• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
তৃতীয় ধারা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে!

ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের মধ্যে

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

বি. চৌধুরী-ড. কামালের আদর্শিক দ্বন্দ্ব

তৃতীয় ধারা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে!

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৪ জুলাই ২০১৮

অঙ্কুরেই বিনষ্টের পথে যুক্তফ্রন্ট নামের তৃতীয় রাজনৈতিক ধারার উদ্যোগ। কাগজে ও মঞ্চে দৃশ্যত এক হলেও মনস্তাত্ত্বিক ও আদর্শিক দ্বন্দ্ব চলছে দুই উদ্যোক্তা ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের মধ্যে। এ কারণে সাত মাসেও ফ্রন্টের নীতিমালা আলোর মুখ দেখেনি। জোটে যোগ হয়নি আর কোনো দলও। এ ছাড়া সরকারের নজরদারিতে আছে এ শক্তির নেতাদের গতিবিধি। ফলে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন নিয়ে ফ্রন্ট নেতারাই বিভ্রান্ত। এ তথ্য ফ্রন্টের একাধিক নেতা-সদস্যের।

তবে এ বিষয়ে যুক্তফ্রন্টের সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নীতিমালা প্রকাশ করা হয়নি, সামনে হবে। যুক্তফ্রন্টের আদর্শের ব্যানারে আরো বড় ঐক্য গড়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। অন্যদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে দ্বিতীয় দফায় গত ৪ ডিসেম্বর গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। এর প্রধান করা হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। তার দল বিকল্পধারা ছাড়াও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ- এ চার দল নিয়ে জোটটি গঠিত হয়েছে।

গঠনের দিন নতুন ফ্রন্টের নীতি ও ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। জোটের গঠন কাঠামো ও কার্যপদ্ধতি পরে ঠিক করা হবে বলে তখন জানানো হয়। ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় এটি হবে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ মঞ্চ, যা অন্য দুই শক্তি জোট-মহাজোটকে ভারসাম্যের মধ্যে রাখতে পারবে। দুর্নীতিমুক্ত সৎ নেতৃত্ব উপহার দেওয়া হবে।

এর পরদিনই এই জোটকে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সমন্বয়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও স্বাগত জানান।

ফ্রন্টের একাধিক নেতা বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন, আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটার পর কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসায়। তাতে ফ্রন্টের নীতিমালা চূড়ান্তকরণ এবং নতুন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক সংগঠনকে জোটভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু সে প্রক্রিয়া আটকে আছে।

ফ্রন্টের প্রধান ব্যক্তি নির্বাচনের সময় থেকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামালকে ফ্রন্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তার অনুসারীরা। অপর অংশ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে। শেষ পর্যন্ত বি. চৌধুরীকে সভাপতি ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সদস্যসচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। ফলে শুরুতে সম্পৃক্ত থাকলেও ফ্রন্টের তালিকায় নাম লেখাননি ড. কামাল।

এ প্রসঙ্গে আবদুল মালেক রতন বলেন, বি. চৌধুরী ছিলেন দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি। তাকে ফ্রন্টের প্রধান করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত। কামাল সাহেব প্রথমে একসঙ্গে কাজ করতে চাইলেও পরে তিনি সরে যান। তবে যুগপৎভাবে আমাদের সঙ্গে তিনি আছেন।

একই সূত্রের দাবি- কয়েক দফায় বৈঠক এবং শর্ত সাপেক্ষে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে যুগপৎ কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন ড. কামাল। তার শর্ত ছিল- এই তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগের ১৪ দল বা মহাজোট, বিএনপির ২০-দলীয় জোট অথবা নবগঠিত অন্য কোনো জোটের সঙ্গে একাকার হবে না। মৌখিকভাবে এ শর্ত মেনে নেন বি. চৌধুরীরা। ড. কামালও ফ্রন্টের সঙ্গে এক কাতারে কাজ করতে লিখিত দেন।

ফ্রন্টের একাধিক নেতা আরো জানান, গত কয়েকটি এবং বিরাজমান রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে ফের দুই শীর্ষ নেতার সমর্থকদের মধ্যে হিসেবের গরমিল হচ্ছে। বি. চৌধুরী, আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যে বক্তব্য ও বিবৃতি দিচ্ছেন কামাল অনুসারীদের মতে এটা ২০-দলীয় জোটের দিকে হেলে যাওয়ার নামান্তর। ড. কামাল এতে রাজি নন। তিনি প্রথমে অদৃশ্যভাবে হলেও কোনো জোটে যেতে আগ্রহী নন। যদি যেতেই হয়, সেটা হবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তবে এ আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ের। দুই জোটের বাইরে তৃতীয় শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলেও আখেরে তা ঠিক থাকবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহের বীজ এখন অঙ্কুরিত হচ্ছে।

জোট বা মহাজোটে একাকার হওয়া সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এ মুহূর্তে দেশে গণতন্ত্র এবং নির্বাচন ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের প্রয়োজন। যারা আমাদের দাবিগুলো সমর্থন করবে কোনো না কোনোভাবে হয়তো তাদের সঙ্গে ন্যূনতম মিল হতেই পারে। আওয়ামী লীগ তো সরকারে। তাহলে কি বিএনপির কথা বলছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি বলছি, যারা দাবি নিয়ে রাস্তায় থাকবে তাদের সঙ্গেই মিলতে পারে।

ড. কামালকে যুক্তফ্রন্টে না রাখা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা কোনো জোটে যাব না। তবে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন বা কর্মসূচি হতে পারে। কারো ব্যানারে নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads