একদিন পরপর বিকেলে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখি। কিন্তু মশা তো কমে না। মশার ওষুধ যে সময় ছিটায় সে সময়ও দেখি মশা কামড়াচ্ছে। গলির মুখে বসা যায় না মশার কামড়ে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরা প্রথমত কারণ অনুসন্ধান করছি, ঠিক কী কী কারণে এবং কোথায় কোথায় এসব মশার সৃষ্টি হচ্ছে। একইসঙ্গে কোথায় কোথায় উপদ্রব বেশি সেটিও অনুসন্ধান করছি। আর এ কাজটি আমরা আইইডিসিআর ও কীটতত্ত্ববিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে করছি। সেই সঙ্গে আমাদের যে চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড কীটনাশক ওষুধ রয়েছে সেটির প্রয়োগও অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ওয়াসা কাছ থেকে যেসব খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমরা পেয়েছি সেগুলো যদি সচল করা যায় তখন আর মশার এমন উপদ্রব থাকবে না।’

একই কথা জানালেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের। তিনি বলেন, ‘ডিএসসিসির বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি মেয়র মহোদয়ও অবগত রয়েছেন। এমনকি মেয়র মহোদয় সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এর কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নিয়মিত যেসব ওষুধ ছিটানো হচ্ছে সেগুলোর পরিবর্তনে নতুন কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যায় কিনা সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন।’

তবে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার মনে করেন, হঠাৎ মশার উপদ্রব বাড়েনি। বরং শীত মৌসুমে কিউলিক্স মশার উপদ্রব থাকে। তাই মশার ওষুধের প্রয়োগ পদ্ধতিতে নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রথমত যেসব জায়গায় এসব মশা জন্মায় সেগুলো নষ্ট করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, যে জায়গায় লার্ভিসাইড করা হয়েছে সে জায়গায় পুনরায় কমপক্ষে অন্তত ৭ দিন পর আবারো লার্ভিসাইড করতে হবে এবং তৃতীয়ত, উড়ন্ত যেসব মশা রয়েছে সেগুলোকে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মতো করে অর্থাৎ যে এলাকায় ওষুধ ছিটানো হবে সে এলাকার সব জায়গায় যেন ছিটানো হয়।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads