• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বিদ্রোহের শঙ্কায় বিএনপি

লোগো বিএনপি

রাজনীতি

বিদ্রোহের শঙ্কায় বিএনপি

৩০০ আসনে ধানের শীষ প্রত্যাশী সাড়ে ৪ হাজার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর ২০১৮

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৩০০। এবার ৩০০ সংসদীয় আসনের অনুকূলে বিক্রি হয়েছে সাড়ে তেরগুণ মনোনয়নপত্র। গতকাল শুক্রবার শেষ দিন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪ হাজারে। এ তালিকায় আমলা, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী এবং ছাত্রদল নেতা থেকে শুরু করে দলীয় প্রধানের নাম রয়েছে। এরা সবাই বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ চায়। উৎসবমুখর পরিবেশে দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও বেশ চাঙ্গা। তবে গত বুধবার সংঘর্ষের ঘটনায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার শঙ্কা মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ায় আসনভিত্তিক দ্বন্দ্বের পরিধিও বাড়তে পারে। অনেকেই আছেন দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কাজ করছে। গত নির্বাচন বর্জন করা হয়েছে। গত দুটি নির্বাচনে অনেককেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে। সব মিলে শঙ্কার মাত্রা অনেক বেশি। বাড়তে পারে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা। বাস্তবতা বিবেচনা করেই প্রার্থী নির্বাচন করবে বলে জানান নীতি-নির্ধারকরা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে প্রার্থী নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কড়া দৃষ্টি রাখছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা গেছে।  

বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, গত ১২ নভেম্বর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৪ হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কাল ১৮ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সাক্ষাৎকার নেবে দলের মনোনয়ন বোর্ড।

দলীয় সূত্র জানায়, কাল রোববার রংপুর বিভাগ সকাল ৯টা থেকে, বেলা আড়াইটা থেকে রাজশাহী বিভাগ, সোমবার সকাল ৯টা থেকে বরিশাল বিভাগ, বেলা আড়াইটা থেকে খুলনা বিভাগ, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগ, বেলা আড়াইটা থেকে কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগ, বুধবার সকাল ৯টা থেকে ময়মসনিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ এবং বেলা আড়াইটা থেকে ঢাকা বিভাগ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় আসন ৩০০ হলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির জন্য কতটি থাকবে তার ওপর নির্ভর করছে প্রাপ্তি বা বঞ্চিতদের সংখ্যা। দীর্ঘদিন দলের ভেতরে একপন্থি ছিল। এখন যোগ হয়েছে-সংস্কারপন্থি। ২০ দলীয় জোটের শরিক ছাড়াও নতুন অংশীদার হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নেতাদের যেসব আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে সেসব আসনে বিএনপি নেতা যারা মামলা-হামলা ও নির্যাতিত পোড়খাওয়া তারা কতটুকু মেনে নেবে? দুই মাস আগে গঠিত ফ্রন্ট নেতাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মেনে নেবে কি না সে শঙ্কাও ফেলনা নয়।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির একজন সম্পাদক বাংলাদেশের খবরকে জানান, বিএনপির এখন বৈরী সময় যাচ্ছে। কোন্দল মেটানোর ক্ষমতা রাখেন শুধু খালেদা জিয়া। এখন তিনি কারাগারে। দ্বিতীয়জন তারেক রহমান লন্ডনে। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী নেতৃত্বকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মেনে নিলেও মনোকষ্ট ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। 

চাঁদপুর-৩ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির তিনজন। শেখ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ মানিক, মোস্তফা খান সফরী ও এসএ সুলতান টিটু। ২০ দলীয় জোটের প্রফেসর এম আবদুল্লাহ। জোট শরিকের বিষয়টি গৌন হলেও বিএনপির তিনজনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। তবে মোস্তফা খান সফরী বলেন, শেষ পর্যন্ত দল যাকে ধানের শীষ দেবে তার পক্ষেই কাজ করবেন তিনি। নরসিংদী-৪ আসনে সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে দলে সক্রিয় করা হয়েছে। তিনি সঙ্কারপন্থি। এই আসনে লড়তে চান ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদির জুয়েল। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। জামালপুর-৩ আসনে ধানের শীষ চায় ৬ নেতা। মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নঈম জাহাঙ্গীর, গোলাম রব্বানী, ফয়জুল ইসলাম লাঞ্জু, দৌলতুজ্জামান আনসারী ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। সংসদীয় প্রায় দুই শতাধিক আসনেই এ চিত্র।

শেষদিনে জমা-সংগ্রহ

গতকাল শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রি হলেও জমা নেওয়া হয় গভীর রাত পর্যন্ত। গতকাল মনোনয়নপত্র জমাদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১), ভিপি সাইফুল ইসলাম (বগুড়া-৬), শিরিন সুলতানা (ঢাকা-৯), হুমায়ুন কবীর, নাসিমা আক্তার কল্পনা, আনোয়ার পারভেজ বাদল (ঢাকা-৭), সালাহ উদ্দিন ভূঁইয়া শিশির (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫),  মোস্তফা খান সফরী (চাঁদপুর-৩), মামুন চৌধুরী স্টালিন (নওগাঁ-৬), গাউসুল আজম বিপু (গাইবান্ধা-৪), রফিকুল ইসলাম বকুল (খুলনা-৩), চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক (নেত্রকোনা-৪), মুনির হোসেন (পটুয়াখালী-২), তাইফুল ইসলাম টিপু (নাটোর-১), রাজীব আহসান (বরিশাল-৪), আকরামুল হাসান (নরসিংদী-৩), ফেরদাউস মুন্না (চট্টগ্রাম-৪), আবু সাঈদ আহম্মেদ (জয়পুরহাট-১), আবুল বাশার (ঢাকা-৬), সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ (ঢাকা-৫), তানভীর আহম্মেদ রবিন (ঢাকা-৪), মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু (ফরিদপুর-৩), হুমায়ূন কবির (বরিশাল-৪), শরিফুল আলম (কিশোরগঞ্জ-৬), আবদুল আওয়াল মিন্টু (ফেনী-১ ও ৩), আবদুল লতিফ জনি (ফেনী-৩),  অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী (সিলেট-১), শামসুদ্দিন দিদার (কুমিল্লা-১০), ডা. নিয়াজ আহম্মেদ চৌধুরী (সিলেট-৩), অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রশিদ আহম্মেদ (সিলেট-৬), আবদুল কাইয়ূম (ঢাকা-১১) ও কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের (কুমিল্লা-৩) পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এই দুই নেতা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads