• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পরস্পরকে দোষারোপ নবীন-প্রবীণের

লোগো বিএনপি

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

বিএনপির আন্দোলনে ব্যর্থতা

পরস্পরকে দোষারোপ নবীন-প্রবীণের

  • রেজাউল করিম লাবলু
  • প্রকাশিত ০৬ জুলাই ২০১৮

একের পর এক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেও সফলতার মুখ দেখছে না বিএনপি। এ ব্যর্থতার জন্য তরুণ প্রজন্মকে বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলকে দুষছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। আর তরুণ প্রজন্ম দায় চাপাচ্ছে সিনিয়র নেতাদের ওপর। ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, এ পর্যন্ত হওয়া আন্দোলনে তাদের নেতাকর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। আর জ্যেষ্ঠ নেতারা দাবি করছেন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ৯০-এর গণ-আন্দোলন সফল করেছেন ছাত্র-যুব-শ্রমিকরা। এরপর আর তেমন উল্লেখযোগ্য আন্দোলন করতে পারেননি ছাত্ররা। এখন বিএনপির বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা প্রায়ই বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় অভিযোগ করেন, তাদের বয়স হয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তরুণদের রাজপথে গণ-আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু তেমনটা না হওয়ায় হতাশ তারা।

সম্প্রতি কারাবন্দি যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, প্রেস ক্লাবের সামনে তার বুকের ওপর থেকে ছাত্রনেতা রাজকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। কিন্তু পরে তাকিয়ে দেখেন যুবকরা আর নেই। বক্তব্য শুরু হলেই পেছন থেকে যুবকরা চলে যায়। আজ সবাইকে আত্মসমালোচনা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নেতাকর্মীদের মাঠে নেমে আসতে হবে। যুবদলের নেতাকর্মীদের ঘরের ভেতর থেকে বাইরে আসতে হবে। দলের বয়স্করা সবাই মাঠে থাকবেন। যুবকদেরও মাঠে যেতে হবে। প্রয়োজনে ২০ জন ২০ জন করে মাঠে যান। দেখেন পরিস্থিতি কী হয়। বিএনপি যদি রাস্তায় নামে সরকারের দাঁড়ানোর উপায় থাকবে না। এমনি এমনি কোনো কিছু পাওয়া যায় না। এর জন্য সংগ্রাম করতে হয়।

দলের মহাসচিব তথা জ্যেষ্ঠ নেতাদের এমন অভিযোগ মেনে নিয়েছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এটা ঠিক, প্রত্যাশা অনুযায়ী আন্দোলন এখনকার ছাত্রসমাজ করতে পারছে না। তার মানে এই নয়, তারা পারবে না। অতীতের ভুলত্রুটি সংশোধন করে আগামীতে সফল হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছাত্রসমাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক সহসভাপতি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যাদের আন্দোলন-সংগ্রামে পাওয়া যায় না, তাদের পদ দিতে চাপ প্রয়োগ করেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। ফলে যোগ্যদের যথাযথ মূল্যায়ন করা যায় না। যাদের সংগঠন গোছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাদের স্বাধীনতা দিলে আন্দোলন সফল করা যেত। আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য তাদের দায়ও কম নয়। তা ছাড়া আন্দোলন-সংগ্রামে জ্যেষ্ঠ নেতারা থাকলে ছাত্রনেতাদের উৎসাহ বাড়ে। কিন্তু দেখা যায়, তারা কখনো আসেন, কখনো আসেন না।

তিনি বলেন, সমস্যা আরো আছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের দ্বন্দ্বের প্রভাব ছাত্র সংগঠনের ওপরও পড়ে। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা নিজেদের পছন্দের নেতা রাখতে চান কমিটিতে। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামের সময় তারা বড় ভাইদের নির্দেশ ছাড়া কোনো কিছুতে অংশ নেন না। তাদের ডেকেও পাওয়া যায় না। এতে গ্রুপিং দিনে দিনে বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক যুগ্ম সম্পাদক বলেন, ছাত্র রাজনীতি করতে এসেছি। আমরা তো কেউ সন্ত্রাসী নই। ঘর থেকে তুলে নিয়ে নিখোঁজ করে রাখলে কীভাবে রাজনীতি হবে? রাজনৈতিক মামলা হতে পারে, জেলে নিতে পারে, কিন্তু নির্যাতন করে তো মেরে ফেলতে পারে না।

স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা বিএনপির বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তাদের সময়কার আন্দোলন-সংগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তখন সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা রাস্তায় নেমেছিলেন। বিএনপির বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। সেই নির্যাতনের ক্ষত এখনো তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন। নিজেও আন্দোলন করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান তার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন করা খুব কঠিন ছিল। তার মধ্যেও দৌড়ে মিছিল করতেন তারা। এক জায়গায় জড়ো হয়ে দৌড় দিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতেন। এরপর ধাপে ধাপে সে আন্দোলন জোরালো হয়। তখন একটা ধারাবাহিকতা ছিল। এখন যেটা দেখা যায় না।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের এমন অভিজ্ঞতার বিষয়ে ছাত্রদল নেতা আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, তাদের তো আর খুন, গুমের শিকার হতে হতো না। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকতে হতো না। তখন রাজবন্দিদের আলাদা সম্মান ছিল। এখন সেটা নেই। এর পরও ছাত্রনেতারা কোনো আন্দোলনে বসেছিলেন না। এখন পর্যন্ত গুম, খুনের শিকার হওয়াদের মধ্যে ছাত্রনেতার সংখ্যাই বেশি। এখন পর্যন্ত গুম হয়েছেন ২২ ছাত্রনেতা। খুন হয়েছেন শতাধিক। সর্বশেষ কক্সবাজারে এক ছাত্রদল নেতা নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন। প্রতিদিনই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৭ সাল ছিল আতঙ্কের বছর। ওই বছরে গুম হয়েছেন ৯১ জন। তাদের মধ্যে ৬৫ জনের সন্ধান এখনো মেলেনি। তাদের মধ্যে ছাত্রদলের নেতাকর্মীর সংখ্যাই বেশি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads