• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
১৪ দল-ঐক্যফ্রন্ট সংলাপ আজ

গণভবন

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

সবার দৃষ্টি গণভবনে

১৪ দল-ঐক্যফ্রন্ট সংলাপ আজ

  • রেজাউল করিম লাবলু
  • প্রকাশিত ০১ নভেম্বর ২০১৮

বহুল প্রতীক্ষিত সংলাপ আজ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। আশা-নিরাশার দোলাচলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সংলাপের দিকে আজ নজর থাকবে দেশবাসীর।

এদিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে সংবিধানসম্মত যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ফ্রন্টের মুখপাত্র ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সংলাপের মূল ভিত্তি হবে ফ্রন্টের সাত দফা। এই সাত দফা দাবি সংবিধানের আলোকেই সমাধান সম্ভব। সংলাপে দেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন তার সমাধান দেখিয়ে দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্রন্টের এক নেতা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর মতো আইনজীবীরা রয়েছেন। তারা সংবিধানের আলোকে সাত দফা সমাধানের বিষয়টি তুলে ধরবেন। এ ছাড়া ফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মুক্তির বিষয়টি ফ্রন্টের নেতারা সংলাপে তুলে ধরতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ফ্রন্টের নেতা ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সংলাপে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য তুলে ধরা হবে, তা চূড়ান্ত করতে আগামীকাল (আজ) বিকালে বৈঠক করবেন ফ্রন্টের নেতারা। ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরবেন। সবার বক্তব্যের সারাংশ করে তা সংলাপে তুলে ধরা হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সব দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আন্তরিক। শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট নয়, অন্য দলগুলোর সঙ্গেও তিনি আলোচনায় বসতে চান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের সিদ্ধান্ত দেশের অধিকাংশ মানুষ পছন্দ করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগকে বিশ্ব সম্প্রদায়ও স্বাগত জানিয়েছেন। খোলা মন নিয়ে সবাই আলোচনায় এগিয়ে আসলে যে কোন সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপটা তো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপেই কাভার হয়ে যাবে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যায় তাহলে তো বেশি সময় পাওয়া যাবে না।

 

সংলাপ নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচল চলছে। সংলাপের আগেই সংলাপের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফসান চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকার ও ফ্রন্টের সংলাপের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে জাতীয় সংলাপ। আশা থাকবে, সংলাপের মাধ্যমে বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমে আসবে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য বাড়বে। এমনটা হলে জনমনে স্বস্তি আসবে।

তিনি বলেন, ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল সংসদ ভবনে সংলাপে বসেছিলেন। সেই সংলাপ সফল হয়নি। তাই বলা যায়, সংলাপ সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

সংলাপে বসার এক দিন আগে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সংলাপে সাত দফা দাবির অন্যতম দাবি কারাবন্দি খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির বিষয়সহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া গায়েবি মামলা ও মামলার ভিত্তিতে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি তুলে ধরা হবে। একদিকে সরকার সংলাপের কথা বলবে অন্যদিকে কর্মসূচির অনুমতি দিয়ে সেখান থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হবে, তা চলবে না। সংলাপ ব্যর্থ হলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে, স্বৈরাচার আন্দোলনে সফল হয়েছে। জনতার এই ঐক্য ভবিষ্যতেও বিজয় আনবে। ঐক্যফ্রন্ট এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের ফসল ঘরে তুলবেই, ইনশা আল্লাহ। একই অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাজা বাড়িয়ে সরকার ৭ দফার এক দফা লঙ্ঘন করেছে। তাই সংলাপ নিয়ে এখনো তারা আশাবাদী নন।

ইতোমধ্যে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদলের নামের তালিকা গণভবনে পাঠানো হয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সংলাপে সরকারের প্রতিনিধিদলে কারা থাকবেন, তার তালিকা পাঠিয়েছেন গণমাধ্যমে। সংলাপে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে থাকবেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ২৩ নেতা।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাসদের আরেক অংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল সংলাপে অংশ নেবেন।

অন্যদিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে সংলাপে উপস্থিত থাকবেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেবেন। এ ছাড়া বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস। নাগরিক ঐক্য থেকে থাকবেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও এসএম আকরাম। গণফোরাম থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরী। জেএসডি থেকে আ স ম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, তানিয়া রব। ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, আ ব ম মোস্তফা আমিন ও স্বতন্ত্র হিসেবে থাকবেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সংলাপের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ : সংলাপের মাধ্যমে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিবিসিকে বলেছেন, সরকার চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন বিএনপির আইনজীবীরা করবেন। শুনানিতে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে আপত্তি না তুললেই সম্ভব।

উল্লেখ্য, গত রোববার সাত দফা দাবি নিয়ে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। চিঠিতে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাকে একটি ‘সঙ্কট’ উল্লেখ করে তা থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণার কথা বলেন কামাল। পরের দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংলাপে বসার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসার ঘোষণা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads