• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ধোঁয়াশা

লোগে বাংলাদেশ সরকার

রাজনীতি

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ধোঁয়াশা

পদত্যাগী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীরা কোন সরকারের অধীনে বহাল

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনকালীন সরকার কবে হবে, কীভাবে হবে এ নিয়ে জনমনে সৃষ্ট ধোঁয়াশা কাটছে না। একেক সময় একেক তথ্যের কারণে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে চারজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর তারা পদত্যাগও করেছিলেন। কিন্তু তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ধারণা করা হয়েছিল, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে। কিন্তু তা না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে- কেনইবা তাদেরকে পদত্যাগের কথা বলা হয়েছিল, আবার কেনইবা তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হচ্ছে না? তারা এখন কোন সরকারের অধীনে মন্ত্রিসভায় স্বপদে বহাল রয়েছেন? 

এ রকম পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন- এবার নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তা শুক্রবারই জানা যেতে পারে। এও তিনি বলেছিলেন, এবার নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় নতুন কোনো মুখ নাও আসতে পারে। পদত্যাগী মন্ত্রীদের দফতরে অন্যদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সবাই ভেবেছিলেন শুক্রবার নির্বাচনকালীন সরকারের নতুন রূপরেখা পাওয়া যাবে।

কিন্তু শুক্রবার পেরিয়ে শনিবারও শেষ হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য জানা যায়নি। যোগাযোগ করলেও দায়িত্বশীলরা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতেও চাননি। সবাই বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার কী, কেমন এবং কীভাবে কবে গঠিত হবে- তা শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। এর ফলে কেউ আগ বাড়িয়ে কথা বলে নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রীর বিরাগভাজন হতে চাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, চলমান মন্ত্রিসভার কোনো নাম নেই। নাম থাকার কথাও না। এর নাম হয় না। চারজন মন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর এখনো স্বপদে বহাল। এক্ষেত্রে আমি কী বলব। তাদের তো উচিত যেদিন পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন সেদিনই থেমে যাওয়া। কিন্তু তারা থামলেন না। এখন এর ব্যাখ্যা দেওয়া খুব শক্ত। ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। সব মিলিয়ে বিষয়গুলো সিরিয়াসভাবে নেওয়া হয় না। এসব দেখে আমরা খুব কষ্ট পাই। কারণ নিয়মানুযায়ী কিছুই তো হচ্ছে না।

তবে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ চলমান মন্ত্রিসভার একটি ‘নামকরণ’ দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভার নাম হচ্ছে ‘ট্রানজিশন কেবিনেট’। যেহেতু ট্রানজিশন কেবিনেট সেহেতু বহু বিষয় অমীমাংসিত থাকবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলেও তিনি মনে করেন। আবার নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যাও নেই সংবিধানে। বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণগণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। যার নাম দেওয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’। ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদেরও নেওয়া হয়। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত তাও করা হয়নি। ফলে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটা ‘কিন্তু’ থেকেই যাচ্ছে।

গত ২২ অক্টোবর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় ‘সব দলের’ প্রতিনিধিই আছেন। আর নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে এবার নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করছেন না। কিন্তু এসব পেরিয়ে তফসিল ঘোষণার দিনকয়েক আগে চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর পদত্যাগের পর অনেকেই বলেছিলেন নির্বাচনকালীন সরকারে অনির্বাচিত কেউ মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। কিন্তু তারা এখনো স্বপদে বহাল থাকায় এসব কথা উঠছে। আসলে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হচ্ছেটা কী?

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন, কবে নির্বাচনকালীন সরকার হবে, এর আকার কেমন হবে, সেটা একান্ত প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি এ নিয়ে কাজ করছেন। ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পরিষ্কার করবেন। সেই বৈঠকও গত হয়েছে দিনকয়েক আগে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা হয়েছিল, তাতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মিলিয়ে ছিল ২৯ সদস্যের। এর বাইরে ছিলেন ১০ জন উপদেষ্টা। সেবার মন্ত্রিসভার সব সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। পুরনো কয়েকজনকে রেখে এবং নতুন যোগ করে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল।

গত ২২ অক্টোবর গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা সব দলকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমাদের আহ্বান সত্ত্বেও তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি সাড়া দেয়নি। এবার নির্বাচনকালীন সরকার দরকার আছে কি-না, সেটা সময় হলে দেখা যাবে। নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট হবে কি-না বা হলে কেমন হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ছোট মন্ত্রিসভা ও তখনকার বিরোধী দলকে নিয়ে সব দলের সরকার গঠনের কথা বলেছিলাম। এখন এটা দরকার আছে কি-না দেখা যাবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা ছোট করা হয় না জানিয়ে তিনি বলেন- নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ইত্যাদি দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে। আমি ওইসব দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তো কোনো পরিবর্তন করে না। তারা তো বলেছে, তেমনটা করার তো কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এখন দেখা যাক অপজিশন যদি চায় তখন করব। আর না চাইলে কিছু করার নেই।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads