• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন উদ্বোধন

সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০১৮

নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্যাক্রিফাইস করাটা শিখতে হবে। স্যাক্রিফাইস না করলে কিন্তু কিছু অর্জন করা যায় না। অর্জন তখনই করতে পারবে যখন কিছু দিতে পারবে।’ একই সঙ্গে এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের বয়সসীমা এক বছর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বয়সসীমা ২৮ বছর করা হলো।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিকাল ৪টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে পৌঁছে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) সাবজেক্ট কমিটি বসবে। সেখানে ইতোমধ্যে কারা কারা নেতৃত্বে আসবে দরখাস্ত করেছে। আমি চাই সমঝোতার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের নেতৃত্ব নিয়ে আস। তোমরা নিজেরা বসে সমঝোতার মাধ্যমে কর, সেটাই আমরা চাই।’

নতুন নেতৃত্বের বয়স প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের বয়স আমরা ২৭ বছর করে দিয়েছিলাম। দুই বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ ৯ মাস বেশি হয়ে গেছে। আমি চাই না এই ৯ মাস বেশি হয়েছে বলে কেউ বঞ্চিত হোক। কাজেই এটাকে আমরা ১ বছর গ্রেস দিতে পারি। কাজেই ২৮ বছরের মধ্যে আছে যারা তারাই হবে। কারণ, এখন কোনো সেশনজট নেই। ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যেই কিন্তু মাস্টার্স ডিগ্রি পাস হয়ে যায়। দরকার হলে ডবল মাস্টার্স করা যায়। এরপরও বয়স থাকে।’

প্রসঙ্গত, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ বয়স ২৭ বছর হলেও সময়মতো কাউন্সিল না হওয়ায় গত দুটি কমিটিতে দুই বছর করে বাড়িয়ে ২৯ বছর করা হয়েছিল। এবার দুই বছরের পরিবর্তে এক বছর বাড়িয়ে ২৮ বছর করা হলো।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস না করার জন্য হুশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ সন্ত্রাস করলে সে যে দলের হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকিদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝে দেখি শিক্ষকরাও একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে জড়ান। কিন্তু আপনারা এসব করলে ছাত্ররা কার কাছ থেকে শিখবে? মনে রাখতে হবে কেউ কোনো কিছু নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে সেটি বরদাশত করা হবে না। যে এসব কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা এমন নেতৃত্ব খুঁজবে যারা সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে তোমাদের এই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারে, যাতে আগামী দিনে তোমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পার জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে।’

নেতাকর্মীদের আদর্শের রাজনীতি করার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, আদর্শহীন রাজনীতি নয়, এই রাজনীতি করে মানুষকে কিছু দেওয়া যায় না। দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম ও অর্জনে ছাত্রলীগের ভূমিকা রয়েছে। আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেলে অবশ্যই তাতে দেশের মানুষের কল্যাণ হবে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।

শিক্ষার প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, ছাত্ররাজনীতি আমরা করব। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং সবার আগের কাজ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটি পড়ার পরামর্শ দেন এবং দেশকে ভালোবাসার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলেন।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সকল ছাত্র-ছাত্রীকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। কেউ ধরা পড়লে তাকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলে দিয়েছি এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলন শেষ হওয়ার পর যোগ্যতার ভিত্তিতে পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও মেধা বিবেচনায় নিয়ে সিলেকশন পদ্ধতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ তিন ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিও একই নিয়মে ও একসঙ্গে হবে।

এর আগে ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই। সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসাইন। দুই বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর প্রধানমন্ত্রীসহ দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকদের নির্দেশে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পরবর্তী জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেই দফায় সম্মেলন স্থগিত করা হয়। পরে ৩১ মার্চ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রমজানের আগেই ছাত্রলীগের সম্মেলন করার নির্দেশ দিলে ১১ ও ১২ মে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ৫ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পাশাপাশি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, নির্বাচন কমিশন ও ১৫টি উপকমিটি গঠন করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads