• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কারাগারে খালেদার আরো একটি ঈদ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

কারাগারে খালেদার আরো একটি ঈদ

দেখা পেলেন না বিএনপি নেতারা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ আগস্ট ২০১৮

কারাগারে ঈদুল আজহা পালন করলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দুপুরে স্বজনরা রান্না করা খাবার নিয়ে গেলেও কারা কর্তৃপক্ষ তা ভেতরে নিতে দেয়নি। দলের নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এমনটাই জানিয়েছেন তার স্বজনরা। খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলাম ঈদের দিন কারা ফটকে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের দিন ২০ জন স্বজন কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ৬ জনকে কারা কর্তৃপক্ষ সাক্ষাতের অনুমতি দেয়। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জন্য বাসায় রান্না করা খাবার নিয়ে গেলেও কারা কর্তৃপক্ষ তা ভেতরে নিতে দেয়নি। দুপুর সোয়া ২টায় তারা কারাফটকে গেলেও এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে তাদের কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। 

দুপুর সোয়া ২টার আগে চারটি গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার স্বজনদের কয়েকজন আর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসার কয়েক কর্মী মিলিয়ে মোট ২০ জন কারাগারের সামনে পৌঁছান। তাদের মধ্যে খালেদা জিয়ার সেজ বোন সেলিনা ইসলাম, তার স্বামী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ছোট ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার, তারেক রহমানের স্ত্রীর বড় বোন শাহিনা জামান বিন্দু ও প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং তার ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমানকে কারাগারে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।

স্বজনরা জানিয়েছেন, সুতির শাড়ি পরে নিজের কারা কক্ষ থেকে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে অতিথি কক্ষে আসেন খালেদা জিয়া। দুই পাশ থেকে ধরে তাকে নিয়ে আসেন কারাগারের দুই কর্মী। কোকোর মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করেন খালেদা জিয়া। সবার সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন।

গত রোজার ঈদে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে মোট ২১ জনকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। এমনকি রান্না করা খাবার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তিন যুগের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার মোট চারটি ঈদ কারাগারে কেটেছে। জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর এটি কারাগারে তার দ্বিতীয় ঈদ।

এদিকে এবারের ঈদে সীমিত সংখ্যক আত্মীয়স্বজন তার সঙ্গে দেখা করতে পারলেও দলের শীর্ষ নেতাদের দেখা মেলেনি। গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে তিনিই একমাত্র বন্দি।

কারা কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার কোরবানির ঈদের দিন প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে সকালে দুধ-সেমাই, জর্দা এবং মিষ্টি দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। তার পছন্দ শুনে সে অনুযায়ী দেওয়া হয় দুপুরের খাবার।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কারাগারের সামনে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কিন্তু ফটকে পৌঁছানোর আগেই পুলিশ তাদের পথ আটকে দেয়।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে না পেরে মির্জা ফখরুল অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, জেল কোডে বলা আছে যে, ঈদের দিনে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতদের কেউ দেখা করতে চাইলে দেখা করতে দেওয়া হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে ১৩ আগস্ট অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। দেখা করতে না দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক।

মির্জা আব্বাস বলেন, ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাদের দেখা করতে না দিয়ে অবিচার করা হলো। এ সময় কারাগারের সামনে দুই শতাধিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কর্মীরা এ সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এরপর রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ঈদের দিনে খালেদা জিয়ার জন্য কারাগারে বাসায় রান্না করা খাবার নিতে না দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ ‘অমানবিক’ আচরণ করেছে।

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, রান্না করা খাবার নেওয়া প্রসঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার স্বজনদের বলেছে, এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, সরকারের নির্দেশ। এখানে আইজি প্রিজন হচ্ছেন বড় কর্তৃপক্ষ ও সিদ্ধান্ত প্রদানের ব্যক্তি। সেই আইজি প্রিজন যখন বলেন যে, তিনি কিছু করতে পারছেন না, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে। তখন বুঝতে হবে এখন দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে।

এর আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পরও তাকে দুটি ঈদ কারগারে কাটাতে হয়েছে। তখন এত কড়াকড়ি ছিল না বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার স্বজনরা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads