• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কারা আদালতে খালেদা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

কারা আদালতে খালেদা

  • সাঈদ আহমেদ
  • প্রকাশিত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শরীরের অবস্থা ভালো নয়। বার বার আসতে পারব না। যেমন ইচ্ছে রায় দিয়ে দিন। এ আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না- এ মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। গতকাল বুধবার ছিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপনের দিন। বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ৫ নম্বর বিশেষ আদালত নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরের পর প্রথম কার্যদিবস। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর থেকে তিনি এখানেই বন্দি রয়েছেন। গতকাল কারা অভ্যন্তরে স্থাপিত পঞ্চম বিশেষ আদালতে (কারা-আদালত) যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য হাজির করা হলে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য থাকলেও অসুস্থতার কারণে তাকে আলিয়া মাদরাসা মাঠের বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে আদালত স্থানান্তর করা হয়। এ বিষয়ে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।

ক্লোজআপ খালেদা : নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার। ৭ নম্বর কক্ষ। দৈর্ঘ্যে ৫০ ফুট, প্রস্থে ২০ ফুট। পলেস্তরা খসা দেয়ালে রঙ চড়িয়ে আধুনিকায়নের চেষ্টা স্পষ্ট। মেঝেতে লাল কার্পেট। মাথার ওপর নতুন ৬টি ফ্যান। তার দুটি বিকল। এক সময় কক্ষটির একটি অংশ কারাগারের দর্শনার্থী অপেক্ষাগার ছিল। অন্য অংশে রাখা হতো রেকর্ডপত্র। ১০-১২টি চেয়ার বাসানো হয়েছে গাদাগাদি করে। প্রায় বদ্ধ এই কক্ষেই বসে ‘বিশেষ আদালত’। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারের জন্য তৈরি করা হয়েছে এটি। লালসালু ঘেরা ডায়াসের নিচেই বসেন পেশকার মোকাররম। বেলা ১১টার দিকে আনা হয় এক ট্রাঙ্ক নথি। ১১টা ৫ মিনিটে আসেন পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান। তখনো খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীদের দেখা নেই। উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে, এ আদালতে খালেদা জিয়া আসবেন কি না। হঠাৎই নড়েচড়ে উঠলেন কারারক্ষী ও পুলিশ সদস্যরা। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে আনা হয়। চোখে কালো গ্লাস। পরনে গোলাপি শাড়ি। হুইল চেয়ারে সটান করে পা দুটি বাড়ানো। সাদা চাদরে ঢাকা কোমর থেকে পা অবধি। ডান হাত বের করে বার বার টিস্যুতে ঘাম মুছছিলেন। আগে থেকে ‘আসামি খালেদা জিয়া’র জন্য সাজিয়ে রাখা কাঠের হাতলওয়ালা আসনে তিনি বসলেন না। সামনে ছিল টি টেবিলে রাখা টিস্যু বক্স ও পানির একটি বোতল। ডান পাশে হলুদ শাড়ি পরা ফাতেমা দাঁড়িয়ে ছিলেন পুরোটা সময়। তার হাতে একটি শপিং ব্যাগ।

৮ মাস পর আদালতে খালেদা : এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি সবশেষ আসামির কাঠগড়ায় ওঠেন। তবে এর ৮ মাস পর কাঠগড়ায় ওঠা খালেদা জিয়ার অভিব্যক্তি ছিল ভিন্ন। তার মুখে ছিল না হাসির রেশ। শরীরে ছিল কাঁপুনি। ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার সময়ও ছিল হাসিমুখ, গতকাল সেখানে ছিল মলিনতা। ১৩ মিনিট জুড়েই খালেদা জিয়াকে মনে হয়েছে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত।

খালেদা জিয়া আসার পর পরই আদালত কার্যক্রম শুরু করতে বলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, আসামি পক্ষের কোনো আইনজীবীকে দেখা যাচ্ছে না। অথচ গতকাল আদালত স্থানান্তর সংক্রান্ত গেজেট তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবেও সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা বিষয়টি জানেন। তারপরও কেন তারা আসেননি, বোধগম্য নয়। এ সময় আদালতে ছিলেন ঢাকা বারের সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান। তিনি খালেদা জিয়ার আইনজীবী না হলেও বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন বলে জানান। কোনো আইনজীবীকে দেখতে না পেয়ে তিনি খালেদার সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, আমি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে এসেছি। খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা করেন এমন কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হননি। প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী কারাগারে আদালত বসবেন। অথচ এ সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন বা গেজেট তার আইনজীবীরা পাননি। এখানে একটি ইনফরমেশন গ্যাপ রয়েছে। কারণ মামলাটির বিচার হচ্ছিল ঢাকা আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত আদালতে। এটি স্থানান্তরের তথ্য হয়তো আইনজীবীরা জানেন না। তারা হয়তো পূর্বতন জায়গায়ই অপেক্ষা করছেন। আমাদের মোবাইল ফোন গেটে রেখে দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৯টা থেকে মোবাইল ফোন করতে পারছি না। তাই আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না।

১২ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ : বিবাদী পক্ষের আইনজীবী না থাকায় বিচারকাজ চালানো অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন বিচারক। এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, দেশের সব মানুষ জানে আদালত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। মিডিয়ায় নিউজ হয়েছে। স্ক্রল যাচ্ছে। সানাউল্লাহ মিয়ার কাছে ব্যক্তিগতভাবে প্রজ্ঞাপনের কপি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অথচ তারা জানেন না এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। জবাবে অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা বলেন, আদালত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পূর্বতন আদালতে এটি ঘোষণা দিতে হবে। প্রজ্ঞাপনটি যথাযথভাবে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের জানানো হয়নি। এ পর্যায়ে তিনি সার্বিক বিবেচনায় যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় নতুন তারিখ ধার্য করার অনুরোধ জানান। এ সময় আদালত এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি আগামী ১২ ও ১৩ তারিখ ধার্য করেন। আবেদন না করলেও সে পর্যন্ত খালেদা জিয়া এবং আরো দুই আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়।

এ সময় খালেদা জিয়া আদালতে বলেন, আমার আইনজীবীরা আজ আসতে পারেননি। মোহাম্মদ আলী, রেজাক খান কেউ নেই। এ অবস্থায় কিসের বিচার কার্যক্রম চলবে? তিনি বলেন, এখানে কোনো ন্যায়বিচার নেই। প্রসিকিউশনের ইচ্ছায় সব হয়। যেমন ইচ্ছে রায় দিয়ে দিন। আমার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আমি বার বার আসতে পারব না। আমি কতটা অসুস্থ তা রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে। এ সময় বিচারক মোশাররফ হোসেন কাজলের কাছে তার মেডিকেল রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চান। কাজল বলেন, তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা আমরা জানি না। মেডিকেল রিপোর্ট আমি দেখিনি। খালেদা জিয়া তখন বলেন, রিপোর্ট এখানেই আছে। কারাগারেই আছে। খালেদা বলেন, আমি অসুস্থ। দাঁড়াতে পারি না। এ কথা শুনে বিচারক মো. আক্তারুজ্জামান ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম মুলতবি করে আদালত ত্যাগ করেন। এরপর হুইল চেয়ারে করেই খালেদা জিয়াকে কারাগারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ক্ষুব্ধস্বরে তিনি বলেন, এ আদালত সাজানো হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। অথচ আদালত পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন করা হয় গতকাল বিকেলে। এটি আমার আইনজীবীরা জানেন না। আমিও জানি না। সুতরাং এখানে ন্যায়বিচার নেই। আদালত যা খুশি রায় দিক। বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের খবরের প্রতিবেদক খালেদার কাছে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। দাঁড়াতে পারি না। ডান পা সোজা করে রাখতে হয়। ভাঁজ করতে গেলেই পেইন হয়। পা ফুলে যায়। সাদা চাদরের ভেতর থেকে বাঁ হাত বের করে দেখিয়ে বলেন, হাতটা নাড়াতে পারি না। শরীর কাঁপে। মেডিকেল রিপোর্ট আছে। ওটা দেখলেই আদালত বুঝতে পারতেন কী অবস্থায় আছি আমি।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads