• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ইসির ক্ষমতা কেতাবেই

লোগো নির্বাচন কমিশন (ইসি)

রাজনীতি

ইসির ক্ষমতা কেতাবেই

আইন ও বিধি প্রয়োগ করতে পারছে না ইসি

  • সাঈদ আহমেদ
  • প্রকাশিত ২১ নভেম্বর ২০১৮

কেতাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা। আইন এবং বিধিতে অনেক বিধান লিপিবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় বাড়ছে রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। খোদ নির্বাচন কমিশনের কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠছে। সমাধানের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের। কমিশন তার ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না। এ অবস্থায় ইসির ক্ষমতাকে ‘কেতাবি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ মতে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। নিজস্ব বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের। এ ক্ষমতাবলে জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে ইসি নতুন বিধান জারি করে। পুরনো বিধানও সংশোধন করে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দোষারোপের চাবুক হানছে একে অন্যের দিকে। ৮ নভেম্বর ঘোষিত তফসিলে বলা হয় ভোটগ্রহণ ২৩ ডিসেম্বর। বিরোধীদের দাবিতে ভোটের দিন এক সপ্তাহ পিছিয়ে করা হয় ৩০ ডিসেম্বর। চলছে দল ও জোটের প্রার্থিতা বাছাই। ভোটগ্রহণের আগে মনোনয়নপত্র জমা, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ এবং প্রচারণার মতো বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব সম্পাদনে আরো অনেক অভিযোগ হয়তো পুঞ্জীভূত হবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধি কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে-এ প্রশ্ন বিশ্লেষকদের।

ইতোমধ্যেই বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। তাতে উল্লেখ করা হয়, স্কাইপির মাধ্যমে বিএনপির লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল গত ১৯ নভেম্বর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের কাছে লিখিত এই অভিযোগ জানায়। এ বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি তারেক রহমান বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন স্কাইপে। এটা বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের দুই মাস আগের নির্দেশনায় তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রচার না করার জন্য বলা হয়।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, গঠনতন্ত্র পরিবর্তনসাপেক্ষে তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। আমরা মনে করি, এটা নির্বাচনের এবং সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল ইসলাম চৌধুরী নওফেল বলেন, লাইভ স্ট্রিমিং, টেলি-কনফারেন্সিংসহ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ করার মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধিও লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিএনপি দণ্ডিত ও পলাতক একজন আসামির মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণের যে কাজটি করছে তা শুধু অবৈধ নয়, অনৈতিকও।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগের ফিরিস্তিও কম নয়। দলটির নেতারা অভিযোগ করেন, ইসি সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদল, অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও তা করছে না ইসি।

গতকাল মঙ্গলবার ইসিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের লেখা চিঠিতে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন বিতরণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের প্রত্যাহার চাওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বসে পুলিশ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির ষড়যন্ত্র করছে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও পুলিশকে ব্যবহার করে কারচুপি করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বসে সে রকম পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

চিঠিতে তিনি আরো বলেন, বিগত দিনে বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিন মাসের জন্য যে সরকার আসত তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, বিটিভি গুরুত্ব অনুসারে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে না। তফসিল ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের না ধরতে ইসির প্রতি অনুরোধ করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখনো প্রতিদিন সারাদেশে বিএনপিদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অভিযোগ-পাল্টাঅভিযোগ আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন দ্রুত পর্যালোচনা করছে। বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার আগে যেসব মামলা হয়েছে সে বিষয়ে ইসির কিছু করার নেই। আর তফসিলের পরের মামলা নিয়ে বিএনপির তালিকায় সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। তাই ইসি এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

বিএনপির পক্ষে ইসিতে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, উপজেলা চেয়ারম্যানরা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন কি না। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ইসির আইন অনুবিভাগ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যা পাওয়ার পর তা রাজনৈতিক দল ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

দু’পক্ষের অভিযোগে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইসির ক্ষমতা ‘কেতাবি’ বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ক্ষমতায় আছে একটি দলীয় সরকার। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। ইসির উচিত উভয়পক্ষের অভিযোগই আমলে নেওয়া।

বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, ক্ষমতাসীন দলে যারা প্রার্থী, তারা এখনো নিজ নিজ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এটি লেভেল প্লেইং ফিল্ডের চিত্র নয়। ইসি তার আইন ও বিধির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেবে-আমরা এমনটি চাই।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম.সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাব হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বড় অন্তরায়। নির্বাচন কমিশনের হাতে অনেক ভালো ভালো আইন ও বিধি আছে, কিন্তু সেগুলোর বাস্তবিক প্রয়োগ অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কারণে আইন ও বিধি-বিধানগুলো অনেক সময় কেতাবি বিধানে পরিণত হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads