• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
টেলিআলাপে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‘বিরোধ ফাঁস’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

টেলিআলাপে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‘বিরোধ ফাঁস’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোটের ঠিক আগে ফাঁস হওয়া একটি টেলিআলাপের সূত্র ধরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের খবর দিয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশন। এই টেলিআলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর সঙ্গে কথায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তীব্র সমালোচনা করতে শোনা গেছে।

মওদুদকে বলতে শোনা গেছে, নির্বাচনকে আন্দোলনের কৌশল হিসেবে দেখা হলেও বাস্তবে তা হয়নি এবং আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে যাচ্ছে, যার ফলে নির্বাচনের পরে বিএনপির আন্দোলন করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহাসচিব ফখরুলের সঙ্গে অন্যদের বিরোধের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের এক দিন আগে শুক্রবার এই টেলিআলাপ নিয়ে খবর প্রচার হয় বিভিন্ন টেলিভিশনে। সম্প্রচারিত খবরে এই অডিও ক্লিপের উৎস সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মওদুদ সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কথোপকথন হয়েছে, তাতে কী হয়েছে?’ এটি কি আপনার কণ্ঠ- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না শুনে তা কী করে বলব?’

টেলি আলাপে বিস্তারিত যা কথা হয়েছে—

বুলু : জ্বি মওদুদ ভাই, স্ল্যামালেকুম।

মওদুদ : হ্যাঁ, বুলু, বল ভাই।     

বুলু : এখন কী করবেন? ২৮ তারিখ তো, এখন টাকা খরচ করে আর বসে থেকে লাভ কী? ৩০০ আসনেই আমরা ইয়া করে দিই।

মওদুদ : শোন বুলু, তুমি তো জানো। এটা নিয়ে গত ১৫ দিন যাবৎ আমরা বলে আসছি। আমার কথা তো শোনে না। এখন তোমার মহাসচিব আমার টেলিফোন ধরে না।

বুলু : মহাসচিব আপনার টেলিফোন ধরে না?

মওদুদ : টেলিফোন ধরে না।

বুলু : মহাসচিব কি সাপের ঠ্যাং দেখছে, না কী দেখছে?

মওদুদ : সারাদিন আমার টেলিফোন ধরেনি কালকে। তারপরে শোনো রাতে তারেক রহমান আমাকে ফোন করল। আমি উনাকে বললাম মহাসচিব কেন টেলিফোন ধরে না, তা সে নিশ্চয়ই জানে। মহাসচিবকে লাস্টে যখন টেলিফোন করেছি, তখন খুব কড়া ভাষায় কথা বলেছি তার সঙ্গে। যাই হোক, সে কালকে স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং ডাকছিল। ন্যাচারালিই আমি বলেছি, মিটিংয়ে আমি যাব না। আমি খবর দিছি যে, আমার মতামত তো আমি দিয়েই দিয়েছি। স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে মহাসচিব তারেক রহমানকে বলেছে, মিটিংয়ে বেশিরভাগই আসে নাই। তারেক রহমানকে আমি পুরাটা বলেছি। বলেছি, দেখেন ইলেকশন করার কথা ছিল আন্দোলন করার জন্য। আপনাদের আন্দোলনের ইস্যুটা কী? আন্দোলনের ইস্যুটা কোথায় তৈরি করেছেন আপনারা? বার বার বলেছি যে, ৩০০ প্রার্থীকে যদি ঢাকায় ডাকা হতো। আর ঢাকায় যদি ৩০০ প্রার্থী যেকোনো জায়গায় বসে যেতাম, এতে দুনিয়া কাঁপায়ে দিত। আমরা বলতাম যে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা নির্বাচন করব না। ফিনিশ। আর না হয় বলতাম ২০-১৫ দিন নির্বাচন পিছায়ে দাও এবং নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি কর। গত ৮-১০ দিনে যত মামলা হয়েছে সব প্রত্যাহার করতে হবে। যাদের জেলে নিয়ে গেছে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। জেন্যুইন ডিমান্ড এগুলো। কিন্তু করে নাতো কী করব? তারেক রহমান বলল, আপনারা সিনিয়ররা বসে বলেন। সিনিয়রদের করার কী আছে এখানে। একটা মিটিং পর্যন্ত করল না মহাসচিব। সে সংবাদ সম্মেলন করে। ড. কামাল হোসেনের সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের আন্দোলন হবে না কি?

বুলু : আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার আমরা ৩০০ জন গিয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে বসে যেতাম। এইটাই তো আন্দোলন।

মওদুদ : এইটাই বিরাট আন্দোলন হতো। তারপর যদি ৩০ তারিখে নির্বাচন করত, আমাদের এই আন্দোলন কন্টিনিউ করত। আমি বললাম তারেক রহমানকে, এখন নির্বাচন যদি একবার হয়ে যায়, ৩০ তারিখে ঘোষণা দিয়ে দেবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নির্বাচনে কোনো অসুবিধা হয় নাই, নৌকার জয়জয়কার হয়েছে এবং দেশের মানুষের আমাদের ওপর আস্থা আছে। এইসব বলে টলে আমাদের আন্দোলন করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না তখন।

বুলু : কী বললেন তখন।

মওদুদ : উনি বললেন, এটা তো ঠিক বলেছেন ইত্যাদি। আপনারাই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নির্বাচনে যাবেন। হ্যাঁ আমরাই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নির্বাচনে যাব।

বুলু : আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করলাম। বাকিটা তো কার্যকর করতে হবে।

মওদুদ : এক্সাক্টলি। বলেছি, অনেকক্ষণ কথা বলেছি। আমারও যা ছিল বলার বলে দিছি।

বুলু : আমাদের ওই সিদ্ধান্তটাই নেওয়া উচিত ছিল যে, ঢাকায় গিয়ে বসে যেতাম।

মওদুদ : বললাম তো, ফোন ধরে না।

বুলু : না না, আমাদেরও ফোন ধরে না।

মওদুদ : কালকে মিন্টু সাহেবও আমার ফোন ধরে নাই। রাতে না কি ফোন করেছিল।

বুলু : এরা কেউ ফোন ধরতেছে না।

মওদুদ : তারা কী স্বপ্ন দেখতেছে আমি জানি না। তারা কি একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে কি না, জানি না। তারা কি এই সরকারকে ‘কামাল হোসেন সাহেব ভদ্রলোক মানুষ, কামাল হোসেন সাহেবসহ এই সরকারকে লেজিটিমাইজড (বৈধতা) করবে? যারা জিতে আসবে, এই ২০/২২/৩০, তাদেরকে জান শেষ করে দেবে। নির্বাচনের পর টুকরা টুকরা করে দিবে। মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে একজনকেও টিকতে দেবে না। পৌর মেয়রদেরকে দিছিল? একজনকেও কাজ করতে দিছে? আমরা যদি আন্দোলন সৃষ্টি করতে না পারি তাহলে এই মেম্বাররা একটাও ফাংশান করতে পারবে না।

বুলু : একটা রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। এর বাইরে কোনো ওয়ে নেই। তারেক সাহেবকেও বলেন। তারেক রহমানকে আবার ফোন করেন। তবুও একটা আন্দোলনের রাস্তা থাকবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads