• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
এরশাদের দৌড়ঝাঁপ

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

এরশাদের দৌড়ঝাঁপ

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রচারে নেমেছেন দেশে, কৌশল নির্ধারণে যান ভিনদেশেও। সম্প্রতি সফর করেছেন দিল্লি। ফিরেছেন ফুরফুরে মেজাজে। আজ মঙ্গলবার যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় পার্টি। তাই আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই তাকে নিজেদের জোটে ভেড়াতে চেষ্টা করে। জোটের রাজনীতি, ভোটের মাঠে এবং সরকার গঠনে তুরুপের তাস হিসেবে বিবেচিত হয় জাপা।

জাপা সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুতি শুরু করেছে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নানা সমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের একক অবস্থান তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও রক্ষা করে চলছেন জাপা চেয়ারম্যান। দু’দিকে যোগাযোগ রক্ষা করতে দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা নাটক করেন এরশাদ। একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য দিয়ে তখনকার পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করেন। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বারিধারার বাসভবন থেকে তাকে সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) নিয়ে যায় র্যাব। ১০ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে সরাসরি শপথগ্রহণ করেন। ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর বারিধারার বাসায় চলে যান তিনি। সংরক্ষিত আসনের ছয় নারী সদস্যসহ বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য এখন ৪১ জন। এর মধ্যে একজন উপনির্বাচনে জয়ী। বর্তমান সরকারে একজন পূর্ণ মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন জাতীয় পার্টির।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০ আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। আর জাতীয় পার্টি ২৭ আসনে জয়লাভ করে। বিএনপি জয়লাভ করে ৩০টি আসনে। এই নির্বাচনের আগে ২০০৬ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনকে ঘিরে বড় দুটি দলই কাছে টেনেছিল জাপাকে। সেই সময় প্রথমে তারেক রহমান ও পরে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের সঙ্গে বৈঠক করেন এরশাদ। ওই বৈঠকের পরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এর তিন দিন পর পল্টনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের জনসভায় যোগ দেন। এরপরই আওয়ামী লীগ তাকে রাষ্ট্রপতি ও ক্ষমতায় এলে আনুপাতিক হারে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার চুক্তি করে। কিন্তু ওয়ান/ইলেভেন এলে সেই চুক্তি তামাদি হয়ে যায়। ২২ জানুয়ারি ২০০৭-এর নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সরে দাঁড়ায়। ওয়ান/ইলেভেনে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানকালেও বহালতবিয়তে থেকে যান এরশাদ। ঘোষণা দিয়ে বিশ্রামে যান। নানা নাটকীয়তার পর ২০০৮-এর ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোটের প্রধান শরিক হিসেবে আবির্ভূত হয় জাতীয় পার্টি। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৪৩টি আসন দেওয়া হলেও সেখান থেকে পরে ১৪টি আসনে আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীও রাখা হয়।

এবার নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই তৎপরতা বাড়াচ্ছেন এরশাদ। দলের প্রেসিডিয়াম সভা এবং যৌথসভাও করেছেন। আগামী ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে তার দল। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা, নগর-মহানগরে সভা-সমাবেশ করছেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সভা ছাড়াও ধর্মভিত্তিক বেশ কিছু দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছেন। নিজের মতো দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও মাঠে নামিয়েছেন। ইতোমধ্যে ডিজিটাল নির্বাচনী ক্যাম্পেইনও করেছে জাপা। আগামী নির্বাচনে দলটির প্রচারণার ধরন কেমন হবে তাও তুলে ধরা হয় ক্যাম্পেইনে। জাপা নেতাকর্মীদের দৃষ্টিতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এরশাদ। ওইদিন ৭টায় সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার পর সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আগামী একাদশ নির্বাচন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়। জাপা সূত্রের দাবি, পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একাদশ নির্বাচনে ১০০ আসন চেয়েছেন। সম্প্রতি রংপুরে এরশাদ নিজেও সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসনের তালিকা দিয়েছি। এর মধ্যে ৭০ আসন তো পেতে পারি। সেখানে আরো বলেন, তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন, এর মধ্যে ঢাকা-১৭ ও রংপুর-৩ রয়েছে।

অপরদিকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। ওই বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের কাছে ৪৬টি আসনে সংসদ সদস্য ও নির্বাচনের পর সরকার গঠন করলে তাতে ছয়জন পূর্ণ মন্ত্রী দাবি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাপার এক সংসদ সদস্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি কেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউ এককভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারবে না। আমরা যতই বলি না কেন এককভাবে নির্বাচন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসব- এটি রাজনৈতিক বক্তব্য।’ তিনি বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান ১৫১ আসন টার্গেট করে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু যেকোনো মূল্যে ১০০ আসনে জয়লাভ করতে চান। আর ১০০ কিংবা তার চেয়ে কম পেলেও আমাদের নেতৃত্বেই সরকার গঠন হবে।’

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ জানান, যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বদনাম রয়েছে সেখানে জাপার পক্ষ থেকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ নিশ্চিত বিজয় হবে এমন পরিকল্পনা থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে জাতীয় পার্টি। তবে এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের লক্ষ্য আগামীতে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। ইতোমধ্যে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads