বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

ফিরে দেখা - ২০১৯

আলোচনায় ছিল পরিশুদ্ধির ‘ক্যাসিনো অভিযান’


দিন যায়, মাস আসে, মাস ঘুরে আসে নতুন বছর। একেকটি বছর একেকভাবে আলোচিত হয়ে থাকে। কয়েক দিন পর শেষ হবে ২০১৯ সাল। ঘটনাবহুল বছরটির শেষ সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আলোচনায় ছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান তথা শুদ্ধি অভিযান। সংগঠনের পরিশুদ্ধির জন্য সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনের প্রতাপ ও প্রভাবশালী নেতাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অভিযানটি শুরু থেকেই পেয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন, জনমনে সৃষ্টি করে আস্থা।

মূলত যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের চাঁদাবাজিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কিছু কাজ নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

পরে বছরের মাঝামাঝি সময়ে ‘শুদ্ধি অভিযানের’ ঘোষণা দেয় সরকার। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিভিন্ন খাতের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও অবৈধ অর্থের বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা।

তবে আলোচিত ক্যাসিনো অভিযানের নামে দৃশ্যমান এ বিশেষ অভিযানে সরাসরি দায়িত্ব পালন করে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।

সংস্থাটি ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযানে নামে গত ১৮ সেপ্টেম্বর। রাজধানীতে চালানো ওই অভিযানকে সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের প্রতাপশালী সভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত ১০ জনকে। নগদ প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকাসহ জব্দ করা হয় প্রায় ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর।

র্যাব সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১১টি ক্যাসিনো ও ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এর মধ্যে রাজধানীতে আটটি এবং চট্টগ্রামে তিনটি। এসব ক্লাব থেকে উদ্ধারকৃত ক্যাসিনো সামগ্রীর দাম প্রায় কয়েক কোটি টাকা। আর সব মিলিয়ে ক্যাসিনোকেন্দ্রিক ক্লাব, বাসস্থান ও অফিসসহ অন্তত ২১টি অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযান পরিচালিত ক্লাবগুলো হলো- ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ, ধানমন্ডি ক্লাব, ফু-ওয়াং ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র এবং চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব ও আবাহনী ক্লাব।

এ অভিযানে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ জনকে। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাসিনোতে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২০১ জনকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ পর্যন্ত র্যাব দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় নয় কোটি টাকা জব্দ করেছে। উদ্ধার করা হয় ১৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর, ১৩২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক। ৭.২০ ভরি অলংকার (৮ কেজি) জব্দ করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য চার কোটি টাকা। এছাড়া বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার এবং অবৈধ অস্ত্র হিসেবে মোট ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে বাহিনীটি।

অভিযান শুরুর দিন ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে ফকিরেরপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। ওইদিন রাতেই একে একে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ক্যাসিনোর সন্ধান পায়। একই দিন রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

২০ সেপ্টেম্বর আরেক যুবলীগ নেতা ‘টেন্ডারবাজ’ খ্যাত জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তার অফিস থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করা হয়। একই দিন রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ও ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়, গ্রেপ্তার করা হয় কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি ও কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে।

২৬ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর মণিপুরি পাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয় বিসিবির পরিচালক ও মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে। ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় থাইল্যান্ডগামী এক বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয় অনলাইন ক্যাসিনোর জনক সেলিম প্রধানকে।

৬ অক্টোবর সবচেয়ে আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী এমরানুল হক আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীতে তার অফিস ও কয়েকটি বাসায় অভিযান চালানো হয়।

১১ অক্টোবর ভোরে শ্রীমঙ্গলের কলেজ গেট এলাকার এক বান্ধবীর বাসা থেকে অবৈধ পিস্তল-গুলি ও দুই লাখ টাকাসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তার বাসা ও কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের ৭ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার চেক ও এফডিআর জব্দ করা হয়।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর আত্মগোপনে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। সবশেষে গত ১৯ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর টিকাটুলীর নিজ কার্যালয় থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন এবং সেসব অর্থ আমেরিকায় বসবাসরত পরিবারের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন।

এদিকে, র্যাবের এই অভিযানের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের বিভিন্ন অভিযানের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত অভিযান ছিল গত ২৭ অক্টোবর বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অভিযান। গুলশান-২ নম্বরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোসামগ্রী এবং বিপুল পরিমাণ মদ, সিসা ও সিসা উপকরণ এবং বিয়ার জব্দ করা হয়।

সার্বিক অভিযান প্রসঙ্গে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘আমরা ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করেছিলাম, এ অভিযানের ফলে সারা দেশের কোথাও এখন ক্যাসিনো নেই। এর সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে, সংশ্লিষ্ট অনেক হর্তাকর্তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছিলাম, সে ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল। ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। ভবিষ্যতে আরো কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১