• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ক্যাম্পাসে সহাবস্থান চাইল ছাত্রদল

ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের বৈঠক শেষে ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের সঙ্গে কোলাকুলি করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী

ছবি - বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

আগামী মার্চে ডাকসু নির্বাচন

ক্যাম্পাসে সহাবস্থান চাইল ছাত্রদল

  • ঢাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দীর্ঘ ২৮ বছর পর দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের  ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকালে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.  আখতারুজ্জামান বলেছেন, আগামী বছরের মার্চ মাসে ডাকসু নির্বাচন হবে। এ ঘোষণার পর সাবেক নেতারা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

এর আগে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো সিনেট কক্ষে পরিবেশ পরিষদের সভা শুরু হয়। এতে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল, জাসদসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে উপাচার্য বলেন, নির্বাচন করার জন্য অনেকগুলো পর্যায় আছে। আজকের বৈঠকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হলো। আরো বৈঠক লাগতে পারে। কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রভোস্ট কমিটি, শৃঙ্খলা পরিষদ, সিন্ডিকেট থেকে একটি নির্দেশনা আগেই দেওয়া আছে। ২০১৯ সালের মার্চে নির্বাচন করার বিষয়টি টার্গেটে আছে। হলের প্রাধ্যক্ষরা ভোটার তালিকা তৈরির কাজ করছেন। আশা করি, অক্টোবরের মধ্যে একটি খসড়া করতে পারব। ভোটার তালিকা প্রণয়ন জটিল কাজ। এগুলো করতে পারলে আমরা অনেকটা এগিয়ে যাব। ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বৈঠকে ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে চমৎকার বক্তব্য এসেছে। নির্বাচনে কী কী করণীয় এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এরই আলোকে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারব। ছাত্রদল ক্যাম্পাসে আসতে পারবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলো মধুর ক্যান্টিনে আসবে, এ বিষয়ে প্রশাসনিক কোনো বাধা নেই।

ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি সঞ্জিৎ চন্দ্র দাস বলেন, আমরা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে বলিনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আমরা ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এর আগে তা আয়োজন করে তাহলে ছাত্রলীগ অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, যারা নিয়মিত ছাত্র, মাদকসেবী নয়, যাদের নামে কোনো মামলা নেই তারাই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, আমরা সহাবস্থানের জোর দাবি জানিয়েছি। আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। মেধার ভিত্তিতে আসন বণ্টন করতে হবে। তখনই সুষ্ঠু পরিবেশ আসবে।

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের পক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, আমরা বার বার ডাকসু নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানতে চেয়েছি। কিন্তু তারা জানায়নি। কেউ কেউ ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরের বিষয়ে ভাবছেন। আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি। অতএব জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরের বিষয় ঠিক নয়, দ্রুততম সময়ে আমরা তা চাই। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবীব বলেন, আমরা চাই নভেম্বরের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন হোক।

রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, প্রতিটি হলে ৩০ শতাংশের বেশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নেই। বাকিরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। আমরা মনে করি, সব সংগঠনেরই সহাবস্থান রয়েছে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তার সঙ্গে ছিলেন উপ-উপাচার্য নাসরিন আহমাদ ও আবদুস সামাদ, কোষাধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন, প্রক্টর গোলাম রব্বানী প্রমুখ। বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতারা রিকশায় করে সভাস্থলে আসেন। এর পর পরই ছাত্রদলের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি গাড়িতে করে সভাস্থলে উপস্থিত হন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি ও ছাত্রদল সভাপতি কোলাকুলি করেন। 

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা শুরু করে ডাকসু। ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে ডাকসু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা ছিলেন সামনের কাতারে। স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভোট হয়েছে মাত্র ছয় বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আর হয়নি। ছয় বছর আগের একটি রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি দেওয়া এক রায়ে হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কিন্তু সাত মাসেও তা দৃশ্যমান না হওয়ায় গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ পাঠান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার জবাব না পেয়ে গত বুধবার তিনি হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন উপাচার্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী সিনেটের ১০৪ সদস্যের মধ্যে ৫ জন থাকবেন ছাত্র প্রতিনিধি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে ছাত্র স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা পালন করতেন এই ছাত্র প্রতিনিধিরাই। ডাকসু নির্বাচন নেই বলে এই নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিও নেই। ফলে ছাত্রদের অনেক দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অজানাই থেকে যাচ্ছে।

১৯৯০ সালের ৬ জুনের নির্বাচনের এক বছর পর ১৯৯১ সালের ১২ জুন তখনকার ভিসি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তখন ছাত্রনেতারা ছাত্রত্ব ঠিক এবং প্রার্থী হওয়ার জন্য বিশেষ ভর্তির দাবি জানান। এ নিয়ে সৃষ্ট সহিংসতায় তখন নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যায়। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদও ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করেন। কিন্তু পরিবেশ না থাকার অভিযোগ এনে সে সময় বিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বাধায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। একইভাবে ১৯৯৫ সালেও ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে নির্বাচন হয়নি। ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী ভিসির দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার ডাকসু নির্বাচনের সময়সীমার কথা জানান। কিন্তু তফসিল ঘোষণায় ব্যর্থ হন। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু হলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ছাত্রদল নেতা আরিফ হোসেন তাজ খুন হন। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৮ সালের ২৩ মে রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে তখনকার মেয়াদোত্তীর্ণ ডাকসু ভেঙে দেওয়া এবং পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করা হয়। সে অনুযায়ী ২৭ মে সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু ভেঙে দেওয়া হয়। এর পরও অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী দু’বার নির্বাচনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের অসহযোগিতার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি বলে ভিসির অভিযোগ। সে সময় ডাকসুর জন্য গঠিত নতুন (সংশোধিত) গঠনতন্ত্রে ডাকসু ভাঙার চার মাসের মধ্যে পুনরায় নির্বাচনের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং হল সংসদ নির্বাচনের স্বপ্ন ছাত্রদের অধরাই থেকে গেছে। ২০০৫ সালের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার ভিসি অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ ওই বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণার পর ছাত্র সংগঠনগুলো নড়েচড়ে বসে। ছাত্রদল নির্বাচনের দাবিতে একাধিকবার মিছিল সমাবেশ এবং ভিসির কাছে স্মারকলিপিও দেয়। তবে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো এগিয়ে আসেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরও ডাকসু নির্বাচনের জোর দাবি ওঠে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads