• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
পুলিশ আ.লীগ ইসি সবারই প্রতিপক্ষ ‘ধানের শীষ’!

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

হয়রানি ও নির্যাতনের ফিরিস্তি বিএনপির

পুলিশ আ.লীগ ইসি সবারই প্রতিপক্ষ ‘ধানের শীষ’!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে থাকা বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের অহেতুক হয়রানি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হুমকি, ধমকির পাশাপাশি মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা চালাচ্ছে নির্যাতন। প্রচারণায় বাধা এমনকি লিফলেট-পোস্টার লাগাতেও দিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এসব দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করছে। বার বার অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকারই মিলছে না।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল সোমবার ইসির সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এ সময় ৩০টি জেলায় পুলিশি হয়রানি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হাতে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্যাতনের ফিরিস্তি বৈঠকে উপস্থাপন করে অতি দ্রুত এসবের প্রতিকার চাওয়া হয়।  

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অপর চার কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, নজরুল ইসলাম খান, ড. মঈন খান, মোস্তফা মহসিন মিন্টু, জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন।

বৈঠকে ঢাকা মহানগর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, ভোলা, চট্টগ্রাম, শেরপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, নোয়াখালী, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, নরসিংদী, নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, রংপুর, পাবনা, সাতক্ষীরা, ফেনী, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা ও হামলা করা হচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

আট পৃষ্ঠার এই অভিযোগে বলা হয়, গত রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগরের কদমতলী বিএনপির সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি মীর হোসেন মীরুর বাড়িতে গোয়েন্দা বিভাগের একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশ হানা দেয়। এ সময় ধানের শীষের প্রচার চালানো যাবে না বলেও হুমকি দিয়ে যায় তারা। এছাড়া অন্য নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশি তল্লাশির নামে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া আগামী নির্বাচনে ভোট থেকে বিরত রাখার জন্য পুলিশ অস্ত্র তুলে হুমকি দেয়।

ঢাকা-৯ সংসদীয় আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস ১২ ডিসেম্বর জনসংযোগে বের হলে আকস্মিকভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালায় ও ধানের শীষের লিফলেট কেড়ে নেয় এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করে। তখন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা রিপন ও সিরাজসহ অনেকেই গুরুতর জখম হন। নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীকে সাদা পোশাকের পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবদুল হামিদের বাসায় তল্লশির নামে হামলা চালায় পুলিশ।

নির্বাচন কমিশন এসব দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তাসহ সব থানার ওসিকে প্রত্যাহার করলে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে পাওয়া যাবে বলে অভিযোগে বলা হয়।

এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলার চিত্র তুলে ধরে বৈঠকে জানানো হয়, গত রোববার চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার ধানের শীষের প্রার্থী আবদুল মান্নানসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা গণসংযোগ শেষে ফেরার পথে পুলিশ বাধা দেয়। এমনকি তাদের গুলিও করা হয়েছে। কুমিল্লা শহরে বিএনপির নেতাকর্মীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শহরে বের হলে তাদের বাধা দেয় পুলিশসহ আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ করায় ৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী গুরুতর জখম হন। এ সময় তিন বিএনপি সমর্থকের দোকানে ভাঙচুর করা হয়। আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হলে নৌকা মার্কা ছাড়া এলাকায় কেউ থাকতে পারবে না বলে পুলিশ সুপার অফিস থেকে জানানো হয়। জামালপুর-৩ আসনের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ নেতাকর্মীরা হজরত শাহ কামালের (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে গেলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ১০-১২ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর জখম করে।

ভোলা-৪ আসনের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আলমের গাড়ি ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। সেখানে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। চট্টগ্রামে রোববার সন্ধ্যায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপির প্রার্থী আসলাম চৌধুরীর বাড়িতে চলা নির্বাচনী সভা থেকে বের হওয়ার পর ২৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রাম-৭ আসনের বিএনপি প্রার্থীকে অবৈধ অস্ত্র ধরিয়ে গ্রেফতার করা হয়। শেরপুর জেলার শ্রীবর্দি উপজেলা বিএনপির নির্বাচনী পথসভা পুলিশ আক্রমণ চালিয়ে পণ্ড করে দেয়। ফরিদপুর শহরে চারজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। শহরের ২-৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়।

এদিকে গতকাল ইসিতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমানের ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন ইরফানের মা সাবেরা আমান। গতকাল সকালে ঢাকা-২ আসনে তার নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালানোর সময় তাদের ওপর হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এর প্রতিকার দাবি করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads