• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
‘ব্লেইম গেম’ শুরু করেছে বিএনপি

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

আ.লীগের কার্যনির্বাহী সভায় শেখ হাসিনা

‘ব্লেইম গেম’ শুরু করেছে বিএনপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ জুলাই ২০১৮

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসবে নানামুখী খেলাও তখন শুরু হয়ে যাবে। তবে আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি, করে যাব। আমরা চাই দেশের মানুষ ভালো থাকুক। তিন সিটিতে হঠাৎ অস্থিতিশীল পরিবেশ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, নাটক করাই বিএনপির চরিত্র এবং নিজেরা অপরাধ করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপিয়ে নাটক করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দলটি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। ভোটের মাঠে জনগণের সাড়া না পেয়ে ‘ব্লেইম গেম’ শুরু করেছে বিএনপি। এটা তাদের চরিত্র। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সভাপতির সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয় এবং আগামী নির্বাচনের ইশতেহারের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে বক্তব্যের শুরুতে জানান দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। রাত ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার এ বৈঠক চলছিল।

আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তিন সিটিতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচার চলছিল। হঠাৎ দেখা গেল, রাজশাহীতে বিএনপির মিছিলে ককটেল ফুটল। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলাম; এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেল তাদের (বিএনপি) নিজেদের ভাষায় এটা তারা নিজেরাই করেছে শুধু আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার জন্য। তারা যখন নির্বাচনে জনগণের কাছে যেয়ে সাড়া পাচ্ছে না তখন তারা ব্লেইম খেলা শুরু করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, নিজেরাই ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করে সেটাকেই আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া— এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। তারা নিজেরাই বোমা মারে, নিজেরাই গাড়ি ভাঙে। এরপর আমাদের ওপর দোষ চাপায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সিলেটে যে ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, আগুন দেওয়া, বোমা মারা, গ্রেনেড হামলা করা ... আমাদের বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান বেঁচে গেছেন, তার ক্যাম্পে আগুন লাগিয়েছে। এই কামরানকে মারতে দুই দুইবার তার ওপর হামলা করেছে। সিলেটে কিবরিয়া (সাবেক অর্থমন্ত্রী) সাহবেকে হত্যা করেছে। এভাবে সারা বাংলাদেশে তারা আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া জেলখানায় খান-দান-শুয়ে থাকেন আর যেই মামলার তারিখ আসে সেই অসুস্থ হয়ে যান। আদালতে হাজিরা এড়াতে তিনি নাটুকেপনা করছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাইকো দুর্নীতি মামলায় এফবিআই বসে আছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। খালেদা জিয়া জানেন কোর্টে গেলেই ধরা খাবেন। তাই আদালতের হাজিরার তারিখ আসলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন আর হাজিরার তারিখ চলে গেলে আবার ভালো হয়ে যান।

কারাগারে খালেদা জিয়া সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কোনো কিছুর কমতি নেই কারাগারে। যা যা চাচ্ছেন, তাই পাচ্ছেন। এরকম আয়েশ করে তো আর কেউ পায়েস খেতে পারে নাই। তিনিও তো জেলে রেখেছিলেন। আমাদের সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান জামালউদ্দীন সাহেবকে দুইটা কম্বল দিয়ে ফেলে রেখেছিলেন। রওশন এরশাদ বা অন্যদের কথা না হয় নাই বললাম। আর উনি আয়েশ করে থাকেন আর কোর্টের তারিখ এলেই অসুস্থ হয়ে যান। তাহলে আমাদের কী করার আছে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা মেরে জেলে, আমাদের কাছে মুক্তির দাবি করে তো লাভ নেই; আমরা তো জীবনেও ছাড়তে পারব না, যতক্ষণ না কোর্ট অর্ডার দেবেন। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শুধু নয়, এমনকি আমার ছেলেকে পর্যন্ত হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে সেই আমেরিকায়। চুরি করে দুর্নীতি করে এত টাকা কামিয়েছে যে, সেখানে পর্যন্ত এফবিআইয়ের অফিসার পর্যন্ত তারা কিনে ফেলেছে। সেখান থেকে ষড়যন্ত্র করেছে জয়কে তুলে নিয়ে মেরে ফেলার। তিনি বলেন, যত রকম অপকর্ম আছে তারা করে দেশটাকে পিছিয়ে রেখেছিল, আমরা ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী সম্মান পাচ্ছে, তখন তাদের অন্তর্জ্বালা শুরু হয়েছে। 

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. আবদুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কার্যনির্বাহী সংসদের অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে আগস্ট মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার জন্মদিন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা দিবস, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস, ২৪ আগস্ট আইভী রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সারা মাস মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়েও কথা হয় বৈঠকে। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে ইশতেহারে কী থাকবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads