• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
তিন ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তাপ

উত্তপ্ত রাজনৈতিক ময়দান

প্রতীকী ছবি

রাজনীতি

তিন ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তাপ

কারাগারে আদালত, অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও ইভিএম ইস্যুতে চলছে বিতর্ক

  • মাহমুদ আল ফয়সাল
  • প্রকাশিত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই উত্তাপ ছড়িয়েছে। তিনটি ইস্যুতে নতুন করে এই উত্তাপ, যা রাজনীতিতে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা। ইভিএম, খালেদা জিয়ার বিচারে কারাগারে আদালত বসানো ও অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা- এই তিন ইস্যুতে চলছে বিস্তর বিতর্ক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরপাক খাচ্ছে। এখনো স্পষ্ট নয়, পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে। তারা মনে করেন, এ অবস্থায় সরকার, সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি। না হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।

নির্বাচন সামনে রেখে নানামুখী তৎপরতার মধ্যে হঠাৎ এই উত্তাপ সৃষ্টিকে ‘হুইল পুল’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিরাজমান পরিস্থিতি ঘুরছে তো ঘুরছেই (‘হুইল পুল’র মতো); কিন্তু কোনো পথের দিশা দিচ্ছে না; ঘূর্ণায়মান এ রাজনীতি গন্তব্যে টার্ন করছে না। ফলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা অবশ্যই ভাবার বিষয়। তবে পরিস্থিতি ভালো একটি নির্বাচনের দিকে গেলে এত কথা কিংবা বিতর্ক হতো না। আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেছেন, সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা থাকার কথা, বাস্তবে তা নেই। বিএনপির মতো বড় দলকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হলে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। তারা দুজনই মনে করেন, ইভিএম ব্যবহার, অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এবং কারাগারে আদালত বসানো রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ করেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ‘ইভিএম ব্যবহারের’ পক্ষে মত দেন। এমনকি কমিশনের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত হয় আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের। বিরোধী দলগুলো তো বটেই, ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিও এর বিরোধিতা করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিইসি সিদ্ধান্ত থেকে পিছুহটার ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না।

অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান মনে করেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হঠাৎ করে ইভিএম প্রয়োগের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শতভাগ গ্যারান্টি নেই। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র আওয়ামী লীগ এর পক্ষে; বাকিরা বিপক্ষে। এমন পরিস্থিতিতে ইভিএম প্রয়োগে সুষ্ঠু তো নয়ই, বরং নির্বাচনে কারচুপির সম্ভাবনা নিয়ে জনমনে সন্দেহের উদ্রেক করেছে। আবার অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ইভিএম নিয়ে সিইসির ভূমিকা ও কমিশনের আপত্তি উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ দেখে অনেকে মনে করছেন, তারা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এটা মোটেও কাম্য ছিল না।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা : বিধি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে। কিন্তু হঠাৎ করেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বুধবার সাংবাদিকদের বললেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকার ও আওয়ামী লীগকে বিব্রত করেছে। প্রতিক্রিয়ায় সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, তারিখ বলে অর্থমন্ত্রী ঠিক করেননি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, তিনি ভুল করেছেন। নির্বাচনের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ হলেও তা জানানোর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ নয়। তারাই বলবে নির্বাচন কবে হবে। এটা জানানোর দায়িত্ব সরকার কিংবা কোনো মন্ত্রী বা দলের কোনো নেতার নয়। 

অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও আগামী ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রীর ‘বেফাঁস’ মন্তব্য সরকার, আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করেছে। তিনি বলেন, এ বক্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক ‘ফায়দা’ নিতে চাইবে বিরোধী পক্ষ। নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে- তাদের সেই অভিযোগের পক্ষে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যকে তারা জুড়ে দেবে। ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, এখতিয়ার না থাকলেও উনি তো (অর্থমন্ত্রী) অনেক কিছুই বলেন। তবে এবারের বক্তব্যে সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও বিব্রত হয়েছে।

কারাগারে আদালত স্থানান্তর : হঠাৎ করেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা থেকে নাজিমউদ্দিন রোডে পরিত্যক্ত পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে বসানো হয়। পরিপত্র জারি করে আদালত স্থানান্তর নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে। বুধবার সেই বিশেষ আদালত যথারীতি বসেও। খালেদা জিয়াকে সেখানে হাজিরও করা হয়। তবে তার আইনজীবীরা সেখানে যাননি। তারা ওই আদালতে যাবেন না বলেও ঘোষণা করেছেন। এমনকি কারাগারের ভেতরে আদালত বসানো নিয়ে সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্নও তারা তুলেছেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুদকের আইনজীবীরা কারাগারের ভেতরে আদালত বসানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। বিতর্ক এতদূর গড়িয়েছে যে, খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে কথা বলেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বলেছেন, কারাগারে আদালত বসিয়ে বিচার করার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ই প্রথম কারাগারে আদালত বসিয়ে কর্নেল তাহেরের বিচার করা হয়েছিল। সেই বিচারে তাহেরের ফাঁসি হয়েছিল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার বিচারে কোনো রাজনীতি নেই। কোনো প্রতিহিংসা নেই। তার শারীরিক অসুস্থতা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই কারাগারে আদালত বসানো হয়েছে। 

ড. তারেক শামসুর রেহমান মনে করেন, কারাগারের ভেতরে আদালত বসানোর বিষয়টি অতীতে হয়েছে সত্য; তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মামলার বিচার প্রকাশ্যে হলে ভালো হতো; সবকিছু মানুষ জানতে পারত। তিনি বলেন, বিএনপিকে চাপে রাখতে কৌশলী এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার, যা রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে। আর অধ্যাপক আতাউর রহমান মনে করেন, রাজনীতি হচ্ছে কৌশলের মারপ্যাঁচ। সরকার চাইবে বিরোধীদের বেকায়দায় রাখতে; বিরোধীরাও চাইবে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে মোকাবেলা করে সামনে এগোতে। তারই অংশ হিসেবে কারাগারের ভেতরে আদালত স্থানান্তর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads