• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
আসন বণ্টনে কৌশলী দুই দল

লোগো বিএনপি ও আওয়ামী লীগ

রাজনীতি

আসন বণ্টনে কৌশলী দুই দল

  • রেজাউল করিম লাবলু/হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্তে কৌশলী অবস্থানে ভোটে প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেনি কোনো দল। দুদলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক তালিকা প্রকাশ করেনি কোনো দল। দুদলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মনোনয়ন আটকে আছে জোটের হিসাব-নিকাশ ও আসনভিত্তিক পরস্পরের প্রার্থী কারা হচ্ছেন তা জানতে। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাকি ৫ দিন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে দেড় থেকে দুইশ আসনের প্রতিপক্ষ প্রার্থী কারা হচ্ছেন তা মোটামুটি আগে থেকে জানা থাকে। এবার আওয়ামী লীগ কোন আসনে কাকে মনোনয়ন দেয় সেদিকে নজর রাখছে বিএনপি। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ খবরও নিচ্ছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থী তালিকার খোঁজ-খবর রাখছে। এর বাইরে শরিকদের কোন জোট কত আসন ছাড় দিচ্ছে সে দিকেও নজর দুদলের নেতাদের। সব আসনে নিজেদের দল ও জোটের প্রতিপক্ষ প্রার্থী সম্পর্কে নির্ভেজাল তথ্য পেতে চান তারা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দুদলের নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ শরিকদের ৭০ আসন এবং বিএনপি শরিকদের ৬০ আসনে ছাড় দিতে পারে। আওয়ামী লীগ আগামী ২৫ কিংবা ২৬ নভেম্বর দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এই ধারণা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী তালিকা প্রকাশে সময়ের কথা এখনো উল্লেখ করেনি।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিএনপির বেশ কিছু নেতা। বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেলে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারে বলেও জানান দলের নেতারা।  

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তারা প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছেন।  তবে তা প্রকাশ করা নাও হতে পারে। কৌশলগত কারণে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন কেন্দ্র থেকে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে টেলিফোনে। আগে চূড়ান্তভাবে প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হলে ক্ষমতাসীনরা ওই প্রার্থীকে নানাভাবে হয়রানি করার সুযোগ পাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এক আসনে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এখনো চূড়ান্ত কিছু নয়। সময় হলে গণমাধ্যমকে সব কিছু জানানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মতো হবে না। এটা ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের সব নেতাকর্মীকে এ কথা বলা হয়েছে। নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারণা দেড় শতাধিক আসনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পাশাপাশি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান  মনোনয়ন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে ঝামেলা চলছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। পরিস্থিতি প্রায় অভিন্ন তাদের জোটেও। এ জন্য তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আশা করছেন শিগগিরই তারা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারবেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগ থেকে ৪ হাজার ২৩টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে, বিএনপি থেকে হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০। সাক্ষাৎকার পর্ব শেষে দুই দলেরই মনোনয়নের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগের কোন আসনে কারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন, সেটা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন কোন আসনে ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির প্রার্থীদের হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, প্রতিপক্ষের মনোনয়ন নিশ্চিত জেনে নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন তারা। যদিও নিজেদের জোটগত আসন ভাগাভাগি এখনো শেষ হয়নি। সেই ভাগ-বাঁটোয়ারায় বাদ পড়তে পারেন দলীয় অনেকেই। দুই দলের দায়িত্বশীল নেতারাই বলছেন, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কারা সেটা জানার চেষ্টা করছেন তারা। বিশেষ করে যেসব আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী কে সেটা জানা জরুরি। দুদলের দুজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন উৎসে কিছুটা জেনেছেন। এটা নির্বাচনের আগে সব সময়ই করা হয়।

এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে বিএনপির এক মনোনয়ন প্রত্যাশী বলেন, বিএনপি যে প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে চাইছে তা সঠিক নয়। এতে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব আরো বাড়বে। একই আসনে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে গেলে দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হবে। কোন্দল বেড়ে যাবে। তাই আগে থেকে সব খোঁজ-খবর নিয়ে একবারে একক প্রার্থী নিশ্চিত করে দলের মনোনয়ন দিতে হবে।

বিএনপির সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোট শরিক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আসন ছাড়ার হিসাব থেকে প্রার্থী তালিকা নেওয়া হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চূড়ান্ত এ সিদ্ধান্ত জানাবেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি জোট ও ফ্রন্টের নেতাদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে জরিপ করেছে তার ফলাফলও তিনি সংগ্রহ করেছেন। সব হিসাব মিলিয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, দলের মনোনীত প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হলেও প্রায় ১০ আসন বাকি আছে। নিজ দল ও জোট ও মহাজোটের প্রার্থীসহ বিভিন্ন দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা নেতাদের এসব আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা। তবে বিতর্কিত ও জনপ্রিয়তাহীন নেতাদের আওয়ামী লীগে না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে দলটির।

এদিকে জাতীয় পার্টি ২ হাজার ৮৬৫টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করলেও সাক্ষাৎকারে ডেকেছিল বাছাই করা ৭৮০ মনোনয়ন প্রত্যাশীকে। অনুষ্ঠানে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলে দিয়েছেন, ৩০০ আসনে তিনিই প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। সবাই যেন তার সিদ্ধান্ত মেনে দলের পক্ষে কাজ করেন। জোটের বিষয়েও তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত গণফোরাম ৩৫০, জেএসডি ৫৪৭, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৬০ মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। দলগুলোও জানিয়েছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads