• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ

শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের ঘোষণা দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর ২০১৮

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে এই বৃহৎ ঐক্যের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ ৭ দফা দাবিতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘোষণা করেন ড. কামাল হোসেন। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ড. কামাল হোসেন বলেন, গত তিন দিনের টানা বৈঠক শেষে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছি। জাতীয় ঐক্যের ডাক কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, এটা জাতীয় স্বার্থে। কোটি কোটি জনগণের পক্ষ থেকে এই ডাক। এটা কোটি মানুষের উদ্যোগ। এই জোটে যুক্তফ্রন্টের দুই শরিক দলও আছে। আমি অন্যদেরও আশা করি এই ঐক্যে।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। নতুন আঙ্গিকে লড়াই শুরু হয়েছে। এ লড়াইয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রের অধিকারগুলো আদায় করেই ঘরে ফিরব। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে আজ সিন্দবাদের ভূত চেপে বসেছে। দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ না হলে এই লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যাবে না। এ সময় তিনি ৭ দফা দাবি ঘোষণা করেন।

৭ দফায় যা রয়েছে : ১. সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা। ২. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করা। ৩. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। ৪. শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল। ৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন। ৬. দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা। ৭. তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়া।

১১ লক্ষ্য : ১. মুক্তিসংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন। ২. ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন। ৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত। ৪. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা। ৫. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি। ৬. সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তার বিধান। ৭. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন। ৮. রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, নিম্নআয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন-মান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি কাঠামো নির্ধারণ। ৯. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া। ১০. ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ। ১১. বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ফ্রন্টের নেতাদের বৈঠক : সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনের আগে বেলা ৩টার দিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে বৈঠকে বসেন নেতারা। কামাল হোসেন ছাড়াও বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন।

ফিরে গেলেন বি. চৌধুরী : জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না আসার মধ্যেই ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে গতকাল শনিবার বিকালে কামাল হোসেনের বাড়িতে একসঙ্গে বসার কথা ছিল যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপি নেতাদের। বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় যান ছেলে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীকে নিয়ে। কিন্তু বাড়ির দরজা বন্ধ দেখে গাড়িতেই কিছুক্ষণ বসে থেকে ফিরে যান তারা।

মাহী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাসায় দাওয়াত দিয়ে গেট খোলার কেউ নেই! একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ডেকে এ রকম ব্যবহার কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। আমরা মনে করি, এই ঐক্যটা না হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে, এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।

এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠক শেষে মান্না সাংবাদিকদের জানান, রূপরেখা এবং কর্মসূচি চূড়ান্তের পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনে দুই মাস ধরে কাজ চলছিল। বিএনপি ও অন্য দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি লিয়াজোঁ কমিটি গত ১০ দিনে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। গত ৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দেন নেতারা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads