• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিভক্তি

জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন

ছবি - বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিভক্তি

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর ২০১৮

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কাঙ্ক্ষিত ঐক্য অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার দশা। ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে গতকাল শনিবার এর যাত্রা শুরু হয়েছে বিভক্তি দিয়ে। এ অবস্থায় কতদূর যাবে নবগঠিত এই জোট সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে সব অঙ্গনে।

দুই দফা শর্ত, দফায় দফায় বৈঠক, চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করে কাছাকাছি এসেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিন সরে পড়েছে যুক্তফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে রেখে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার কোনো চক্রান্তের সঙ্গে থাকবে না তার দল। তবে তিনি মনেপ্রাণে চান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য হোক। রাজধানীর বারিধারায় ‘মায়াবী’ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। 

অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন,নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি এবং ১১ লক্ষ্য নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঘোষণা করা হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। তবে ঐক্যফ্রন্টের তরফ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে বি. চৌধুরীও এর সঙ্গে থাকবেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কারিগরদের একজন বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, সরকারবিরোধী কাঙ্ক্ষিত এই বৃহত্তর নতুন রাজনৈতিক জোটে বিভক্তির পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- নতুন জোটের নেতৃত্ব, ক্ষমতার আগাম বণ্টন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ইস্যু এবং পর্দার আড়াল থেকে সুবিধা পাওয়া।

ওই নেতার মতে দেশের বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দলের টার্গেট ছিল এই জোট। ক্ষমতাসীন দল চেয়েছিল এই ঐক্যে ফাটল ধরাতে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ একাধিক নেতা আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ঐক্যে ফাটল ধরবেই। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক এবং ঐক্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক দলের নেতা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সরকার এই ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের টার্গেট ছিল সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিকে একমঞ্চে আনা।  

এই ঐক্য প্রক্রিয়ার সূচনা বছরখানেক আগে। তবে তা ছিল পর্দার আড়ালে। চাওয়া-পাওয়ার তালিকা ধরে ডজনখানেক বৈঠক করে বিএনপি ৭ দফা, যুক্তফ্রন্ট ৭ দফা এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ৫ দফা দাবি জানায়। ঐক্যের রচয়িতা ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী ও আ স ম আবদুর রবের বাসায় এসব বৈঠক হয়। কখনো সরবে, কখনো নীরবে। কখনো পুলিশের বাধা, আবার কখনো বাসার বাইরে মিছিল-বিক্ষোভ দেখা গেছে।

জাতীয় ঐক্য গড়তে যুক্তফ্রন্টের তরফ থেকে কঠিন তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল- স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে বর্জন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, নির্বাচনে কোনো দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে না দেওয়া। এজন্য বিএনপির কাছে ১৫০টি আসন দাবি করে বিকল্পধারা। নেতৃত্ব পাওয়া ও আসন বণ্টনের বিষয়টি প্রকাশ না করলেও গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরী বলেছেন, তার দুটি দাবি স্পষ্ট- স্বাধীনতাবিরোধীদের বর্জন এবং ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ।

এদিকে বিকল্পধারার শর্তকে ঐক্য বিনষ্টের জন্য দায়ী করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, জোট হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে। এখানে তো জামায়াতের কাউকেই রাখা হয়নি। আর ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

গত শুক্রবার উত্তরায় আ স ম রবের বাসায় বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যের ১১ লক্ষ্য নিয়ে অভিন্ন কর্মসূচির খসড়া চূড়ান্ত করেন বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। এই খসড়ার চূড়ান্ত রূপ দিতে আজ শনিবার ড. কামাল হোসেনের বাসায় বি. চৌধুরীর সঙ্গে ফের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। বিকাল ৩টায় রাজধানীর বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন বি. চৌধুরী। কিন্তু ড. কামালের সাক্ষাৎ না পেয়ে ফিরে আসেন তিনি। এদিকে ড. কামাল হোসেন তার মতিঝিলের চেম্বারে বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। বি. চৌধুরীর দাবি এই বৈঠকের কথা জানেন না তিনি। সন্ধ্যায় তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ড. কামাল অসুস্থ থাকায় সেটি স্থানান্তর করা হয় উত্তরায় জাসদ সভাপতি আ স ম রবের বাসায়। কিন্তু গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বাসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রাখায় সে বৈঠকও স্থগিত করা হয়। তবে এর আগে রবের বাসায় তিন জোটের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য। সেখানে তারা পৃথক পৃথক মত দেন। পরে সেগুলোর একটা খসড়া করা হয়। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় বৈঠকে বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৫ দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন নেতারা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি তাদের ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads