• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সাত দফা না মানলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না : ফখরুল

রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় গতকাল বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

সাত দফা না মানলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না : ফখরুল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ নভেম্বর ২০১৮

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি না মানা হলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি আদায় করতে হবে। কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে, দেশের সব রাজনৈতিক দলের সমান অধিকার নিশ্চিত এবং গ্রহণযোগ্য তফসিল হলেই কেবল নির্বাচন হবে। গতকাল শুক্রবার রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিকে অসুস্থতার কারণে রাজশাহীর সমাবেশে যোগ দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তবে বক্তব্য রেখেছেন তিনি। সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন। প্রধান দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার আগে তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘তড়িঘড়ি’ তফসিল ঘোষণার প্রক্রিয়া ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে’।

সকাল ৯টা থেকে মাদরাসা মাঠটির পাশে জেএসসি ও জেডিসির পরীক্ষা ছিল। এই কারণে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সমাবেশস্থলে পুলিশ কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। এ কারণে সমাবেশের মঞ্চে দুপুর ১টা পর্যন্ত তেমন কোনো নেতাকর্মীর ভিড় চোখে পড়েনি। দুপুর ১টার পর থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন ঐক্যফ্রন্টের শরিক বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তার মাদরাসা ময়দানে সমাবেশে যোগ দেন। সোয়া ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের কাজ শুরু হয়। মাদরাসা মাঠে নির্মিত পূর্বমুখী সভামঞ্চের ব্যানারে ফ্রন্টের সাত দফা দাবির বিষয়টি লেখা ছিল। মঞ্চের দুই পাশে মাঠের দেয়ালের কাছে দেখা যায় জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত বেশ কিছু ডিজিটাল ব্যানার। সমাবেশকে সামনে রেখে মাঠের চারপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমাবেশে নেতাকর্মীদের অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মিজানুর রহমান মিনু। এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এবং বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে শোডাউন করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।

বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে সমাবেশে ছুটে আসা নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে যে ধরনের বিচার হয়নি খালেদা জিয়াকে তেমন বিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। জেলখানায় আটকে ছোট্ট ঘরে তার বিচার করা হচ্ছে।

ঐক্যফ্রন্টের এই মুখপাত্র বলেন, সরকার পুলিশ দিয়ে জনগণকে আটকে রাখতে চায়। কিন্তু খালেদা জিয়া কোনো হিংসা চায় না। তাই তার নির্দেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তৈরি করে সংলাপে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি। ক্ষমতাসীন দল কোনো আশ্বাস দেয়নি।

সাত দফা না মানলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না- রব : ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেছেন, সাত দফা দাবি না মানলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ফ্রন্টের নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সে জন্য তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফ্রন্টের দাবি মেনে নেওয়া না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।

জনগণের জোয়ার বাধা দিয়ে রাখা যাবে না- মোশাররফ : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছেন, সমাবেশে নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দিয়েছেন। কিন্তু জনগণের জোয়ার বাধা দিয়ে রাখা যায় না। আওয়ামী লীগের সময় শেষ। জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান। যদি না দাঁড়ান, তাহলে জনগণ একদিন আপনাদের কাছে তার কৈফিয়ত দাবি করবে।

দেশের গণতন্ত্র নিখোঁজ- গয়েশ্বর : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র আজ নিখোঁজ। তাই দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রেখে আর এই ইসির অধীনে নির্বাচনে গেলে শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়া আজীবন জেলখানায় থাকবেন। তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন না। তাই খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।

বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার বিভেদ ঘোচানো হবে- কাদের সিদ্দিকী : সমাবেশে কৃষক শ্রমিক লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি বিএনপির সমাবেশে যোগ দেননি। ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে এসেছেন। তাই ফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার বিভেদ ঘোচানো হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া। তাই তাকে বন্দি করে রাখা যাবে না।

সব ফাঁদ ছিন্নভিন্ন করা হবে- মান্না : নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, নির্বাচন পিছিয়ে দিন। এমন ফাঁদ পেতেছেন যেন ফ্রন্টের নেতারা নির্বাচন করতে না পারে। কিন্তু ফ্রন্টের নেতারা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ফাঁদ ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে। একতরফা নির্বাচন কোনোভাবে হতে দেব না।

সরকার পালাবার পথ খুঁজছে- জাফরুল্লাহ : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের ভিত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় সুনিশ্চিত। এ সরকারের ভিত কী। তাদের ভিত হলো পুলিশ, ঘুষ, অনাচার ও দুর্নীতি, গায়েবি মামলা, গ্রেফতার।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর এ্যানি, নির্বাহী সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাবেক এমপি হারুনুর রশিদসহ জাতীয় ও স্থানীয় নেতারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads