• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : পিআইডি

রাজনীতি

বিএনপির হাবভাব বুঝে আ.লীগের আসন রফা

# ১৬০ থেকে ১৬৫টি আসনে ১৪ দল জোটগতভাবে # জাতীয় পার্টিসহ অন্যদের জন্য থাকবে ১৩৫ থেকে ১৪০ আসন # দর-কষাকষিতে কঠোর হবে শরিকরা # শিগগির অনুষ্ঠিত হবে বৈঠক

  • দীপক দেব
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির হাবভাব বুঝে নিয়ে জোটের মধ্যে আসন রফা করতে চায় আওয়ামী লীগ। মূলত এ কারণেই বিষয়টি এখনো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিএনপি আসলে জোটগতভাবে আর না এলে পৃথকভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। তবে জোট শরিকরা আসন বণ্টনের কাজটি আগেই সেরে রাখতে চায়। এ উদ্দেশ্যে শিগগিরই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শরিক দলের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের একাধিক নেতা বাংলাদেশের খবরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, বিএনপি আসবে এমনটা ধরে নিয়েই ১৬০ থেকে ১৬৫টি আসন ১৪ দলের মধ্যে বণ্টনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে চিন্তা করে রাখা আছে। বাকি আসনগুলোর মধ্যে কিছুটা জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং অন্যগুলো ওপেন রাখা হবে সবার জন্য। ওপেন আসনগুলো ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির বাইরের কিছু দলকে দেওয়া হতে পারে। তবে, এর জন্য আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে। শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে শিগগিরই আওয়ামী লীগের একটি উচ্চপর্যায়ের টিমের সঙ্গে আলোচনা হবে। মোহাম্মদ নাসিমসহ দলটির প্রেসিডিয়াম ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা এ বৈঠকে থাকতে পারেন। এখানে আসন নিয়ে দর-কষাকষির পর জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদাভাবে শরিক দলগুলোর বৈঠক হবে। এ জন্যই এইচএম এরশাদ ৭০টি আসনের কথা আগেভাগেই বলে রেখেছেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কে কত আসন পাবে, সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। এসব বিষয় প্রকাশ্যে না বলাই ভালো। জোটের শরিক বলে ইচ্ছামতো আসন চাইবে, এটা হতে পারে না। আওয়ামী লীগসহ জোটের সবার ক্ষেত্রে জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট হবে কি না, সেটি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।

শরিক দলের এক নেতা ও এমপি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে- এমনটা ধরে নিয়েই আপাতত নিজেদের মধ্যে একটা সমঝোতা করা হবে। আর তারা না এলে সে ক্ষেত্রে কৌশল বদলাবে। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপির একটি অংশ যদি নির্বাচনে আসতে চায়, তাহলে তাদেরও কিছু আসন ছেড়ে দিতে হবে। বিএনপি আসলে ২০০৮ সালের মতো করে জোটগতভাবে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করার কথা ভাবা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জোটের পরিধি না বাড়লেও জাতীয় পার্টিসহ বেশ কিছু ছোট দলকে এ নির্বাচনী জোটে দেখা যেতে পারে। তাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে শাসক দলের হাইকমান্ড। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে, সে ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, প্রগতিশীল বাম ঘরানার দলগুলোসহ ২০ দলের শরিকদের দলীয় ও জোটগতভাবে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করা হবে আসনভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে। এ জন্যই ১৪ দলের আসন ভাগাভাগিতে সময় লাগছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা সব সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়েই আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা করছি। বিএনপি অংশ নিলে কী হবে, আর না এলে কী হতে পারে- এর সবকিছুই বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। তবে, আমি মনে করি বিএনপি এবার আর নির্বাচন বর্জনের মতো ভুল করবে না। এবার তারা নির্বাচন না করলে দল ধরে রাখতে পারবে না।

জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বর্তমান সংসদে আমাদের সাতজন এমপি আছেন। তবে এবার আমরা ১৫টি আসন টার্গেট করেছি। আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।

এবার জাসদ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন মূল জাসদে তিনজন ও আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদে দুজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। অন্য এক সংসদ সদস্য দল ভাঙার পর এখনো তার অবস্থান স্পষ্ট করেননি। দুই পক্ষের সঙ্গেই তার যোগাযোগ রয়েছে।

শরিফ নরুল আম্বিয়া বলেন, আমাদের প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখনো এসব নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। সময় হলে সব চূড়ান্ত করা হবে। অন্যদিকে জাসদের পক্ষ থেকে এখনো প্রার্থী বাছাই করা হয়নি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপি কী করে সেটা দেখেই আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা ভাবা হচ্ছে। আমাদের নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি এমপি বলেন, আমরা যে তালিকা জমা দিয়েছি, তার মধ্যে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জনের জেতার সামর্থ্য আছে। তবে, নির্বাচনের এখনো দেরি আছে। আর বিএনপি আসবে কী আসবে না তার ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু।

চলতি সংসদে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) দুজন সদস্য রয়েছেন। জেপি মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ২৫টির মতো আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রাখছি। তবে, আসন বণ্টনের পর সবকিছু ঠিক করা হবে।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় সভাপতি। এখন শরিকদের নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকরা ৬০টি আসন চেয়েছিল। পেয়েছিল ১৮টি। এবার ১০০ আসনের প্রস্তুতি নিলেও তাদের কয়টি দেওয়া হবে তা জানার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

তবে, আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে এবার কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে জানিয়ে শরিক দলের এক এমপি বলেন, এত দিন সুবোধ বালাকের মতো চলেছি। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে ১৪-দলীয় জোট করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আমরাও যে দর-কষাকষি করতে পারি সেটা এবার বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads