• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
পিস্তলের অাশায় কামান চায় শরিকরা

আ. লীগ-বিএনপির লোগো

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

পিস্তলের অাশায় কামান চায় শরিকরা

আ. লীগ-বিএনপির বিস্ময়

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষদিকে হবে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন। এজন্য নির্বাচন কমিশনসহ সব পক্ষে চলছে জোর প্রস্তুতি। ভোটের আগাম মাঠে জোটের রাজনীতি এখন সরগরম। ভেতরে-ভেতরে আসন বণ্টন নিয়ে চলছে দেন-দরবার। জোটবদ্ধ শরিক ছাড়া বাইরের দলগুলোরও টার্গেট আসন বাগানো। তবে এ নিয়ে ছোট দল ও শরিকদের আবদারে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চোখ ছানাবড়া। কারণ এসব দলের অনেকেরই নিবন্ধন নেই। কারো কারো সারা দেশে দলীয় কার্যালয়-কমিটি কিছুই নেই। এমনও আছে, দলের অন্য নেতা তো দূরের কথা, দলীয় প্রধান নিজ দলের প্রতীক নিয়ে জামানত বাঁচাতে পারবেন কি না তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। তারপরও তারাই চাইছে নৌকা বা ধানের শীষ প্রতীকসহ ডজন ডজন আসন। বিষয়টা দাঁড়িয়েছে যেন পিস্তলের আশায় কামান চেয়ে বসার মতো। 

দুই জোটের একাধিক শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের খবরকে জানান, শরিকদের চাওয়া দেখে তারা হতভম্ব। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা চায় ১৯৪ আসন। আর মিত্রদের দাবি পূরণ করতে গেলে ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির আসন থাকেই না; লাগে আরো চারটি সংসদীয় আসন। তবে জোট নেতারা বলছেন, চাওয়ার পাল্লা যা-ই হোক না কেন- তা চূড়ান্ত হবে তফসিলের পর। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী ২০ দলীয় জোটের আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া, না নেওয়ার ওপর নির্ভর করবে চূড়ান্ত আসন বণ্টন।

শরিকদের দাবি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ও ‘৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জোট রাজনীতির গুরুত্ব বেড়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন এমনই যে, কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। তবে তিনি মনে করেন, শরিকদের সন্তুষ্ট করেই ভোটের মাঠে নামবে প্রধান দুই দল। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলেন, দাবি না করলে তো পাওয়া যায় না। বিষয়টা পিস্তলের আশায় কামান চাওয়ার মতো। তবে জনসমর্থনসহ সংগঠনের বিস্তৃতির বিষয়টি মাথায় রেখেই আসন দাবি করা উচিত। নয় তো বিস্মিত বা বিব্রত হওয়ার কথাটি আসবেই। এখন যে জোটবদ্ধ রাজনীতি চলছে, সেখানে ভোটের মাঠে ছোট দলগুলোকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করেন তিনি।

১৪ দলীয় জোট

নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তিন নেতা শরিকদের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (বাম দলগুলো), প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম (ছোট দলগুলো) এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ (ইসলামী দলগুলো)। দুই কৌশল মাথায় রেখে ছক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এক কৌশল আর বর্জন করলে দ্বিতীয়টি। তবে শরিকদের জন্য ৬০-৭০টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

যদিও আসন বণ্টন প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। তবে তাদের ঘনিষ্ঠরা  জানান, শরিকদের নিজ নিজ দলীয় কৌশলে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। প্রচার চালানোরও অনুমতি আছে। তফসিলের পর জোটের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে কোন আসনে কোন দলের প্রার্থী থাকবেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টি এবং ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগের কাছে ১৯৪ আসন চায়। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি ৭০, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু-শিরিন) ৩০, জাসদ (আম্বিয়া-প্রধান) ১৫, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১৫, ন্যাপ ২০, বাসদ ৬, গণতন্ত্রী পার্টি ১০, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ২, সাম্যবাদী দল ৪, গণআজাদী লীগ ১০, তরিকত ফেডারেশন ১০, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ২টি আসন চায়। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টির ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ।

সংসদের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ১৮ জন নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৭, জাসদের দুই অংশ মিলে ৬, তরিকত ফেডারেশনের ২, জাতীয় পার্টির (জেপি) ২  এবং ন্যাপের একজন। তাদের বেশিরভাগই জোটপ্রধান আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন। আর এরশাদের জাতীয় পার্টির ৩৪ জন সরাসরি নির্বাচিত হন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, শরিক হিসেবে তারা আসন দাবি করতেই পারে। আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আকাশচুম্বী চাইলে তো কিছুটা বিব্রত হতেই হয়।

২০ দলীয় জোট

দুই দশক আগে ২০ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। ‘আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন’- এই তিন ইস্যুতে একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার তাদের। তবে ত্যাগ বা ভূমিকার ভিত্তিতে নির্বাচনী ময়দানে সবাই তাদের হিস্যা আদায় করতে চায়। একাদশ সংসদের ৩০০ আসনের ১৫৪টিরই বায়না ধরেছে ১৯ শরিক। বিএনপির তরফ থেকে অবশ্য এখনো কাউকে হতাশ করা হয়নি। ফয়সালার জন্য তফসিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি জোটবদ্ধ হতে যুক্তফ্রন্ট শর্ত দিয়েছে ১৫০ আসনের। সব মিলিয়ে শরিকদের দাবি মেটাতে প্রয়োজন ৩০৪ আসন। এদিকে বিএনপির সঙ্গে ২০ বছর ধরে পথচলার অনেক সঙ্গী এখন হাঁটছে ‘আপন পথে’। বিকল্প প্রস্তুতি হিসেবে নিজ দল ও প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থীর খসড়া করছে তারা। এতে বিএনপি ছাড়াই ১৯ দলের প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩০।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিবন্ধন নিয়ে আইনি প্যাঁচে পড়া জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ১০০ আসনে। জোটের কাছে দলটি চায় ৭০টি। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির দাবি ২টি, প্রস্তুতি নিচ্ছে ৩টিতে। ইসলামী ঐক্যজোট ২টি আসনে প্রস্তুতি নিলেও ১টিতে ছাড় পেলেই খুশি। খেলাফত মজলিস ৬০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করেছে। তারা জোটের কাছে চায় ১০টি। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ৩০ আসনে প্রার্থী ঠিক করেছে, তবে জোটের কাছে চায় ১২টি। জাগপার ১২ প্রার্থী আছে, তবে চায় ৩টি। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ৪০টি আসনে প্রার্থীর খসড়া করেছে, জোটের কাছে চায় ৩৬টি; জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১০টি আসনে প্রার্থী ঠিক করেছে, তবে ছাড় চায় ৮টিতে। এনপিপি চায় ৫টি আসন; বাংলাদেশ ন্যাপ ৫০ আসনে প্রার্থী ঠিক করলেও ৩টি পেলেই খুশি। জাতীয় পার্টি (জাফর) ১০টি আসনে দলীয় প্রার্থী রেখেছে, তবে ছাড় দেবে অর্ধেক। বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রস্তুতি ৩টিতে, ছাড় দেবে ১টি। এ ছাড়া মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, ইসলামিক পার্টি,  ডেমোক্র্যাটিক লীগ, সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ১টি করে আসনে প্রার্থী দিতে চায়। এ প্রসঙ্গে ২০ দলের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, মিত্ররা তো চাইবেই। তাদের এমন চাওয়া আমাদের বিস্মিত করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads