• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কারাগারে খালেদার বছর পার

খালেদা জিয়া

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

কারাগারে খালেদার বছর পার

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মাঠে-ময়দানের আলোচনা- ‘রাজনীতিবিদদের দ্বিতীয় ঘর জেলখানা, জীবনে বেশি সময় কাটে রাজপথে।’ কালের আবর্তে রাজনীতিবিদের প্রায় সবাইকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় বন্দি দিনাতিপাত করতে হয়। ব্যত্যয় ঘটেনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার বেলায়ও। তবে সময়টা শেষ বেলায়। গত এক বছর ধরে তিনি কারাবন্দি। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। ওইদিনই আদালত থেকে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে খালেদা জিয়া কারাবন্দি আছেন। যেখানে তিনিই একমাত্র বন্দি। নিকট দূরে স্বেচ্ছায় কারাবাসে আছেন খালেদা জিয়ার কাজের বুয়া ফাতেমা। মাঝেমধ্যে স্বজনরা গিয়ে সাক্ষাৎ করেন কারাগারে।

শারীরিকভাবে অসুস্থ খালেদা জিয়া গত বছরের ৫ জুন কারাগারের ভেতরে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এর দুইদিন পর খালেদা জিয়াকে দেখে এসে তার এক চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় উচ্চ আদালত তার সাজা আরো ৫ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির আরেকটি মামলায় তার সাজা হয়েছে ৭ বছর।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর থেকে বিএনপি তার মুক্তির জন্য মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্শন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, স্মারকলিপি দেওয়ার মতো শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছিল। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি। নির্বাচনের পরও এখনো পর্যন্ত ‘অর্থপূর্ণ’ কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। আজ শুক্রবার দলটি প্রতিবাদ সভা করবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। কাল সারা দেশে দলটির প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এখন তাদের প্রধান এজেন্ডা। তবে কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সংযত হয়ে চলতে হচ্ছে। নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত থাকায় তাদেরকে হুট করে এখন আরো ঝামেলায় ফেলা যাবে না। এ কারণে সময় নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, বিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন, কিন্তু আইন নিজস্ব গতিপথে চলতে পারছে না। অদৃশ্য শক্তি খালেদা জিয়ার মুক্তির লাগাম ধরেছে।

খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং প্রতিহিংসার কারণে। তাই যে মামলাগুলো তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে তার মুখ্য উদ্দেশ্য তাকে জনসম্মুখে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা। কেননা একটি পরিত্যক্ত জেলে, নিতান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাকে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসার কোনো সুব্যবস্থা নেই।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্ত করা যাবে না। কেননা আমাদের নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই কর্তৃত্ববাদী সরকারের আজ্ঞাবহ।

এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, বিএনপির সংসদে যাওয়ার শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য সরকারের তরফ থেকে বার বার বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপিকে সিদ্ধান্ত বদলের অনুরোধ জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংখ্যায় কম হলেও বিএনপির বিজয়ীদের সংসদে যাওয়া উচিত। এখন পর্যন্ত বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তাদের দলের কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads