সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল রোববার তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হবে। এরশাদ গত শনিবার থেকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি রয়েছেন। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়েছে পড়েছেন। গত ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে আসার পর কোথাও তাকে দেখা যায়নি। এদিকে এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তার ভাই দলের কো- চেয়ারম্যান এবং সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। গতকাল শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেশ কয়েক মাস ধরে শারীরিক অসুস্থ। বয়সের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন এরশাদ। বিশেষ করে, তার রক্তে কখনো সোডিয়াম কমে যায়, কখনো হিমোগ্লোবিন কমে যায়। এ জন্য কিছুদিন পরপরই হাসপাতালে গিয়ে তাকে রক্ত নিতে হয়। মাস খানেক আগে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় তিনি কয়েক দিন সিএমএইচে ভর্তি ছিলেন, নিতে হয়েছিল কয়েক ব্যাগ রক্ত। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে রুটিন চেকআপ করান এরশাদ। তার হার্টের দুটো ভাল্বেই ছিদ্র রয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। অসুস্থতার কারণে গত ১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। টানা ১৬ দিন পর সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেন তিনি। কিন্তু শরীর দুর্বলতার কারণে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে রংপুর যেতে পারেননি তিনি। সেই সময় এরশাদ সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৩ জানুয়ারি দলের ২১ সংসদ সদস্য শপথ নিলেও তিনি সেদিন শপথ নিতে যেতে পারেনি। এরপর তিনি হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ারে করে ৬ জানুয়ারি শপথ নেন। এরপর পুনরায় হাসপাতালে চলে যান। এরপর বাসায় ফিরে গেলেও গত শনিবার থেকে তিনি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আজ শনিবার তার বাসায় ফেরার কথা রয়েছে।
এরশাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তার আগামীকাল রোববার সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের আগেই তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তারা বলেছেন, এরশাদের শারীরিক অবস্থা মোটেই ভালো যাচ্ছে না। পায়ের ওপর ভর দিযে দাঁড়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আগে এক পায়ে সমস্যা ছিল, এখন দুই পায়েই সমস্যা হচ্ছে। সর্বশেষ শপথ নিতে গিয়েছিলেন হুইলচেয়ারে বসে। এরপর হাসপাতালে আসা যাওয়ার মধ্যেই রয়েছেন তিনি। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোববার সিঙ্গাপুর নেওয়া হবে।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের এবং কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে না দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে। তাকে শুধু নির্বাচনের পর শপথ নেওয়ার দিন দেখা গেলেও এরপর তাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া দলের কোনো বৈঠকেও তিনি আসেন না। দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, এরশাদ ও রওশন দুইজনই বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। রোগ হলে তো ওষুধে সারত কিন্তু বার্ধক্য তো ওষুধে বা চিকিৎসায় সারানো যায় না। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও কোনো অনুষ্ঠান কিংবা দলীয় বৈঠকগুলোতেও উপস্থিত হতে পারছেন না।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে দলটির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এরশাদ বলেন, আমি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের জানাচ্ছি যে, আমার অবর্তমানে বা চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে থাকাকালীন পার্টির বর্তমান কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই নিয়োগ প্রদান করেছেন। যা ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে।
ইতোপূর্বে অনেকবার দেশের বাইরে গেছেন এরশাদ। কিন্তু কখনো কাউকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে দিয়ে যাননি। শুধু নির্বাচনের আগে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন।