• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

বিনিয়োগ এবং ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি

  • ড. সালেহ্উদ্দিন আহমেদ
  • প্রকাশিত ১৪ মার্চ ২০১৮

ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটির সুবিধাটা কী, কেন আমরা এটা করতে চাইছি, তা ভালোভাবে বুঝতে হবে। আমাদের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা এখানে স্পেস পাচ্ছেন না অধিক বিনিয়োগ করার জন্য। তাদের প্রতিষ্ঠান অনেক বড় হয়ে গেছে।

একটি দেশের বিনিয়োগে আর্থিক পদ্ধতিতে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট দুটি প্রধান উপাদান। কারেন্ট অ্যাকাউন্টকে বলা হয় চলতি হিসাব এবং ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্টকে মূলধনি হিসাব। আমাদের দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট কনভার্ট মানে কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেশ থেকে অর্থ বাইরে পাঠাতে পারব। আমাদের দেশে এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকলেও বাইরের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে উন্নত দেশে তা নেই। আমেরিকায় অর্থ অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া যায়, গাড়ি-বাড়ি কেনা যায়, আবার অর্থ নিয়েও আসা যায়। ব্যাংকের কোনো অনুমোদন লাগে না। সেখানে এটা সম্পূর্ণভাবে একক একটি সিস্টেম। আমাদের দেশে দুই রকম সিস্টেম বিদ্যমান। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটিতে আমদানি-রফতানির জন্য এলসি খুলতে হয়। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন। ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টেই (ফেরা) নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে কী কী পাঠাতে পারবে, কোন কোন জায়গায় অর্থ ব্যয় করা যাবে। আমদানি-রফতানি, শিক্ষা খাত, চিকিৎসা, বিশেষ সেবা, সদস্য পদ নেওয়া, ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ের জন্য কারেন্ট অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি প্রযোজ্য। ডলারে বা অন্য কোনো বিদেশি মুদ্রায় কনভার্ট করে টাকা পাঠানো যায়। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে পাঠাতে আমরা অনুমোদন দেই।  

আর ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি হলো, টাকাকে ডলার বা পাউন্ডে কনভার্ট করে বিদেশে বিনিয়োগ করার অনুমোদন দেওয়া অর্থাৎ কাউকে এর অনুমোদন দেওয়ার অর্থ তাকে বিদেশে ব্যবসা খাতে বিনিয়োগ করার অনুমোদন দেওয়া। এ অনুমোদন দেওয়া হয় ব্যয় করার জন্য নয়, ব্যবসা করার জন্য। আমাদের দেশে এখনো ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটির অনুমোদন গণহারে দেওয়া হয়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই এটি নেই। আমাদের দেশে এটি অনুমোদন না দেওয়ার মূল কারণ ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ। আশঙ্কা রয়েছে অনুমোদন দিলে বিদেশে অর্থ পাচার হয়ে যাবে। এমনিতে এত নিয়ন্ত্রণ থাকার পরেও প্রচুর অর্থ বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অনেকে বলতে পারেন, পাচার যেহেতু হচ্ছেই, তাহলে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটির অনুমোদন দেওয়া হোক, তাহলে এ প্রবণতা কমবে। কিন্তু বিষয়টি হলো, এ অর্থ তো ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটির জন্য যায়নি, বেআইনিভাবে গেছে।

ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি করতে চাইলে প্রথমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। বাইরে টাকা পাঠাতে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আর্থিক খাত দুর্বল, তাহলে চলবে না। এমনটা হলে বিপদে পড়তে হবে। দেশ আর্থিক সঙ্কটে পড়বে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, টাকা পাচার হবে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকের নন-পারফর্মিং অ্যাসেট কমাতে হবে। তৃতীয়ত, আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের কত রিজার্ভ দরকার, তার একটি মানদণ্ড তৈরি করতে হবে। এখন আমরা বলছি আমাদের রিজার্ভ অনেক বেশি।  কিন্তু কত বেশি? কোনো সঙ্কট দেখা দিলে যেমন পণ্যের দাম বেড়ে গেল, তেল যদি আরো বেশি দামে কিনতে হয় অথবা খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়, তবে সব রিজার্ভ চলে যেতে পারে। এ ছাড়া অবকাঠামো নির্মাণের জন্যও প্রচুর অর্থের দরকার। এজন্য কিছু নির্দেশক দরকার, যেটা দেখাবে কোনটি কতটুকু প্রয়োজন। এ নির্দেশক দেখে বোঝা যাবে কী পরিমাণ আমদানি-রফতানি হবে, আমাদের ট্যাক্স সার্ভিস লায়াবিলিটি কত হবে ইত্যাদি। মনিটর করতে হবে কোথায় কত টাকা লাগছে। সার্কিট ব্রেকারের মতো একটা ব্রেকার থাকতে হবে সেখানে।

নির্দেশক বলবে আমাদের কত নিট ফরেন অ্যাসেট থাকা প্রয়োজন। মুদ্রার সঙ্গে নিট বৈদেশিক সম্পদের সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যদি সব অর্থ বাইরে পাঠাই, তবে মুদ্রার কী হবে? আমাদের কাছে যথেষ্ট সোনা রয়েছে কিনা তা দেখতে হবে। ভারতে ন্যূনতম নিট বৈদেশিক মুদ্রা ৪০ শতাংশ থাকতে হবে দেশীয় মুদ্রার বিপরীতে। ১০০ শতাংশ থাকতে হবে টু ব্যাকআপ দ্য কারেন্সি। ১০০ টাকা হিসাব করলে আমাদের যেন ৪০ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা থাকে।

ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটির অনুমোদন দিতে চাইলে আমাদের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, আমাদের যথেষ্ট ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ রয়েছে। যেসব উদ্যোক্তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে, যাদের পণ্যের বাজার ভালো, দক্ষতা রয়েছে, তাদের বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তারা বিদেশে কাজপূর্বক মুনাফা করে দেশে অর্থ নিয়ে আসবেন। দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে ৩৩ বিলিয়ন ডলার বসিয়ে রেখে লাভ কী? বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট কমিটি যে বিনিয়োগ করে, তা থেকে অত্যন্ত কম সুদ আসে। বন্ডে যে বিনিয়োগ করা হয়, তার অবস্থাও একই।   

এরই মধ্যে কিছু ফার্মকে কেস বাই কেস ভিত্তিতে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি না এগুলো মুনাফা করে কিনা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, অনুমোদন দেওয়ার আগে কিছু বিষয় ঠিক করতে হয়। যেমন ভারতের প্রসঙ্গ টানি। ভারতে ১৯৯৭ সালে প্রথম ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটির ব্যাপারে কাজ শুরু করে তারাপোর কমিটি। তারাপোর ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর। ১৯৯৭ সালের জুনে তারাপোর প্রথম যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, সেখানে বলা হলো কীভাবে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি করা হবে এবং আর্থিক ফ্রেমওয়ার্ক কী হবে। কমিটি বলেছিল, কাজটা একবারে করা যাবে না। কমিটি তিনটি ফেইজের মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করার কথা বলে- ১৯৯৭-৯৮, ১৯৯৮-৯৯ ও ১৯৯৯-২০০০। এক ফেইজ থেকে আরেক ফেইজে কীভাবে যাওয়া যাবে তার নির্দেশনা দিয়েছিল কমিটি। বাংলাদেশের জন্য একই নির্দেশনা কাজ করতে পারে। নির্দেশনার একটা হলো, জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের বাজেট ঘাটতি তখনো ৫ শতাংশের বেশি। ভারতে সে সময় (১৯৯৭-৯৮) বাজেট ঘাটতি ছিল সাড়ে ৪ শতাংশ। তারাপোর কমিটি এটা কমিয়ে সাড়ে ৩ শতাংশ (১৯৯৯-২০০০) করার কথা বলেছিল। মূল্যস্ফীতির হার কমাতে নির্দেশ দিয়েছিল। ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট (ফেরা) সম্পাদনা করে তারা ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (ফেমা) করে। এ কনটেক্সটে যদি বাংলাদেশকে আমরা দেখি তবে বলব, এ ধরনের কমিটি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। ভারতে কমিটি করেছিল রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া              (আরবিআই)।

ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি করতে চাইলে মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। রিয়েল এফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট (আরইইআর) কত হচ্ছে, তা মনিটর করতে হবে। মূল্যস্ফীতির প্রভাব আরইইআরে কত পড়ছে, তা দেখতে হবে। সুদহার কত হচ্ছে, তা মুদ্রানীতিতে আসতে হবে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি করা হলে বাইরে থেকে যে অর্থ আসবে, তা নিট স্থানীয় সম্পদ হয়ে যাবে। এটা দিয়ে কী করা হবে তা ঠিক করতে হবে। এর একটি উদাহরণ রেমিট্যান্স। আমাদের ডেবট লায়াবিলিটির দিকে নজর দিতে হবে। ঋণের বোঝা বাড়লে আমরা কী করে সামাল দেব? লোকজনকে বাইরে টাকা নিতে দেওয়া হলো কিন্তু বাইরে থেকে অর্থ না এলে মিসম্যাচ হয়ে যাবে। দুই রকম মিসম্যাচ হবে। একটা হলো ম্যাচুরিটি মিসম্যাচ, আরেকটি অ্যামাউন্ট মিসম্যাচ। ম্যাচুরিটি মিসম্যাচ মানে আমরা একটা পরিমাণ অর্থ পাঠালাম নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এবং প্রত্যাশা করলাম এ থেকে এই পরিমাণ মুনাফা আসবে। কিন্তু এটা যদি সময়মতো পূরণ না হয়। অ্যামাউন্ট মিসম্যাচ হলো, আমাদের এখান থেকে যত অর্থ গেল তত আসছে কি না কিংবা আমাদের যা দরকার, তা পূরণ হচ্ছে কিনা। আমাদের যদি মনিটরিং দুর্বল হয়, ডাটাবেজ দুর্বল হয়, তাহলে কত টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, কোথাও সমস্যা রয়েছে কিনা, তা ধরতে পারব না। আমাদের এটি নিশ্চিত করতে হবে। এসব নজরদারির জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে, তা আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।

যারা বাইরে অর্থ নিয়ে যাবেন, তারা যদি ডিফল্ট করেন তবে তারা আবার তো ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যাবেন। তাই বিষয়টিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে দেখতে হবে। একটা কমিটি করে দিলাম, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হলো- বিষয়টা এমন নয়। কমিটি গঠন করতে হবে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে, যাদের মধ্যে থাকবেন স্থানীয় বাজার বিশেষজ্ঞ, আর্থিক বাজার বিশেষজ্ঞ ও বৈদেশিক বাজার বিশেষজ্ঞ। এ কমিটির তত্ত্বাবধানে থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কমিটিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না। ওপরের কমিটিগুলোয় থাকতে পারে। এ নিয়ে তাড়াহুড়া করা যাবে না। এখনো পুরোপুরি অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি অনুমোদন করেনি। তারা ফেইজ বাই ফেইজ এগোচ্ছে। রাজস্ব ঘাটতি, বাজেট ঘাটতি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার দিকে ভালোভাবে নজর দিতে হবে। কারণ এগুলোর সঙ্গে রাজস্ব আয় জড়িত। আমাদের এখানে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে।  

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ সুবিধার আওতায় এমন জায়গায় বিনিয়োগ করা হবে, যেখান থেকে অর্থ অফশোর অ্যাকাউন্টে চলে যাবে, দেশে আসবে না। এটা চালু হলে আর্থিক ব্যবস্থায় ঝুঁকি বেড়ে যাবে। অর্থ পাচার বাড়তে পারে। এ ছাড়া এটি চালু হলে গুটিকয়েক কোম্পানি, ব্যাংক ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে- এমন ব্যক্তিরা সুবিধা পাবেন। কমিটি যে কাজগুলো করবে- তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংসদ ও স্ট্যান্ডিং কমিটিতে অনুমোদন করাতে হবে।

কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে এটা করা ঠিক হবে না। স্টেকহোল্ডার যেমন- ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদদের মতামত নিয়ে সর্বশেষ এটিকে যেতে হবে সংসদে। এভাবে এগোনো ছাড়া এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। ১৯৯৭ থেকে শুরু করার পরও ভারত এখনো পুরোপুরিভাবে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি করেনি। এ ছাড়া এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন নিয়ে এখনো ঝামেলা চলছে। সিআইবি থাকার পরও বিশাল অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এগুলো ঠিক না করে ব্যবসায়ীরা বাইরে যাবেন, সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করে দেশে নিয়ে আসবেন- এমনটা চিন্তা করা হবে ভুল।

কিন্তু ব্যবসায়ীদের উচিত শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের মান বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া, তাহলে তারা আরো বেশি রফতানি করতে পারবেন। শুধু তৈরি পোশাক শিল্পকে কেন ধরা হচ্ছে, অন্যান্য পণ্য রফতানি করা হচ্ছে না কেন? কারণ এদের পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

কিছু খাতে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি সুবিধা কেস বাই কেস ভিত্তিতে দেওয়াটাই শ্রেয়। ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটির জন্য ফরেন এক্সচেঞ্জ আইনটি সংস্কার করতে হবে। এখন যেটা করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। তবে আইনটি সংশোধন করার আগে বিশেষ কয়েকজনকে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটির সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। তবে দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের ট্র্যাক রেকর্ড, ডমিস্টিক পারফরম্যানস কী রকম, ডমিস্টিক ক্রেডিবিলিটি কতটুকু, ব্যাড লোন স্ট্যাটাস কী, এমপ্লয়মেন্ট রেকর্ড কী, সিএসআর অ্যাক্টিভিটি কি তা দেখতে হবে। আবার অনুমোদন দেওয়ার পর এরা কোন দেশে গেছে, সেখানে কীভাবে ও কোথায় বিনিয়োগ করছে, রিটার্নটা কী রকম, রেট অব রিটার্ন কী- এগুলো মনিটর করতে হবে। যদি এমন হয় যে তারা বলল, সব ব্যয় হয়ে গেছে, কোনো মুনাফা নেই- এমন বিষয়গুলো দেখার জন্য দক্ষ লোক লাগবে। অর্থাৎ এগুলো আগে থেকে ঠিক না করে ঢালাওভাবে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি করা ঠিক হবে না, বরং কিছু কোম্পানিকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে এবং বিভিন্ন গাইডলাইন অনুযায়ী তা করতে হবে।

মূলধন বাড়লেই কর্মসংস্থান বাড়ে না। আমাদের শ্রমিকদের স্বল্পসময়ের মধ্যে দক্ষ করে বাইরে পাঠানো কি সম্ভব? এটা কি এত সহজ? প্রথমে তাদের দক্ষ করে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত, যেখানে যাবে সেখানে কি সহজে তারা কাজ করার অনুমতি পাবেন? দেশে কর্মক্ষমদের বড় অংশের কর্মসংস্থান করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বাইরে যে অর্থ নিয়ে যাবেন, তা আমাদের প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে কী অবদান রাখবে?

বাইরের দেশের কোম্পানিগুলো কি করে? তারা অন্য দেশে কারখানা স্থাপন করে, যেখানে শ্রম ও উৎপাদন ব্যয় কম। আমরা কিন্তু নিজ দেশেই এ সুবিধা পাচ্ছি। সরকারি সহযোগিতা কম মনে হলে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা বাইরে গেলে আরো মুনাফা আনতে পারবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মুনাফা এনে কোথায় বিনিয়োগ করবেন? আগে নিজ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে, স্থানীয় বাজার বড় করতে হবে। আমাদের শ্রমিক উৎপাদনশীলতা অনেক কম। এটি বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। শ্রম পরিবেশ কেন উন্নতি করা হচ্ছে না? এভাবে প্রতিযোগিতা করা যাবে না। বিষয়টা এমন নয়, আমরা শুধু বৈদেশিক মুদ্রা আয় করব আর চাল-ডাল সব বাইরে থেকে নিয়ে আসব। এটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবিলিটি চালুর আগে আমাদের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বাজার শক্তিশালী করতে হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে, ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

 

ড. সালেহ্উদ্দিন আহমেদ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং অধ্যাপক, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads