তিন দশক পর আদালতের নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১১ মার্চ। গতকাল সোমবার এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নির্বাচনের তফসিল নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো আপত্তি জানালেও স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এই তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১১ মার্চ ২৫ পদে ভোটগ্রহণ করা হবে। মনোনয়ন সংগ্রহ ১৯-২৫ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়ন জমা ও বাছাই ২৬ ফেব্রুয়ারি। ঘোষিত তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্রদল; বাম ছাত্র সংগঠনগুলোও আপত্তি তুলেছে। তবে একে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ। তফসিলের আগেই ছাত্রদল ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিতের পর নির্বাচনের দাবি তুলেছিল। সেজন্য তফসিল পেছাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দিয়েছিল তারা।
তফসিলের পর ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী অভিযোগ বলেন, সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনকে জেতানোর আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই তফসিলকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা স্মারকলিপি দিয়ে, আলোচনা করে নির্বাচন পেছানোর কথা বলেছিলাম, কিন্তু আমাদের কোনো কথাই তো শুনল না। আমরা বলেছি, আগে সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু সেসব না করেই তফসিল দিয়ে দিল। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ছাত্রলীগকে নির্বাচনে জেতানোর জন্য সব আয়োজন প্রশাসন করে রাখছে। হলে ভোটকেন্দ্র রাখার বিরোধিতা করে ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, হলগুলো তো তাদের (ছাত্রলীগ) দখলে। হলে ভোট হলে যে তা সুষ্ঠু হবে না, সেটাও জানা কথা। নির্বাচনে অংশ নেবেন কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন- এ বিষয়ে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, তাদের দাবি উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণা করায় উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। তফসিল ঘোষণা একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা আমাদের মাঝে অনেক বেশি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট কিছুু দাবি উপস্থাপন করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। সেই দাবিগুলোকে অগ্রাহ্য করে, শুধু একটি দলের সামগ্রিক বিবেচনাকে প্রাধান্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই বিষয়টা নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কি-না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি করে।
ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সোচ্চার থাকবেন বলে জানান লিটন। তিনি বলেন, আমরা হয়তো আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যেই অনানুষ্ঠানিক প্যানেল ঘোষণা করতে পারব। আমরা চাইব, আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনা করে সবার জন্য সমসুযোগ এবং নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হবে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশাপাশি কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদও এবার প্যানেল দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তফসিলের প্রতিক্রিয়ায় পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, হলের বাইরে ভোটকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি দাবি আমরা উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছিলাম। বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠনই হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র চেয়েছে। আমাদের কোনো দাবিই সেই অর্থে গ্রহণ করা হয়নি তফসিলে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে বসে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ। ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত নেতৃত্বের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। তারা এমন ধরনের ছাত্ররাজনীতিই চান, যারা তাদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন এবং তারা একটা স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চান। কিন্তু এর জন্য কোনো যৌক্তিক প্ল্যাটফর্ম যেহেতু নেই; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, তাদের সেই প্রত্যাশার প্রতি সম্মান রেখে আমরা তফসিলকে স্বাগত জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২৮ বছর পর হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে ভোটগ্রহণ কোথায় হবে, তা নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। আগের মতো হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে ছাত্রলীগ স্বাগত জানালেও ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি তোলে। তবে কর্তৃপক্ষ আগের মতোই হলেই ভোটকেন্দ্র রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।