• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

বিএনপির লোগো

রাজনীতি

২০-দলীয় জোটে তিন উপধারা

দাবিদাওয়া নিয়ে বিএনপির ওপর চাপ

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০১৮

খালেদা জিয়ার জেল, নেতাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা এবং যখন তখন গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি রাজনীতির মাঠে এমনিতেই কোণঠাসা। এমন এক পরিস্থিতিতে দলটির অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে ২০-দলীয় জোটের শরিকরাও বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভোটের মুখে আসন বণ্টনের ফয়সালা এবং জোটে যথাযথ মূল্যায়ন ও সম্মানজনক অবস্থানের দাবিতে দলগুলো বিএনপির ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। এসব দাবিদাওয়াকে কেন্দ্র করে জোটটিতে সৃষ্টি হয়েছে অনানুষ্ঠানিক তিনটি ধারা। এই তিন উপজোটের প্রত্যেকটিতে শরিক সংখ্যা ৫ থেকে ৮টি করে। এই তিন ধারার নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)।

জোট রাজনীতির সর্বশেষ এ টানাপড়েন বিষয়ে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভূঁইয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘দেখুন এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন একটা হবে। বিএনপি তো ৩০০ আসনে ৯০০ প্রার্থীর তালিকা করে বসে আছে। তাহলে আমার দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকাটা করা যাবে না কেন? মাঠে নামা যাবে না কেন?’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি যে সিদ্ধান্ত নেয়, তাতে আমরা দ্বিমত করি না, কিন্তু প্রচার-প্রকাশের আগে শরিকদের নিয়ে একটা সভা তো করা যায়। তাতে অন্তত আমাদের মান-মর্যাদাটা থাকে। কিন্তু বরাবরই দেখা যায় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়ার পর বিএনপি তাতে সমর্থন চায়।’

এরই মধ্যে উপজোটের জানান দিয়েছে এলডিপি-ঘেঁষা শরিকরা। আসন ভাগাভাগি ও সম্ভাব্য শরিক নিয়ে প্রধান শরিক বিএনপিকে তারা আল্টিমেটামও দিয়েছে। ‘ব্যাটে-বলে’ না মিললে চূড়ান্ত পরিণতির ইঙ্গিতও এসেছে তাদের পক্ষ থেকে।

উপজোট নিয়ে এখনো মুখ খোলেনি জামায়াতে ইসলামীর অনুগতরা। তবে তারা নীরবে ঘর গোছাচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

অবশ্য এসব তথ্য স্বীকার করেননি ২০-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘জোটের সর্বশেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এখন আমরা আন্দোলনে আছি। জোট নেত্রীর মুক্তি আমাদের প্রথম লক্ষ্য। দাবি মতো নির্বাচনের পরিবেশ পেলে অবশ্যই আমরা তাতে অংশ নেব। তখন আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সামনে আসতে পারে। এখন নয়। যদি এ বিষয়ে কেউ কিছু বলে থাকেন, তাহলে সেটা তার বা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত।’

২০ বছর আগে চার মিত্র নিয়ে বিএনপি গঠন করেছিল রাজনৈতিক জোট। ইস্যু ছিল আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন। রাষ্ট্রক্ষমতার স্বাদও পেয়েছে এ জোট। এক মত ও পথে চলায় চারদলীয় জোটে পরে যোগ হয়েছে আরো ১৬ দল। তবে দীর্ঘদিনের চাওয়া-পাওয়া, মূল্যায়ন-বঞ্চনাসহ আদর্শের মিল-অমিলের বিচার-বিশ্লেষণের ফলে বিএনপির এই ঘোর বিপদের মধ্যে জোটে বিরোধ দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

একটি উপজোটে এলডিপিকে প্রধান হিসেবে মেনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ৫টি দল। দলগুলো হলো মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, অ্যাডভোকেট জেবেল রহমান গানির বাংলাদেশ ন্যাপ, খোন্দকার গোলাম মোর্তাজার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি) ও এএইচএম কামরুজ্জামান খানের বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)।

নিবন্ধনহীন (বিচারাধীন) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে আছে খণ্ডিতসহ ৬টি দল। বাংলাদেশ লেবার পার্টির দুই অংশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাপ-ভাসানী, ইসলামিক পার্টি ও কমরেড সাঈদ আহম্মেদের সাম্যবাদী দল (একাংশ)। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অতীতে জামায়াতের সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। এখনো বিভিন্ন সভা-মঞ্চে জামায়াতের আদর্শের কথা বেরিয়ে আসে এসব দলের নেতাদের মুখ থেকে।

বাকি ৮টি রাজনৈতিক দল আছে বিএনপির সঙ্গে। এর মধ্যে রয়েছে মওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের খেলাফত মজলিশ, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ’র বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি (একাংশ), ডেমোক্র্যাটিক লীগ (ডিএল), জাতীয় পার্টি (জাফর), মাওলানা নুর হোসেন কাছেমি ও মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর দুই অংশ এবং অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজের বাংলাদেশ পিপলস লীগ।

ডিএল-এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহম্মদ মনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ভাই জোটে এমন অনেক নেতাই আছেন যারা অতীতে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ১০০ ভোট পেয়েছেন। তারাই এখন নিজেদের অনেক বড় নেতা ভাবেন। আমার কথা হলো নেত্রী জেলে, আগে তার মুক্তি চাই। অবশ্যই নির্বাচনে যাব, তবে খালেদা জিয়াকে নিয়েই। বিএনপির তরফ থেকে অনেকবার বলা হয়েছে নির্বাচনের সময় সবার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে।’

২০-দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জোটগতভাবে প্রার্থী তালিকা পরে চাওয়া হবে বলে জানানো হলেও তারা নিজ নিজ ঘর গোছাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads