• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
রাজনীতিতে নেপথ্যের খেলা

জাতীয় সংসদ ভবন

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

রাজনীতিতে নেপথ্যের খেলা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ৩০ আগস্ট ২০১৮

জমে উঠছে ভোট রাজনীতির খেলা। চাঙ্গা হচ্ছে অদৃশ্য রাজনীতিও। মাঠে দৃশ্যমান খেলোয়াড় হাতেগোনা হলেও নেপথ্যের কুশীলবের সংখ্যা অনেক। রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, আমলা, সাবেক সেনাকর্মকর্তা এবং পেশাজীবীরা এ তালিকায় আছেন। এই খেলা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে। বর্তমানে সকলের কর্মে, চলনে, বলনে সবকিছুতেই নির্বাচনের ছোঁয়া। ঘাটে-মাঠে, ঘরে-বাইরের আলোচনায় রাজনীতি। একটাই প্রশ্ন কী ঘটতে চলেছে রাজনীতিতে?

ক্ষমতার ভেতরে-বাইরে থাকা রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ নির্বাচন বানচালের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। কারো দৃষ্টিতে ফের সক্রিয় ১/১১-এর কুশীলবরা। রাজনীতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, আগামী সেপ্টেম্বরজুড়ে রাজনীতির মাঠে চলবে ঘটনাবহুল বিরতিহীন নাটক। অভিনেতারা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের। চলমান ঘটনা থেকে দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারে নতুন ঘটনায়। নানামুখী সমীকরণের পর চূড়ান্ত পরিণতির দেখা মিলবে ডিসেম্বরে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) টার্গেট বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। গত মঙ্গলবার কমিশন সচিব জানিয়েছেন, ওই মাসের শেষের দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রস্তুতি শেষ করেছেন শতকরা আশি ভাগ। সব কিছু ঠিক থাকলে তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে।     

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো নানা ইস্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নানার। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আগে-ভাগেই। নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে ছোট ছোট দল একাট্টা হচ্ছে। সরকার পরিচালনাকারী পুরনো জোটগুলো তাদের শরিক বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দৃশ্যত কিছুটা বেকায়দায় আছে মনে হলেও আছে শক্ত অবস্থানে। সাংগঠনিক শক্তি এ দলটির সবচেয়ে জোরালো।

এদিকে প্রতিষ্ঠালগ্নের পর এবারের মতো বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি বিএনপি। সারা দেশে তাদের আট লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ৮০ হাজার মামলা। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবাস করছেন। দলের দ্বিতীয় কাণ্ডারি তারেক রহমানও সাজাপ্রাপ্ত। জিয়া পরিবারের সবাই বিচারের মুখোমুখি। আইনি লড়াইয়ে বিএনপির অন্য নেতারা জামিনে মুক্তি পেলেও সাজা আতঙ্কে ভুগছেন। নানামুখী চিন্তা থেকে খালেদা মুক্তির জন্য জোরালো আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারছে না। দলীয় প্রধানকে বন্দি রেখেই নির্বাচনে যাবে কি না এমন সিদ্ধান্তেও আসতে পারেনি নীতিনির্ধারকরা।

এ অবস্থার মধ্যে টর্নেডো বেগে আসছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়। বিচারাধীন মামলার রায় পক্ষে না বিপক্ষে আসবে তা অজানা থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, রায় হলে বিএনপি নেতৃত্বশূন্যতায় পড়বে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপিকেও। এরই মধ্যে আরেক ইস্যু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শত আসনে ব্যবহূত হবে। বিএনপিসহ বেশ কিছু দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন ইভিএম নির্বাচনে কারচুপির কাজে ব্যবহার করা হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদ বলেছেন, ৩০০ আসনের মধ্যে ১০০ নিশ্চিত করতেই ইসি ইভিএমের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ অস্থার মধ্যে নতুন করে আলোচনার টেবিলে ঝড় তুলেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। দফায় দফায় বৈঠক শেষে গত মঙ্গলবার তারা ঐকমত্য হয়েছেন জোটবদ্ধ থাকতে। ঢাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বহুল আলোচিত ছাত্র নেতাদের সমন্বয় ঘটছে এই জোটে। তারা সরকারের সমালোচনায় আপসহীন অবস্থানে রয়েছেন।

সাম্প্রতিক এসব নানামুখী তৎপরতায় বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কিছু রাজনীতিক দল অনেকটাই আশাবাদী ছিলেন, ড. কামাল হোসেনরা সরকারবিরোধী শিবিরে ভিড়বেন। কিন্তু মঙ্গলবারের বৈঠক থেকে আসা সিদ্ধান্তে অনেকটাই আশাহত করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটকে। ওই সিদ্ধান্তে বলা হয় তাদের জোট হবে জামায়াতে ইসলামীসহ স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল বাদে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের সমন্বয় ঘটানো হবে প্রভাবশালী দুই নেতার জোটে। এ সিদ্ধান্তের পরপরই রাজনীতির মাঠে আলোচনার ঝড় বইছে। খাস মিত্র জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি আদৌ সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে? আবার অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ড. কামাল-বি. চৌধুরীর জোট কী সরকার বিরোধী নাকি অন্য কিছু। মাঠে এমন খবরও চাউর আছে যে, এই দুই নেতার নেপথ্যে আছে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরাশক্তির মদতও। আগস্টে ড. কামাল-বি. চৌধুরী দৃশ্যমান হলেও সেপ্টেম্বরে সুশীল সমাজের আরো নতুন মুখের দেখা মিলবে। তখন নতুন মেরুকরণও ঘটতে পারে।

নির্বাচন সামনে রেখে নানা সমীকরণ কষছে রাজনীতির মাঠের পুরনো খেলোয়াড় আওয়ামী লীগও। একাধিক স্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিএনপি আবারো নির্বাচন বর্জন করলে এক সিদ্ধান্ত নেবে, অংশগ্রহণ করলে আরেক সিদ্ধান্ত। বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে তাদের অতীত বেশ সুখকর। আন্দোলন ঠেকানোর মতো অভিজ্ঞতাও আছে আওয়ামী লীগের। আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লে দলটি এক পন্থা নেবে; না বাড়লে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করবে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের নেওয়া আছে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে এলেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে কূটনীতিকপাড়া। গত নির্বাচনে বিভিন্ন বন্ধুদেশের প্রতিনিধিরা ভূমিকা রেখেছিল। বসে নেই এবারো। প্রতিবেশী ভারত ইতোমধ্যে প্রভাবশালী অনেক দলের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেছে। মোড়ল দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ঘরোয়া বৈঠক করছেন মাসখানেক আগে থেকেই। ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, জাপানের মতো দেশগুলো যোগাযোগ রাখছে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। দূতিয়ালিও শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। পর্দার বাইরে আর ভেতরের চিত্র এখনো ফুটে ওঠেনি। তারাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহম্মেদ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা বাড়বেই। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনসহ যারা নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারাও সক্রিয় হয়। দেশে বিনিয়োগকারীরাও একটা ভূমিকা রাখে। তবে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা থাকে ভোটে সাধারণ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো। এখনো তাই হচ্ছে, দৃশ্য বলে।

সাবেক কূটনীতিক রাশেদ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আগে তেমনটা গুরুত্ব না দিলেও এখন দিচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো গত নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটও এবারের নির্বাচন নিয়ে কাজ করছেন। দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের তো বেশ সক্রিয়-ই দেখছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads