• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
মাস্কের দাম ও ব্যবহার বেড়েছে রাজধানীতে

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

মাস্কের দাম ও ব্যবহার বেড়েছে রাজধানীতে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০২১

রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে মাস্ক পরিধানের ব্যাপারে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। লকডাউনের আগে অধিকাংশ মানুষ মাস্কবিহীন ঘোরাফেরা করলেও গত দুদিনে এ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে যারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের প্রায় সবাই মুখে মাস্ক পরিধান করেছেন। যদিও ব্যবহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দামও বেড়েছে। মাস্ক ছাড়াও করোনা সুরক্ষার সব সামগ্রীর দাম বেড়েছে।

দেশব্যাপী সাতদিনের লকডাউনের তৃতীয় দিন গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, বাসাবো, খিলগাঁও, রামপুরা, ধানমন্ডি, মগবাজার, মালিবাগ, পুরান ঢাকা, উত্তরা, নিলক্ষেত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষ আগের তুলনায় মাস্ক বেশি পরছেন। তবে অনেকের মাস্ক নির্দিষ্ট জায়গা অর্থাৎ নাক ও মুখ ঢেকে ছিল না।  সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছেন থুতনির অংশে। কারো মাস্ক শুধু মুখ ঢেকে ছিল; নাক অনাবৃত ছিল। অনেকে মাস্ক কায়দা করে বুকে টানিয়ে রেখেছেন। শাহবাগে রিকশার সিটে বসে ছিলেন এক তরুণ রিকশাচালক। মাথার ওপর কড়া রোদের তাপে ঘামছিলেন তিনি। রঙিন একটি গামছা মাথায় বাঁধার পাশাপাশি মুখেও পেঁচিয়ে রেখেছিলেন।

মুখে মাস্ক কেন পরেননি এ প্রশ্ন করতেই হকচকিত হয়ে রিকশাচালক বলেন, মুখে মাস্ক পরে বেশিক্ষণ রিকশা চালালে দম বন্ধ হয়ে আসে। তা ছাড়া গরমে মাস্ক ভিজে যায়।

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে তিনি নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গামছা দিয়ে মাস্ক বানিয়ে মুখে পেঁচিয়ে রেখেছি। মাঝে মাঝে খুলে ঘামও মুছছিলেন তিনি। এতে কোনো সমস্যা আছে কি না তা জানতে চান।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অফিস করেন ইমামুল করিম। তিনি বলেন, কতক্ষণ আর মাস্ক লাগিয়ে থাকা যায়? তবে মাস্ক পরি। মাঝেসাঝে কিছু খেতে হলেও মাস্ক খোলা লাগে। পল্টনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনের সামনে পাইকারি ও খুচরা মাস্ক বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা স্বীকার করেন মাস্কের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে করোনা থেকে বাঁচার অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর দাম পূর্বের মতোই রয়েছে জানালেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তা গত এক সপ্তাহ আগের চাইতে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা সার্জিক্যাল মাস্ক এবং এন-৯৫ মাস্কসহ কাপড়ের তৈরি মাস্কের। বিভিন্ন এলাকার বিক্রেতারা জানান, আগে ৫০টির এক প্যাকেট সার্জিক্যাল মাস্ক ৭০ টাকা এবং ১০টির এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেট ২২৫ টাকা পাইকারি ক্রয় মূল্য ছিল। বর্তমানে সার্জিক্যাল মাস্ক ১২৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, বিভিন্ন শোরুমে ভালো মানের সার্জিক্যাল মাস্ক সাড়ে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর এন-৯৫ মাস্ক ৩০ টাকায় নেমে এলেও বর্তমানে তা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানুষ নিজের সুরক্ষায় বেশি দাম দিয়ে এসব কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

মাস্কের দাম বেশি কেন জানতে চাইলে শিল্পকলা একাডেমির খুচরা বিক্রেতা ইয়াসমিন বলেন, সরকার লকডাউন ঘোষণা দেওয়ার পর মাস্ক পরার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তাই এখন মাস্কের চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগে ঢাকায় মানুষ বেশি মাস্ক ব্যবহার করতো। কিন্তু বর্তমানে গ্রামে এবং মফস্বল এলাকাতেও মানুষ মাস্ক পরছে। তাই মাস্কের চাহিদা পূর্বের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। চাহিদা বাড়ার কারণে মাস্কের দামও বেড়েছে।

বিএমএ ভবনের সামনে দাঁড়ানো মাস্ক বিক্রেতা খলিলসহ একাধিক বিক্রেতা জানান, করোনাভাইরাস শুরুর দিকে মাস্কের সংকট হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি হয়েছে। এরপর ভাইরাসের প্রকোপ কমে এলে তা রাস্তার মোড়ে, পাবলিক বাসে, অলিগলিতে কম মূল্যে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় আবারো মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ সকল জিনিসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে এসব পণ্যের।

রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ মাস্ক বিক্রেতা নুর হোসেন বলেন, ‘আগে আমি পাতলা (সার্জিক্যাল) মাস্ক ৫টা ১০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন সেটা ৩টা ১০ টাকায় বিক্রি করছি। এন-৯৫ মাস্ক ৩০ টাকায় বিক্রি করলেও সেটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। কাপড়ের মাস্ক ৩০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী কিনতে আসা একাধিক ক্রেতা বলেন, করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে কেউ বাণিজ্য করছে। এটি বন্ধে সরকারের কড়া নজরদারির দাবি জানান তারা।

ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিষা রানী কর্মকার বলেন, ‘লকডাউনকে কেন্দ্র করে অনেকেই মাস্ক পরিধান করছেন। তবে বেশ কয়েকজনকে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে উদাসীন থাকতে দেখা গেছে। কথা বলে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টি তাদের মধ্যে জাগ্রত করার চেষ্টা করছি। তাদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আমরা সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতাবোধ জাগাতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা জেলা প্রশাসনের ১০টি মনিটরিং টিম রাজধানীজুড়ে অভিযান পরিচালনা করছে। প্রথম প্রথম অনেককেই সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো কাজ ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জনগণ সচেতন হলে এবং মাস্ক ব্যবহার করলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘খোলা জায়গায় বাজার বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads