• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
আসন-মন্ত্রিত্ব নিশ্চিত হয়েই জোট করবেন এরশাদ

লোগো জাতীয় পার্টি

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

আসন-মন্ত্রিত্ব নিশ্চিত হয়েই জোট করবেন এরশাদ

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে কয়টা আসন দেওয়া হবে, জয়ী হলে কয়টা মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে এবং নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে বিব্রত না করার নিশ্চয়তার আগে কোনো দলের সঙ্গেই নির্বাচনী জোট না করতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার দল জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতারা। দলীয় চেয়ারম্যানের কাছে তাদের বিশেষ আহ্বান- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার আগেই শতবার চিন্তা করে বুঝে-শুনে আসন ভাগাভাগিসহ ক্ষমতায় গেলে কীভাবে সরকার গঠন হবে- সবকিছুর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত হওয়া; যাতে দলীয় নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের বিভ্রান্তির শিকার না হন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় এরশাদের কাছে এ আহ্বান জানান বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। এরশাদ তাদের এসব অনুরোধে খুশি হয়ে তা রাখার আশ্বাসও দেন। সভায় উপস্থিত একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে এসব কথা জানান। তারা বলেন, এরশাদের সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় পার্টির বেশিরভাগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৬ জন বক্তব্য দেন।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছিল জাতীয় পার্টি। সমঝোতা অনুসারে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৪৭টি আসন দেওয়া হলেও ১৮টিতে প্রার্থী দেয় আওয়ামী লীগ। ২৯ ডিসেম্বরের ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৭ আসনে জয় পায়, মন্ত্রিত্ব পান এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের। এরপর নবম সংসদের বিরোধী দল বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে ৭২ আসনে প্রার্থী দেয়; জয় পান ৩৫ জন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি হয় বিরোধী দল এবং এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত; মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হন দলটির আরো তিনজন।

যৌথ সভার শুরুতেই চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সাইফুল্লাহ আল মুনিরের উপস্থাপনায় ‘পল্লীবন্ধুর হাত ধরে আর একবার’ শিরোনামে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির করণীয় ও কর্মকৌশল সম্পর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সভায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, আমরা কারো কাছে সিট (আসন) চাইব না, মন্ত্রী সংখ্যাই বা আমরা কেন চাইব? আমরা বিরোধী দল বা সরকারের অংশীদার হওয়ার জন্য তো রাজনীতি করছি না। রাজনীতি করছি ক্ষমতায় গিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। এবার আমরা সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করব। তবে নির্বাচনী রাজনীতিতে জোট করা যায়। এবার আমরা কারো সঙ্গে আগ বাড়িয়ে জোটে যাওয়ার কথা কেন বলব? কেউ যদি ক্ষমতার অংশীদার হতে চায়, তাহলে তারাই আমাদের সঙ্গে জোটে আসবে। তার এ বক্তব্যের জবাবে এইচএম এরশাদ বলেন, রওশনের বক্তব্যে আমি খুশি হয়েছি, উৎসাহিত হয়েছি। আমরা এবার নিজেরাই রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করব। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আরো বৃহৎ জোট করব। তবে এটা নিশ্চিত, এবার ন্যায্য হিস্যা আদায় করেই জোটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।

সভার শুরুতেই দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশের মানুষ লাঙলে ভোট দিয়ে এরশাদ সাহেবকে ক্ষমতায় বসানোর অপেক্ষায় আছে। এজন্য সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়তে হবে। এ সময় তিনি আগামী দেড় মাসের মধ্যেই ৩০০ আসনের সবকটির কেন্দ্র কমিটি ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের আহ্বান জানান। প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, তোফায়েল আহমেদ বলেছেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রথম দিন এক লাখ মানুষ মারা যাবে। তো দ্বিতীয় দিন কতজন মারা যাবে তা বলেননি। তবে আমরা চাই কোনো মানুষ মারা না যাক। আর এজন্য জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় আসা ছাড়া উপায় নেই। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান এরশাদ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া জোটের রাজনীতি যে ‘বিগ জিরো’ তা দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতারা যেমন ভালো করে জানেন, তেমনি সাধারণ মানুষও জানেন। তাই জাতীয় পার্টি আর এরশাদ ছাড়া তথাকথিত বড় কোনো দলের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পীর মেজবাহ এমপি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে তারা আমাদের ছেড়ে দেওয়া আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়। এবারো তা করতে পারে। তাই তাদের সঙ্গে জোট করার আগে বুঝে-শুনে করতে হবে। দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বৈঠকে থাকলেও বক্তব্য দেননি।

সভা শেষে সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যৌথ সভায় এখন থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে কোনো দল অংশগ্রহণ করুক বা না করুক সেদিকে জাতীয় পার্টি ফিরে তাকাবে না। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। সভায় বলা হয়, জাতীয় পার্টি অন্য কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে আর ব্যবহার হবে না। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি নিজেরাই ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads