• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
জোট ছাড়ছে জামায়াত!

বিএনপির ২১ বছরের মিত্র জামায়াত ছাড়ছে জোট

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

জোট ছাড়ছে জামায়াত!

সিলেট ইস্যু সমাধানে ব্যর্থ জোট সমন্বয়ক, সিদ্ধান্ত দেবেন তারেক

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৭ জুলাই ২০১৮

ঝোপ বুঝে কোপ মারতে শুরু করেছে বিএনপির ২১ বছরের মিত্র জামায়াত। জাতীয় নির্বাচনের আগেই হিস্যা নিয়ে দরকষাকষিতে নেমে পড়েছে দলটি। কাঙ্ক্ষিত আশ্বাস না পাওয়ায় জোট ছাড়ার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছে শরিক দলটি। জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিলের বাকি মাত্র তিন মাস। ভেতরে ভেতরে সবাই প্রস্তুতি শুরু করেছে। তাই আসন ছাড়সহ নানা ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষির এটাই মোক্ষম সময়। সামনে বড় কোনো ইস্যু না থাকায় দলটি সামনে এনেছে সিলেট সিটি নির্বাচনকে। তাদের পক্ষে সমর্থন আছে জোটের একাধিক শরিকেরও।

বিএনপি মনে করছে এটি দরকষাকষির কৌশল। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সিলেট নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। আশা রাখি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

তবে জোটের একাধিক শরিকের তথ্যমতে, প্রভাবশালী দুই দলের নেতাদের কর্মকাণ্ডে জোটের ফাটল দৃশ্যমান হচ্ছে। মাঠে কথা উঠেছে, জামায়াত ফের মঞ্চ বদল করতে পারে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। ঠুনকো বিষয় নিয়ে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে জামায়াতের বিচ্ছেদ শুধু সময়ের ব্যাপার।

বেঁকে বসা শরিকের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেও সমস্যার সমাধান করতে পারেননি জোটের নতুন সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অনড় জামায়াতকে বাগে আনতে পারেননি। অবশেষে বিষয়টি গড়িয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান পর্যন্ত। ফয়সালা হয়তো তিনিই করবেন।

জামায়াতের ভূমিকা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। সুবিধাবাদী এ সংগঠনটি আওয়ামী লীগ, বিএনপি উভয়ের সঙ্গেই বিভিন্ন সময় গাঁটছড়া বেঁধেছে। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ‘আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন’ তিন ইস্যুতে জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসকে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট করে বিএনপি। নির্বাচনে জিতে সরকারও গঠন করে। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে এ জোট। এরই মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, দুর্নীতির দায়ে জোটপ্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড, তার মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ দিন দিন জটিল রূপ নিচ্ছে।

জামায়াতের অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপি যথাযথ ভূমিকা রাখেনি। আর পাল্টা হিসেবে বিএনপি বলছে, ১/১১-তে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার ঘটনায় জামায়াত কার্যত নীরবতা পালন করেছে। গত সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অদৃশ্য আঁতাত করেছে প্রতিপক্ষের সঙ্গে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে সিলেট জটিলতা। জামায়াত দলীয় প্রার্থীকে প্রত্যাহারে নারাজ।

এ নিয়ে দুই দফায় জোটের বৈঠক এবং কয়েক দফায় জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যর্থ হয়েছেন সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। এরপর দায়িত্ব নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনিও জামায়াতকে বাগে আনতে পারেননি। অবশেষে গত বুধবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বিএনপি ও জোটের একাধিক শরিক দলের নেতা বাংলাদেশের খবরকে জানান, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৬টি আসন দাবি করেছে জামায়াত। এ ছাড়া তারা অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনেছে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। সে কারণে আগেভাগেই সংসদ নির্বাচনের আসন বরাদ্দের ফয়সালা চায় জামায়াত। প্রত্যাশা না মিটলে নিবন্ধনহীন (আপিল বিভাগে বিচারাধীন) দলটি পুরনো পথে হাঁটার হুমকিও দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে জোটের আরো ৪-৫টি দল বেরিয়ে যেতে পারে।

বিএনপির ডাকা জাতীয় ঐক্যের পথে প্রধান অন্তরায়ও এখন জামায়াত। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বিএনপিকে চাপ দিচ্ছে। জাতীয় ঐক্যে শরিক হতে আগ্রহী দলগুলোও একই পরামর্শ দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছে বিএনপিও। আগে এই দুই দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে যে সুসম্পর্ক ছিল, এখন আর তা নেই। আগে জামায়াতের মতামত ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত দিত না বিএনপি। এখন আর সে অবস্থা নেই। আবার জামায়াতও বিভিন্ন সময় বিএনপির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রায় দুই যুগ আগে চারদলীয় জোট হয়েছে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন বিষয়ে। এখানে বলা নেই যে, স্থানীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দিতে হবে। তারপরও আমরা প্রতিপক্ষকে হারাতে এককাতারে কাজ করেছি। আপনারা দেখেছেন, বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেই প্রার্থী দিয়েছি। তাদেরও প্রার্থী ছিল। আমি মনে করি স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ইস্যুতে গড়া জোটে কোনো রকম টানাপড়েন সৃষ্টি হবে না। তবে সিলেটে আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে না। এটাকে বিএনপি যেভাবেই নিক, তাতে কিছু যায় আসে না।

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মহাসচিব এম গোলাম মোস্তাফা বলেন, পরওয়ার সাহেব যা বলেছেন, তা ঠিক নয়। ঐক্য করে অর্ধেক রাস্তা একসঙ্গে যাব, আবার মাঝপথে বিচ্ছিন্ন হব- একে তো ঐক্য বলে না। তাদের চলনে-বলনে মনে হচ্ছে তারা পুরনো পথে হাঁটছে। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা নাও আসতে পারে। তবে এই দূরে দূরে থাকা, দাবিতে অনড় থাকাটা যে শীতল সম্পর্কের আভাস, তা বুঝতে তো বিদ্বান হওয়ার দরকার নেই।

ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মনি বলেন, জামায়াত রাজনীতিতে ঐতিহাসিক অনেক ভুল করেছে। ’৮৬-তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, ’৯৬-এ বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য আন্দোলন করেছে। এবারো তারা সেই পুরনো পথেই হাঁটছে বলে মনে হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads