• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
হয় পদত্যাগ নইলে বহিষ্কার

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

হয় পদত্যাগ নইলে বহিষ্কার

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বিএনপির নির্বাচনমুখী নেতাকর্মীদের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত। দলটির হাইকমান্ড সাফ জানিয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে তারা আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। দফায় দফায় বৈঠক করে দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য স্পষ্ট ও কঠিন বার্তা দিয়েছে। বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে গেলে ‘হয় দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে, নয়তো দলই তাকে বহিষ্কার করবে।’ নিজস্ব বিশ্লেষণে নির্বাচন বর্জনের নানা যৌক্তিকতা সামনে এনেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

দেশের অন্তত ১০টি উপজেলায় বিএনপির নির্বাচনমুখী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে স্থানীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত পাল্টে গেছে। কেউ বলছেন, নির্বাচনের আগেই তারা ফলাফলের হিসাবটা কষতে পেরেছেন, তাই হাত গুটিয়ে বসে আছেন। আর টাকা-পয়সা নষ্ট করতে চান না। কেউ বলছেন, আভাস যা-ই হোক নির্বাচনমুখী নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজন আছে।

হাইকমান্ডের কঠিন সিদ্ধান্ত প্রশ্নে তাদের মতামত হলো- তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। অতীতেও এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, বহিষ্কারও করা হয়েছে। তবে নির্বাচন করে বিজয়ী হলে তাদের অভ্যন্তরীণভাবে ধন্যবাদসহ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার নজিরও আছে। পরাজিতদের আদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

গত রোববার নির্বাচন কমিশন সারা দেশে ৮৭টি উপজেলায় ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে। পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। সে অনুযায়ী আগামী ১০ মার্চের পর দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ এবং পঞ্চম ধাপে ভোটের সম্ভাব্য তারিখ ১৮ জুন নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই নির্বাচনী হাওয়া বইছে সারা দেশে।

ঢাকার নবাবগঞ্জ-দোহার উপজেলা থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির আবু আশফাক। বিধি মোতাবেক তিনি পদত্যাগ করে অংশ নিয়েছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টেকেননি। আশফাক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দলের বুকে ছুরি মেরে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন তিনি করবেন না। গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে যে নির্বাচন হয়েছে আগামী উপজেলা নির্বাচনেও একই রেজাল্ট হবে। মাঝখান থেকে কিছু নেতাকর্মীকে জেলে যেতে হবে, প্রার্থী হিসেবে বড় অঙ্কের ব্যয়ভার বহন করতে হবে। নির্বাচনের বদলে তিনি দলের পেছনে শ্রম দেবেন বলে জানান।

ফরিদপুর সদর উপজেলা থেকে গতবার নির্বাচন করেছিলেন মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু। গতকাল তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দলের জন্য জীবনের ৩৮টি বছর শ্রম দিয়েছেন। দল এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তার নেতাকর্মীরা ভোটে অংশগ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। সব মিলিয়ে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের চেয়ে স্থানীয়দের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে বলে তিনি আভাস দিয়েছেন।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা থেকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম। পদত্যাগ করে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, লড়াই করেছেন প্রার্থিতা ঠিক রাখার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনি জটিলতায় ছিটকে পড়েছেন। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ বাকি আছে। হাইকমান্ড বিচার বিশ্লেষণ শেষ করেনি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে এবং সংগঠন শক্তিশালী করতে নির্বাচনমুখী দল হিসেবে বিএনপিকে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

দল তো বহিষ্কার করবে তখন কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরকম ঘটনা নতুন নয়। অতীতে সিদ্ধান্ত এসেছে, অনেকেই ভেঙেছে। বহিষ্কার আদেশ হয়েছে, প্রত্যাহারও হয়েছে। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ৩০ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতি’র মধ্য দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা, মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এই সরকারের অধীনে এখন নির্বাচনে যাওয়ার অর্থই হলো জাতীয় নির্বাচনে তাদের সব অবৈধ কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেওয়া।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads