• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
‘একদল নির্বাচনে ব্যস্ত আর আমরা আদালতে’ 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

বিশেষ আদালতে খালেদা 

‘একদল নির্বাচনে ব্যস্ত আর আমরা আদালতে’ 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর ২০১৮

নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘একদল নির্বাচন করবে আর আমরা আদালতে আসব, এটা তো হতে পারে না। যেহেতু এখন সবাই মাঠে নির্বাচনের কাজ করছে, কেউ আমার জন্য, কেউ তার জন্য। যেখানে নির্বাচন নিয়ে সবাই ব্যস্ত, সেখানে আমাদের আদালতে আটকে রাখা হয়েছে। অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আমাদের নির্বাচনী কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও যদি আমাদের আদালতের মধ্যেই আটকে রাখা হয়, তাহলে বলে দিক- নির্বাচন করো না।’ 

বুধবার রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী নবম বিশেষ জজ আদালতে নাইকো মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

খালেদা জিয়াকে বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে হুইলচেয়ারে করে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিচারক তার এজলাসে আসেন ১২টায়। তারপর এ মামলার আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পক্ষে শুনানি শুরু হয়। মওদুদ আহমদ তার নিজের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। আসামি নিজে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও অংশ নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে শুনানি মুলতবির আর্জি পেশ করেন। পরে বিচারক আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি মওদুদ আহমদের অসমাপ্ত শুনানি এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। 

আদালতে প্রবেশ করার পর খালেদা জিয়া বলেন, ‘পুলিশ আদালতে সিকিউরিটি দেবে ঠিক আছে। কিন্তু আদালতের ভেতরে এত সিকিউরিটি দেওয়ার কী আছে? আমি তো ল ইয়ারকে দেখছি না। তাদের কথা শুনতে পারি না। পুলিশ প্রবেশ পথে থাকুক, এজলাসে নয়।’ পুলিশ ঘিরে রাখায় তার আইনজীবীকে দেখতে না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি একথা বলেন। 

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদল নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আর আমরা মামলা নিয়ে। সেভেন মার্ডারসহ অন্য স্পর্শকাতর মামলাগুলোর বিচার দ্রুত করা হয় না। আমাদেরটা দ্রুত হচ্ছে কেন?’ 

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওখানেই তো স্বাভাবিক বিচার চলছিল। তবে এখানে বিচারের কারণ কী? এ মামলার বিচার স্বভাবিকভাবে হচ্ছে না। অস্বাভাবিক দ্রুততায় চালানো হচ্ছে।’ 

শুনানির এক পর্যায়ে তার অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের উদ্দেশে বলেন, ‘তাকে প্রতিমন্ত্রী করে এ মামলা পরিচালনার পুরস্কার দেবে আওয়ামী লীগ।’ 

এ কথার পর খালেদা জিয়া মোশাররফ হোসেন কাজলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাকে তো আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বানিয়ে দেওয়া উচিত।’ তখন দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, ‘ম্যাডাম আপনি দোয়া করবেন।’ 

আদালতের অনুমতি নিয়ে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও আহমেদ আজম খান খালেদা জিয়ার সঙ্গে এজলাসের পাশের একটি কক্ষে বসে কথা বলেন। 

কারাগারের এ অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান গত ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে তার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সাজা দেন।  

গত ৮ নভেম্বর বিকেলে সরকারের আইন মন্ত্রণালয় নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠের অস্থায়ী আদালত থেকে স্থানান্তর করে এ আদালতে। এ বিষয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কথা উল্লেখ রয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পরদিনই বিচার কার্যক্রম শুরু হয় কারা আদালতে। 

কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন। পরের বছরের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয় আদালতে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত পঞ্চম অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত। রায়ের পর খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads