• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ফের আলোচনায় ১/১১

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

ফের আলোচনায় ১/১১

#আমাদের দেশে বড় পরিবর্তনের একটির চেয়ে অন্যটির ধরন ভিন্ন : নূরুল আমিন #রাষ্ট্রের চাহিদা আর বাস্তবতার সঙ্গে গরমিল হলে ভিন্ন কিছু ঘটে : শাহদীন মালিক

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৭ আগস্ট ২০১৮

ফের আলোচনায় ১/১১। ২০০৮ সালের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা। ২০০৭ সালে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সঙ্কটে ‘বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারকে উৎখাত করে সেনাশাসিত জরুরি সরকারের আগমন ঘটে। ১১ বছর আগের জানুয়ারি মাসের সেই ১১ তারিখটিকে ‘ওয়ান ইলেভেন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় রাজনৈতিক ভাষায়।

২০০৭ সালের সে সময় দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়াকে ‘মাইনাস টু ফরমুলা’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় যারা কলকাঠি নেড়েছিল তাদের বলা হতো কুশীলব। বর্তমান রাজনীতির মাঠে সেরকম অঘটনের আশঙ্কায় শঙ্কিত রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ। কুশীলবরা আবারো সক্রিয় হচ্ছে বলে অভিযোগও উঠেছে। একই আভাস মিলেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতেও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নূরুল আমিন বেপারি বলেন, আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় বড় ধরনের যে পরিবর্তন ঘটে তার একটির চেয়ে অন্যটির ধরন ভিন্ন। গত ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে বহির্বিশ্ব জড়িত ছিল। এবারো তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘরোয়া বৈঠক করছেন। সে থেকে একটা বিশেষ কিছুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিকের মতে— শাসকের শাসন, রাষ্ট্রের চাহিদা আর বাস্তবতার সঙ্গে যখন গরমিল হয় তখনি ভিন্ন কিছু ঘটে। বর্তমান লক্ষণটাও তেমনই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একই ধরনের আভাস দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সভায় তিনি বলেন, দেশে ওয়ান ইলেভেনের গন্ধ পাচ্ছি। অশুভ শক্তি এবং ১/১১-এর কুশীলবরা আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে। গত ১১ আগস্ট সংবিধান প্রণেতা ড. কামালের দিকে সরাসরি অঙ্গুলি তুলেছে ক্ষমতাসীন দল। অন্যদিকে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি আগে থেকেই ওইসব কুশীলবকে বিরোধিতা করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিচারের জন্য সরকারের প্রতিই দাবি জানিয়েছে দলটির নেতারা।

তৎকালীন সরকারপ্রধান ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মেনে নেয়নি বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। কারণ তিনি ছিলেন বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকারের মনোনীত রাষ্ট্রপতি। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে ছিল আওয়ামী লীগসহ মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। একপর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি নেপথ্যে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামোতে নতুন মুখ নির্বাচিত করেন। ওই সরকারের প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ।

শুরুর দিকে সাধারণ মানুষ ওই সরকারকে স্বাগত জানায়। তারা দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ এনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ ও সিনিয়র প্রায় সব রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করে। বিশেষ কমিশন গঠন করে, মামলা দিয়ে অনেকের বিরুদ্ধে সাজাও দেওয়া হয়। মামলা ও সাজার এই তালিকায় ছিল দেশের দুই শতাধিক রাজনীতিক। তাদের অনেককে নির্যাতন করে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য আদায় করাসহ নানা কুৎসা রটনার ঘটনাও ঘটে। নানা ঘটনা প্রবাহের একপর্যায়ে রাজনীতি অবমুক্ত করতে বাধ্য হয় তারা। রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের চাপের মুখেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে তারা ঘরে ফেরে। ক্ষমতা হস্তান্তরের পর অনেকেই দেশ ত্যাগও করেন। ১/১১-এর ঘটনা পরিক্রমার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হলেও এখনো অনেকের মুখোশ উন্মোচিত হয়নি।

এর পর থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এবং বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াসহ দুই দলের নেতারা ১/১১-এর কুশীলবদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখা কুশীলবদের বিচারের দাবিও ওঠে। ফখরুদ্দীন আহমদ, মইন উ আহমেদসহ কয়েকজন বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। ওই সময় বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের নাম রাজনীতিবিদদের মুখে মুখে আলোচনায় ছিল। ১০ বছর আগেই খালেদা জিয়া ঘোষণা দেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দীন আহমদ ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের বিচার করা হবে।

দেশে বহুল আলোচিত ‘কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক চাই’ দুটি আন্দোলনের পর আবারো সেই ১/১১-এর কুশীলবদের নিয়ে রাজনীতির মাঠে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। গত ৭ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, রাতের আঁধারে, দিনের প্রথম প্রহরে কোথায় কী হচ্ছে তা আমাদের জানা আছে। দেশে ‘অশুভ শক্তি’ সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ করে কুশীলবদের সতর্ক করেন এই রাজনীতিবিদ। দলটির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গত ১৫ জুলাই বলেন, ‘কিছুদিন আগে দেখেছি কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়ে সাধারণ নাগরিকের ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন অভিভাবক। এরা কারা, এরা সেই ১/১১-এর কুশীলবরা। তারা তাদের পরিচয় গোপন করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে।

গত ৪ আগস্ট নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ড. কামাল হোসেনসহ অনেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পতনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে তারা একটি সভাও করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপি কোনো অশুভ শক্তিকে প্রশ্রয় দেয় না। ‘ওয়ান ইলেভেন’ বা জরুরি সরকার এসেছিল আওয়ামী লীগের কারণেই। সুতরাং কুশীলবদের দায়ও আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads