• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বইমেলা বন্ধের শঙ্কায় দিশেহারা প্রকাশকরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

মহানগর

বইমেলা বন্ধের শঙ্কায় দিশেহারা প্রকাশকরা

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০২১

করোনা মহামারীর কারণে দেড় মাস পিছিয়ে গত ১৮ মার্চ শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মেলার সময়সূচিতে আনা হয়েছে পরিবর্তন। এরই মধ্যে মেলায় এসেছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত কয়েক হাজার বই। কিন্তু করোনার প্রভাবে মেলায় ক্রেতা নেই, তাই বিক্রি হচ্ছে না বই। পাশাপাশি দিনদিন করোনা সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হওয়ায় রমজানের আগেই বইমেলা বন্ধের শঙ্কায় দিশেহারা লেখক ও প্রকাশকরা।   

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে বাঙালির প্রাণের এই মাসব্যাপী উৎসব শুরু হয়। কিন্তু এবছর প্রায় দেড় মাস পিছিয়ে বইমেলার ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে ঘোষণা দেওয়া হয়, বইমেলা চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। আর প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে মেলা। তবে ছুটির দিনগুলোতে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়। শুরুতেই খানিকটা জমে উঠেছিল মেলা। কিন্তু হঠাৎ করে দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে মেলার সময়সীমা কমানো হয়।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী জানান, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমতি মেলার পর ১৮ মার্চ থেকে বইমেলা শুরু হয়। ওই সময় আমাদের ইচ্ছা ছিল ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত পুরোদমে মেলা চলবে। তাছাড়া, এর মধ্যে যদি কোনো আপত্তি উঠে, তবে রমজান মাস শুরুর আগের দিন মেলার সমাপনী আয়োজন করব। কিন্তু করোনায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে মেলার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি ও সরকারের নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা করে কতদিন মেলা চলবে তা ঠিক করা হবে।

তবে প্রকাশকরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে বইমেলা আয়োজনে কোনো সমস্যা দেখছেন না। বাংলাদেশের প্রকাশকদের অন্যতম সংগঠন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক বলেন, এমনিতেই দেশের প্রকাশনা শিল্প হুমকির মধ্যে আছে। এর মধ্যে মেলা বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের প্রকাশনা শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা চাই, বইমেলা ৩০ দিন হোক। কেননা সারা বছর এই মেলার জন্য পাঠকেরা অপেক্ষা করেন। প্রকাশকেরাও নানাভাবে প্রস্তুতি নেন, বিনিয়োগ করেন। এক মাসের কমে মেলা হলে, তাতে লেখক-প্রকাশক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এদিকে বইমেলা শুরুর পর থেকে অন্তত ১৫ জন লেখক, প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে মেলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ভেবে আক্রান্তরা মুখ খুলছেন না। প্রকাশকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে মেলার সময় কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এখন প্রকাশক, লেখক ও বিক্রয়কর্মীরা করোনা আক্রান্ত হওয়া ছড়িয়ে পড়লেও মেলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই তারাও আক্রান্ত হওয়ার খবরটি গোপন রাখার পক্ষেই মত দিচ্ছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে অন্য প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মাহজারুল ইসলাম, আহমদ পাবলিশার্স হাউজের প্রকাশ মিজবাহ, বিজয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী তপন, পাঞ্জেরী প্রকাশনীর কামরুল হাসান শায়ক ও লেখক মোশতাক আহমেদসহ অনেকই করোনা পজিটিভ এসেছে।

বই মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে দেখা যায়, দর্শণার্থী কিংবা ক্রেতারা মাস্ক পরে স্বাস্থ্য মেনে মেলায় প্রবেশ করলেও মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকে মাস্ক খুলে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক বিক্রয়কর্মীকেও মাস্ক নামিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। তবে লোক দেখানো মাস্ক ব্যবহারে সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি দাবি করছেন তারা।

অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বইমেলা বন্ধসহ সরকারকে ৫ দফা সুপারিশ করে গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। একইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনাকেও স্বাগত জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

এদিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও পাওয়া যায়নি মেলা বন্ধ হওয়ার নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের কথা। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, যেহেতু করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মেলায় যারা প্রকাশক আছেন তাদের ব্যবসাও ভালো না। সেক্ষেত্রে বন্ধ হতেও পারে বইমেলা। তবে মেলা বন্ধের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, সাড়ে ৬টায় মেলা বন্ধ করার বিষয়ে বাংলা একাডেমির একতরফা সিদ্ধান্তে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত চরমভাবে হচ্ছেন। ৩টার সময় মেলা শুরু হওয়ার পর ৫টা পর্যন্ত মেলাপ্রাঙ্গণ পুরো খালি থাকে। এমনিতেই বিক্রি নেই, যা হয় তা সন্ধ্যার পরেই। এর মধ্যে মেলা ৩০ দিনের আগে বন্ধ হয়ে গেলে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবো।

পারিজাত প্রকাশনীর শাখাওয়াত হোসেন লিটু বলেন, সাড়ে ৬টায় মেলা বন্ধ, ৬টায় পর আর মেলায় ঢোকা যায় না। এটা কেমন সিদ্ধান্ত হলো। এতে তো মেলায় মানুষ আসতেই পারছে না। মেলায় চাকরিজীবীরাই বেশি আসেন। ৫টায় অফিস শেষ করে কোনো মানুষ ৬টার ভেতর মেলায় আসতে পারে না। এমন না করে বরং ৪টায় শুরু করে ৮টা পর্যন্ত মেলার সময়সীমা বেঁধে দিলে হয়তো আমরা একটু কম ক্ষতিগ্রস্ত হতাম।

বর্ণমালার কর্ণধার মামুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলা একাডেমির এই একতরফা সিদ্ধান্ত আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। অন্য সবার মতো আমরা সরকারকে ট্যাক্স ও ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করি। সব সেক্টরে সরকার প্রণোদনা দিলেও আমাদের প্রকাশনা সেক্টরে কোনো প্রণোদনা দেয়নি। বাংলা একাডেমির এই সিদ্ধান্ত মেলা ও প্রকাশনা শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমরা চাই মেলার সময়সীমা ৩০ দিন করা এবং মেলায় প্রবেশের সময় অন্তত বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করা হোক।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads