• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রাজধানীতে যানজট ফুটপাতে ভিড়

ছবি: বাংলাদেশের খবর

মহানগর

রাজধানীতে যানজট ফুটপাতে ভিড়

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে সাত দিনের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছিল যানজট ও ফুটপাতে সাধারণ মানুষের ভিড়। আর গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যথারীতি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কর্মজীবীদের। অধিকাংশ মানুষই সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এদিকে, অফিস-আদালতসহ প্রায় সবকিছুই খোলা থাকায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি অফিসগামী মানুষের ঢল। প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহন ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, অটোরিকশা ও রিকশার ভিড়।

গতকাল সকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়ক ও বিশ্বরোডের বিভিন্ন সিগনালে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। উল্টো রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল সড়কে প্রথমদিনের চেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল চোখে পড়েছে। কাকরাইলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সেলিম ভূইয়া জানান, মালিবাগ থেকে হেঁটে কাকরাইলের অফিসে এসেছি। গতকালের তুলনায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। মতিঝিলে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন ফরাজী বলেন, একদিকে গণপরিবহন বন্ধ আবার সরকারি-বেসরকারি অফিসও খোলা। যানবাহন নেই বলে আমাদের কষ্টের সীমা নেই। রিকশায় অফিসে আসা-যাওয়া করতে বেশি ভাড়া এখন গুণতে হচ্ছে। তিনি বলেন, রামপুরায় থাকি, এতো দূর থেকে তো আর পায়ে হেঁটে আসা যায় না। সেজন্য আমাকে বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে অফিসে যেতে। অথচ যাদের গাড়ি আছে তারা আগের চেয়ে এখন আরো স্বাচ্ছন্দ্যে অফিসে যাচ্ছে। সমস্যা শুধু কম বেতনের চাকরিজীবীদের।

এদিকে অফিস যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে সব সিটির ভেতর গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের মহামারী নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মধ্যেই ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন এলাকায় আজ থেকে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা চালু থাকবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নিজের সরকারি বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী বলেন, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সকল সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন সেবা চালু থাকবে। তবে শহরের বাইরের কোনো পরিবহন শহরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বের হতে পারবে না।

রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে গতকাল দেখা গেছে,

 

রাজধানীতে যানজট ফুটপাতে ভিড়

 

 সকাল থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস চলাচল করেনি। চোখে পড়েনি কোনো যাত্রীর আনাগোনাও। সংশ্লিষ্টরা জানান, লকডাউনের ফলে যারা ঢাকা ছাড়ার তারা আগেই ছেড়েছেন। এখন যারা ঢাকায় রয়েছেন প্রয়োজনেই রয়েছেন। এর বাইরে গণপরিবহন বন্ধ থাকার ঘোষণায় কেউই বাসের জন্য টার্মিনালগুলোতে যাচ্ছেন না। গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাস কাউন্টারগুলো এদিন বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো কাউন্টারে দু-একজন কর্মী রয়েছেন শুধু দেখাশোনার জন্য। যেহেতু বাস ছাড়ছে না, সেহেতু বন্ধ রয়েছে টিকিট কেনাবেচাও।

গাবতলীতে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের সামনে কথা হয় সুজনের সঙ্গে। তিনি জানান, লকডাউনে সবই বাস চলাচলই বন্ধ রয়েছে। তাই কাউন্টারে টিকিট বিক্রিও নেই। জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঢাকার বাইরে গেলে নিজের ব্যবস্থাপনাতেই যেতে হবে। তবে আমিনবাজার ব্রিজের ওপরে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল যোগে অনেককে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা ঢাকায় প্রবেশে ইচ্ছুক মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করে, কারণ নিশ্চিত হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে দিতে দেখা গেছে। আর মহাখালী বাস টার্মিনালে এনা পরিবহনের আক্তার মিয়া জানান, সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাধারণত কেউ টিকিটের জন্য আসছেনও না। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল ও টিকিট কেনাবেচা বন্ধ থাকবে।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিন ঢাকার মিরপুর, বনানী, গুলশান, বারিধারা, কাওরানবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রধান সড়কগুলোতে বড় দোকানপাট ও হোটেলের অধিকাংশই ছিল বন্ধ। তবে প্রধানসড়ক সংযুক্ত অলি-গলির প্রতিটি দোকানপাট, বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর সবই ছিল খোলা। প্রধানসড়কের মৌচাক, মগবাজার, এলিফ্যান্ট রোডের শপিং-মলগুলো বন্ধ থাকলেও অলি-গলির দোকান-পাট খোলা রয়েছে। শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, রামপুরায় কাঁচাবাজার খোলা আছে। তবে তেমন একটা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাজারের আশপাশে খোলা রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। বলতে গেলে প্রধান সড়কগুলোতে ক্রেতাদের চাপ বেড়েছে গলির দোকানপাটগুলোতে। এছাড়া গলির চায়ের দোকানগুলোতে লোকজনের আড্ডাও লক্ষ করা গেছে। তবে রাজধানীর ফুটপাতে কর্মজীবী শ্রমিকরা বসে ছিলেন কাজের প্রত্যাশায়। বিশেষ করে নির্মাণশ্রমিক বা জোগালিরা চরম বিপাকে পড়েছে। সকাল ১০টার দিকে মিরপুর ১১ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক কাজের আশায় বসে আছেন। কেউই তাদের কাজের জন্য ডাকেননি। নওগাঁ থেকে আসা রনি জানান, ভাই লকডাউনের কারণে আমরা কাজ পাচ্ছি না। কীভাবে চলব জানি না, বহুত কষ্টে আছি। সজিব নামে আরেক শ্রমিক বললেন, গতকালও তিনি কাজের জন্য দুপুর পর্যন্ত বসেছিলেন, কাজ পাননি।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ বিস্তার রোধকল্পে ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি শপিংমল, দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ১১ দফা নিষেধাজ্ঞায় সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে একুশে বইমেলা এবং সিনেমা হলগুলো খোলা রাখা হয়। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সারা দেশে একযোগে সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের এরকম লকডাউন এই প্রথম। কিন্তু সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পনা অনুযায়ী লকডাউন না হওয়ায় এর ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ছে না এবার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads