• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
রাজদরবার থেকে ফুটপাথে

লোগো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

রাজনীতি

জোট-মহাজোটে বিচ্ছেদ

রাজদরবার থেকে ফুটপাথে

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‘নদীর একূল ভাঙে ওকূল গড়ে/এই তো নদীর খেলা...’- কাজী নজরুল ইসলামের এই গানের নদীর কূলের মতোই রাজনৈতিক দল ও ঐক্যমঞ্চে ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে। অতীতে রাজনীতির ঐক্যে ভর করে ‘রাজদরবারে’ ঠাঁই হয়েছিল কোনো কোনো দলের প্রধানের। তারা নিজের ভিতও শক্ত করেছিলেন। সময়-অসময়ে নানা বচন দিয়ে লাইমলাইটে এসেছিলেন অনেকেই। কিন্তু বর্তমানে ওইসব দলের ভিত যেমন দুর্বল, শীর্ষ নেতাদের জনপ্রিয়তাও তলানিতে। বড় দলের সঙ্গে বিচ্ছেদ চূড়ান্তরূপ হলে রাজদরবার থেকে আবারো তাদের নামতে হবে ফুটপাথে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতির ময়দানে বাস্তবতা আর স্বার্থের হিসাব-নিকাশে জোট বাঁধার নজির নতুন নয়। তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক শীতল হয়ে এসেছে অনেকের। জোট দুটিতে এখন আদর্শ, লাভ-ক্ষতি বোঝাপড়ার বিষয় চলে এসেছে। জোটের অভ্যন্তরে বাজছে বিচ্ছেদের সুর। বড় ধরনের ভাঙন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অবশ্য উভয় জোটের একাধিক নেতার দাবি, হালি হালি দল নিয়ে জোট বা মহাজোট গঠন করা হয়েছে। শরিক আসবে-যাবে, তাতে জোটের কোনো ক্ষতি হবে না।

২০-দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপি। দলটির ২০টি শরিকের মধ্যে কয়েকটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভেঙেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক একাধিক দলও। এখন শুরু হয়েছে জোট ছাড়ার পালা। সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে ২০ বছরের বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ ঘটাতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিলেও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। এ নিয়ে দলীয়  নেতাদের কিছু দিকনির্দেশনাও দিচ্ছে জামায়াত। অন্যদিকে জামায়াতের এমন সিদ্ধান্তে খুশি বিএনপিও। ২০ দল থেকে ইতোমধ্যে খণ্ডিত হয়ে চলে গেছে বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।

এদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ঐক্যমঞ্চে থেকেই বিপরীত ভূমিকা পালন করছে। আবার ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (আম্বিয়া) সরাসরি জোটপ্রধান দল আওয়ামী লীগের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। দলটির প্রধান শরিফ নূরুল আম্বিয়া একটি ইংরেজি গণমাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে তা সবাই জানে। সবাই বুঝতে পেরেছে ঘটনাটি কী হয়েছে। ভোটের আগের রাতেই ভুয়া ভোটের মাধ্যমে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখাসহ নানা অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। সচরাচর নির্বাচনে যা হয় তার সবই হয়েছে। এটি প্রমাণ করার কিছু নেই। মানুষের কাছে এতই স্পষ্ট হয়েছে যে কোথায় কত কম অনিয়ম হয়েছে বা কোথায় অনিয়ম হয়নি সেটিই খুঁজে দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার পুরোপুরি একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। প্রশাসনের লোকেরা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ বক্তব্যের পর থেকেই জাসদের এই অংশকে ‘না’ বলতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

সূত্র মতে, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে ‘চারদলীয় জোট’ গঠন করেছিল বিএনপি। পরে জাতীয় পার্টি নিয়ে এরশাদ সরে গেলে শূন্যস্থান পূরণ করে নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১২টি মিত্রদলকে যুক্ত করে ১৮-দলীয় জোট করে বিএনপি। পরে চার শরিক নিয়ে খণ্ডিত হলেও কালের আবর্তে ১৮ দলে রূপ নেয় ২০-দলীয় জোটে। গত নির্বাচনে শরিক বাড়াতে ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠন করে বিএনপি, যার নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ঐক্য মজবুত করার আশায় নতুন-পুরনো এমনকি ভিন্ন আদর্শের কারো কারো হাতে বিএনপি তুলে দেয় নিজ দলীয় প্রতীক ধানের শীষও। জোট গঠন ও নির্বাচনের আগে-পরে জামায়াতের বিষয়টি বারবার আলোচনায় এনেছেন ড. কামাল হোসেন। বিএনপিকে জামায়াত ত্যাগের ঘরোয়া পরামর্শও দিয়েছেন। 

এদিকে ২০০১ সালে ৪-দলীয় জোটের বিপরীতে গঠিত হওয়া ৮ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যোগ দিয়ে ১১-দলীয় জোট গঠন করে। ওই জোট গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বর্তমান ঐক্যফ্রন্টের নেতা গণফোরামের ড. কামাল হোসেন। ১১ দল পরে ১৪ দল হয়ে মহাজোটে রূপ লাভ করে। ৪-দলীয় জোট সরকারের শেষের দিকে বিএনপি এরশাদকে জোটে ভেড়ানোর জন্য চেষ্টা করলেও অজ্ঞাত স্থান থেকে এরশাদ পল্টনের মহাজোটের মঞ্চে উপস্থিত হয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন। ওই মঞ্চে বিকল্প ধারার বি. চৌধুরী, এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদও যোগ দেন। কিন্তু নির্বাচন করেন পৃথকভাবে। এবারের নির্বাচনেও ছিলেন বি. চৌধুরী। তার দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মাহি বি. চৌধুরী সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আগেরবার শরিক দলের মালিকদের মন্ত্রিত্ব দিলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। তারা শরিক দলকে বিরোধী দলের আসনে দেখতে চায়। কিন্তু তাতে নাখোশ জোট শরিকরা। এ নিয়েও চলছে টানাপড়েন।

সংসদ নির্বাচনে ১৪ দল জোটগতভাবে অংশ নিলেও গত ১৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের উদযাপিত বিজয় সমাবেশে তাদের উল্লেখযোগ্য আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণ ছিল না। নির্বাচনের পর ১৪ দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকও হয়নি আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৪ দলের নেতারা একসঙ্গে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। গত সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসন বণ্টন নিয়েও আওয়ামী লীগ শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করার অভিযোগ আছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads