• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
নতুন উদ্দীপনায় সরকারবিরোধীরা

দৃশ্যপট বদলে দিচ্ছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

নতুন উদ্দীপনায় সরকারবিরোধীরা

এক ছাতার নিচে জড়ো হচ্ছে ডান ও বামপন্থিরা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজনীতির দৃশ্যপট বদলে দিচ্ছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। এক ছাতার নিচে জড়ো হচ্ছে ডান ও বামপন্থিরা। এতে করে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে সরকারবিরোধী শিবিরে। এর সঙ্গে একযুগ আগে হারানো রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখাও শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এই রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে আরো দল যুক্ত হবে। গত পাঁচ বছর আন্দোলন করে যে দাবি আদায় করা যায়নি, আগামীতে তা সফল হবে বলে আশাবাদী তারা। একযুগ আগে ক্ষমতা হারিয়েছে বিএনপি। এরপর থেকে খালেদা জিয়াসহ দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী মামলার জালে জড়িয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া। প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন দলের পরবর্তী কাণ্ডারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই মধ্যে জিয়া পরিবারকে সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, গুম, খুন-অপহরণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ২০০ নেতাকর্মী। মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ। আসামির সংখ্যা অসংখ্য। এসবের বিরুদ্ধে রাজপথে  আন্দোলনের চেষ্টা করেছে বিএনপি। কিন্তু হালে পানি পাচ্ছে না। কর্মসূচি দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে রাস্তায় নামতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী একটি বৃহৎ জাতীয় ঐক্য প্রত্যাশা ছিল ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়ার।

অবশেষে সেই জাতীয় ঐক্য দানা বাঁধছে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গত শনিবার ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ নামে তা আত্মপ্রকাশ করেছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানিয়ে সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে এই জোট। এরপর থেকে শুরু হবে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। এ ঘোষণার পর থেকে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাড়া জেগেছে। যদিও ক্ষমতাসীন ১৪ দলের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাই এটিকে ষড়যন্ত্র ও তামাশা হিসেবে দেখছেন।

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জাতীয় ঐক্য সরকারের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে না। আমরা আশা করছি, মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারব।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা আহম্মদ আবদুল কাদের বলেন, ঐক্যের সূচনা শুভ হিসেবে দেখছি। দল-মত নির্বিশেষে সবাই সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থে কাজ করলে ভালো কিছু আশা করা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার বাহ্যিক দৃষ্টিতে এই ঐক্যকে তামাশা বা চক্রান্ত বললেও ভেতরে নাড়া খেয়েছে। তাদের বুলি এখন হ-য-ব-র-ল’তে পরিণত হয়েছে। কারণ এই ঐক্যই তাদের বিদায় ঘটাবে। সেটা নির্বাচন বা আন্দোলন উভয় ক্ষেত্রেই। জাতীয় ঐক্যের আহ্বান আমাদের দলীয় প্রধানের, তাই আমরা এতে খুশি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের শুভযাত্রায় আমরা অত্যন্ত খুশি। সরকারের জুলুম-নির্যাতন থেকে বাঁচতে হলে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের এক হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সফল করতে বিএনপির সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। 

দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মতে, জাতির প্রয়োজনে জাতীয় নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এতদিন যে দাবিগুলো বিএনপির দলীয় বলে রঙ দেওয়া হতো, এখন তা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। জেল-জুলম, মামলা-নির্যাতন, হুলিয়ার বিষয়ে সারা দেশের প্রায় কোটি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে। তিনি বলেন, ’৭১-এ মুসলিম লীগ ছাড়া ঐক্য হয়েছিল, ’৯০-এ জাতীয় পার্টি ছাড়া ঐক্য হয়েছে। জাতির প্রয়োজনে এবারো আওয়ামী লীগ ছাড়া বৃহত্তর ঐক্য হচ্ছে। বরং এতে সাড়া না দিয়ে ক্ষমতাসীনরা ভুল করছে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল ছাড়া বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এই ঐক্যমঞ্চে আছে। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় এই মঞ্চ থেকে যে ডাক আসবে পুরো জাতি তাতে সাড়া দেবে বলে আমি মনে করি। একে কেন্দ্র করে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads