• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
যৌথ ঘোষণায় ৫ দাবি ৯ লক্ষ্য

শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তফ্রন্ট জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ড. কামাল হোসেন ও ডা. বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট এই বৃহত্তর ঐক্যের ঘোষণা

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সংবাদ সম্মেলন

যৌথ ঘোষণায় ৫ দাবি ৯ লক্ষ্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও নাগরিক সমাজকে সুসংগঠিত করে দাবি আদায়ে অহিংস গণআন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। গতকাল শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তফ্রন্ট জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ড. কামাল হোসেন ও ডা. বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট এই বৃহত্তর ঐক্যের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা জাতীয় শহীদ মিনারে দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে তাদের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। সংগঠনটি তাদের ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছে।

দাবিগুলো হলো- (১) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন। নির্বাচনকালীন সরকারে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারবেন না। (২) অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। (৩) কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না। (৪) নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে ভোটের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। এবং (৫) নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে।

লক্ষ্যগুলো হলো- (১) স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং একব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের লক্ষ্যে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর এবং সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ কমিশন গঠন করা।

(২) দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন এবং ইতোপূর্বে দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা।

(৩) দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা।

(৪) কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা।

(৫) জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।

(৬) রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

(৭) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক, সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।

(৮) ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’- এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(৯) বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার। দেশের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণের জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে ড. কামালের নেতৃত্বে নেতারা পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে হঠাৎ তা বন্ধ করে দেন এবং প্রেস ক্লাবে ফিরে তাদের ঐক্য প্রক্রিয়া ঘোষণা করেন। পরে আ স ম আবদুর রব অভিযোগ করেন, আমাদেরকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন আগামী বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে তারা শহীদ মিনার দখলে রাখতে না পারে।

সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। বি. চৌধুরী অসুস্থতার কারণে ছিলেন না। তার পক্ষে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক হাজির ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads