• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ক্রাফের মহাসচিব কাজী মিনহার মহসিন

ফাইল ছবি

মতামত

সাইবার অপরাধ দমন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে ক্রাফ

  • এম. রেজাউল করিম
  • প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০১৮

সাইবার নিরাপত্তা দিয়ে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং মানুষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সাইবার সচেতনতা ও অপরাধ দমনের মেলবন্ধন তৈরি করতে কাজ করছে ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশন বা ক্রাফ। বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে আলাপকালে ক্রাফের বিভিন্ন উইংয়ের কার্যক্রম, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ক্রাফের মহাসচিব কাজী মিনহার মহসিন। 

ক্রাফের যাত্রার পেছনের গল্প নিয়ে মিনহার বলেন, আমরা ক্রাফ শুরু করেছিলাম প্রাথমিকভাবে অনলাইন জগতে টেকনিক্যাল এক্সপার্টিজ দিয়ে জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য, যেখানে সাইবার ক্রাইমের পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে গবেষণা করে ভিকটিম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা হবে। অপরাধ বিষয়ক গবেষণার পাশাপাশি সাইবার অপরাধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আইনগত এবং মানসিকভাবে সহযোগিতা করা ও ডিজিটাল ফরেনসিক কার্যক্রম পরিচালনা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এছাড়া আমরা ইতোমধ্যে কিছু গবেষণা করে দেখেছি, তথ্যচুরি সংক্রান্ত মামলায় আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন অনেক ভালো কাজ করছে। তবে আইনি কিছু জটিলতায় কয়েকটি ধারা মোতাবেক কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, বাদী-বিবাদীর বক্তব্যে অমিল ও ডিজিটাল আলামত না থাকায় এখানে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফল হতে পারছে না। ডিজিটাল ফরেনসিকের (ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত) অভাবে এসব অপরাধের মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেইসব অপরাধীকে খুঁজে বের করা, অপরাধ নিয়ে গবেষণা করা এবং অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে ক্রাফ।

ভিকটিম সাপোর্ট ছাড়াও ক্রাফ সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা তৈরি করা, এই সম্পর্কে ট্রেনিং দেওয়া, সমসাময়িক এবং আগত বিষয়াদির ওপর গবেষণা করে, সামাজিক মাধ্যমে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রতি লক্ষ রেখে সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়া ক্রাফ একই সঙ্গে পথশিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়েও কাজ করে।

এদিকে সময় ও পরিস্থিতির তাগিদে অনলাইন সেবার পাশাপাশি অফলাইনেও আমাদের কাজের পরিধি বেড়েছে বলে যোগ করেন ক্রাফ মহাসচিব। তাই অনলাইন বা অফলাইন কোথাও যেন কাজের সমন্বয়হীনতা না হয় সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা ১১টি উইং তৈরি করেছি। এই ১১টি উইং তাদের গণ্ডির ভেতর থেকে সর্বোচ্চ কাজটুকু করার চেষ্টা করছে।

উইংগুলোর কার্যপরিধির বিস্তারিত তুলে ধরে মিনহার বলেন, আমাদের উইংগুলোর মধ্যে সবার আগে যেটির পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, তা হচ্ছে শি-টিম। দেশে নারীদের একটা বড় অংশ ঘরে-বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়রানি, ইভটিজিং এবং ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হচ্ছে। ক্রাফ সদস্যরা এসব ক্ষেত্রে নারীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন। ক্রাফ প্রেসিডেন্ট জেনিফার আলমের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ভুক্তভোগী নারীদের সব ধরনের কাউন্সেলিং এবং আইনি পরামর্শ দিচ্ছে ক্রাফ। এছাড়া আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দিতে একশ’র বেশি আইনজীবী নিয়ে গঠন করা হয়েছে ক্রাফের নিজস্ব আইনি পরামর্শদাতাদের প্যানেল, যা আইনি সহায়তা উইং নামে পরিচিত।

সামাজিক মাধ্যমগুলোকে মনিটরিং করে সব ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম নিরীক্ষণ করে সামাজিক মিডিয়ার ক্রিয়াকলাপ এবং অপরাধের ধরন সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করে যাচ্ছে ক্রাফের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং উইং। আর ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স অনুপ্রবেশের কাজ করে যেমন- টেস্টিং, সাইবার ফরেনসিকস, মোবাইল ফরেনসিকস, সিসিটিভি ফুটেজ স্পষ্টীকরণ এবং বিশ্লেষণ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে ডিজিটাল ফরেনসিক উইং। এছাড়া সামাজিক গবেষণা করে সাইবার ক্রাইম নিয়ে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ চ্যানেল ও প্রকাশনার মাধ্যমে অবহিত করে যাচ্ছে আমাদের রিসার্চ উইং।

মিনহার বলেন, আমাদের মাঠপর্যায়ের কিছু নিবেদিত কর্মী আছেন, যারা নিজেদের উৎসর্গ করে ভিকটিমদের সাহায্য করেন এবং তদন্তের সময় নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্যের জন্য কাজ করছেন ভিকটিম সাপোর্ট উইংয়ের সদস্যরা। পাশাপাশি দলীয়ভাবে সব দলের সঙ্গে কাজ করে এবং সবাইকে প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রযুক্তিগত সহায়তা করে থাকে ক্রাফের টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিম।

আমাদের ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্ট টিম আছে, যারা নির্বাচনী শ্রোতাদের সঙ্গে কাজ করে সামাজিক ও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা সংক্রান্ত নির্দেশিকা এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বলেও যোগ করেন তিনি।

আরো কয়েকটি উইং নিয়ে মহাসচিব বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং আত্মহত্যা রোধে ক্রাফ জনসচেতনতা বৃদ্ধি করেই চলেছে, যার জন্য ক্রাফের একটি উইং রয়েছে- ইয়ুথ কাউন্সেলিং উইং, যা নারী ও শিশুর পাশাপাশি এই প্রজন্মের যুবকদের সামাজিক অবস্থা, সাইবার ক্রাইম এবং নৈতিক দায়িত্বগুলো সম্পর্কে সচেতন করে থাকে। এছাড়া হতাশা এবং বিপজ্জনক অবস্থায় কেউ যাতে পথভ্রষ্ট হতে না পারে এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্যও এই প্যানেলে রয়েছেন নিজস্ব মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। এছাড়া আমাদের একটি পাবলিক রিলেশন উইং আছে। যখন কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ ঘটে থাকে, যা সামাজিক অপরাধ অথবা সাইবার অপরাধ, তখন এই উইং যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিপুল জনসচেতনতা সৃষ্টি করে থাকে। আর আমাদের অন্য একটি দল রয়েছে, যারা সামাজিকভাবে বঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে এবং পথশিশুদের জন্য একটি অনুদান প্রচার করে। এই দলটির নামকরণ করা হয়েছে সামাজিক কল্যাণ উইং নামে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মিনহার বলেন, ক্রাফ বিশ্বাস করে ট্রেনিং এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে অনলাইনে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলো ৬০ শতাংশের মতো কমিয়ে আনা সম্ভব। কারণ জনসচেতনতাই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। তাই ক্রাফ সর্বদা যেকোনো মুহূর্তে সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন, অফিস-আদালতে এ নিয়ে প্রচারণা চলবে। শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই অপরাধকে দমন করা সম্ভব, প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে কাজ করে ক্রাফ সমাজের সেবায় সর্বদা নিযুক্ত থাকতে চায় এবং সব ধরনের অন্যায় ও অপরাধ নিবারণে ক্রাফ ন্যায়ের পথে চলবে। আমরা চাই বিশ্ব দরবারে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে অপরাধ প্রতিরোধে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads