• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
আদালত থেকে রাজপথে

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

খালেদা মুক্তির লড়াই

আদালত থেকে রাজপথে

  • নাজমুল আহসান রাজু
  • প্রকাশিত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কারাবন্দি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির লড়াই আদালত থেকে গড়াচ্ছে রাজপথে। ৩৬ মামলার আসামিকে জেল থেকে মুক্তি নিশ্চিত করতে এ কথা বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আইনি লড়াইয়ে যুক্ত সিনিয়র আইনজীবীরা। কারাগারে ৬ মাস পার হওয়ার পর তারা অনুধাবন করছেন যে, রাজপথ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আইনি লড়াইয়ে ব্যর্থতার গ্লানি থেকেই তাদের এ অনুধাবন।  

খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্যরা জানান, কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চলমান আইনি লড়াই ছেড়ে রাজপথের আন্দোলন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। দলীয় শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য এ পথকে সঠিক বলে ভাবা হচ্ছে।  এ ভাবনায় দ্বিধাবিভক্ত দলের আইনজীবীদের একটি অংশ।

কারাবন্দি হওয়ার পর ৬ মাসে দুই ঈদ কারাগারে কেটেছে খালেদা জিয়ার। এ সময় ছয় মামলায় জামিন হলেও মেলেনি দুটিতে। এতে দীর্ঘতর হচ্ছে দলের শীর্ষ নেত্রীর কারাজীবন। আর এ নিয়ে দিন দিন হতাশা বাড়ছে দলীয় আইনজীবীদের মধ্যে।

গত মাসে কুমিল্লার নাশকতার এক মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন শুনানি করে রায় দেওয়ার আগ মুহূর্তে মামলাটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে ফেরত নেওয়া হয়েছে। মামলায় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী তার অনুপস্থিতিতে আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে বিভেদের বহিঃপ্রকাশ থেকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বাইরে গড়ে তুলেছেন আলাদা আরো একটি সংগঠন। এ সংগঠনের ব্যানারে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করতে প্রতিনিয়ত আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। এমনিতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে কোন্দল ও বিরোধের চর্চা অনেক পুরনো।

গত শনিবার নয়াপল্টনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ থেকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন না। গণতন্ত্রও মুক্ত হবে না।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর তাকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই শুরু করেন দলীয় আইনজীবীরা। গত ১২ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টে চার মাসের জামিন পান তিনি। কিন্তু ঢাকা, কুমিল্লা ও নড়াইলের ৬ মামলায় তার কারামুক্তি আটকে যায়। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে চারটি মামলায় জামিন মঞ্জুর হয়। এখনো কুমিল্লার হত্যা ও নাশকতার দুটি মামলায় জামিন বাকি রয়েছে।  কোরবানির ঈদের আগে এ দুটি মামলায় জামিনের সম্ভাবনা দেখা দিলেও উচ্চ আদালতে দেড় মাসের অবকাশ ছুটি শুরুর কারণে সে আশা হালে বিলীন হয়ে যায়। আইনজীবীদের মতে কুমিল্লা দুটি মামলায় জামিন পেলেই কারামুক্ত হতে পারবেন খালেদা জিয়া। 

দলীয় সূত্র মতে,  খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর আইনজীবীরা আইনি তৎপরতা শুরু করেন। কয়েকজন আইনজীবী প্রকাশ্যে আইনি লড়াইয়ে যুক্ত থাকলেও তাদের কর্মকাণ্ডে সন্দেহ সৃষ্টি করে। ম আদ্যক্ষরের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও তার অনুসারী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শীর্ষ দুই নেতার কর্মকাণ্ড সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের অভিযোগ আইনজীবীদের ভোটে শীর্ষ পদে নির্বাচিত হলেও এ দুজন খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ফলপ্রসূ কোনো কর্মসূচি নেননি। ফলে ক্ষোভ ও হতাশা থেকে ‘গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন সুপ্রিম কোর্টের বিএনপি সমর্থক মধ্যম শ্রেণির আইনজীবীরা। গত দুই মাসে সংগঠনটি সুপ্রিম কোর্টে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম মেহেদী, মনির হোসেন ও আবেদ রাজা। গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ সংগঠনের আয়োজনে একটি আলোচনা সভায় ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না অতিথি ছিলেন।

আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমান মান্না আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা শুনেছি আপনাদের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য রয়েছে। আপনাদের আইনজীবীদের একটি অংশ খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি হওয়ার আগে আশ্বাস দিয়েছিলেন এক মাসের মধ্যে মুক্ত করে আনবেন। কী হলো? ছয় মাসের মধ্যে তাকে কারামুক্ত করতে পারেননি। আপনাদের উচিত বিভেদ থাকলেও ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা।

আইনজীবীদের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, আইনজীবীদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। তারা ঐক্যবদ্ধ আছেন। শুরু থেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এটা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নেই। বরং বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাবন্দি হওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া কারামুক্তি পাওয়া দুরূহ।

গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের সংগঠক আইনজীবী মনির হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য জনমত গঠনে কাজ করছি। পদে থেকেও অনেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এ জন্য আমরা কয়েকজন আইনজীবী এ সংগঠন গড়ে তুলেছি। ইতোমধ্যে আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের কারামুক্তির জন্য আদালতে লড়াই করছি। কয়েকটি মামলায় জামিনও হয়েছে। আর মাত্র দুটি মামলায় জামিন বাকি রয়েছে। এ দুটি মামলায় জামিন হলেই মুক্তি পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তাই আমরা আইনিভাবে মুক্তি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads