• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বিএনপিও চায় না জামায়াত

ড. এমাজউদ্দীন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

বিএনপিও চায় না জামায়াত

২০ বছরের ক্ষতি অপূরণীয় : এমাজউদ্দীন

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাজনৈতিক অঙ্গনে টক অব দ্য কান্ট্রি জামায়াতে ইসলামী। বাস্তবতা ও স্বাধীনতাবিরোধী ইস্যুতে একে একে দল ছাড়ছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজনীতির মাঠে আলোচনা চলছে নতুন খোলসে আবির্ভাব হচ্ছে দলটি।

বিএনপির নীতিনির্ধারক ও বুদ্ধিজীবীদের বিশ্লেষণে মিত্র হিসেবে ২০ বছর বগলে রাখার কারণে লাভের চেয়ে লোকসানই হয়েছে বেশি। দলটি এখন আর জামায়াতকে চায় না। তবে এখনই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে না তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমি সব সময়ই মনে করি, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট থাকা উচিত নয়।’ সহমত পোষণ করেছেন ২০-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে বিতর্কিত সংগঠনটিকে বগলে রেখে আমরা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত বা লাভবান হয়েছি তার হিসাব করার।’ তার মতে, লাভের চেয়ে অনেক গুণে ক্ষতির শিকার ২০ দল তথা মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার দল বিএনপি।

জামায়াত বিএনপি ছেড়ে যাচ্ছে- এমন সংবাদে খুশি হয়েছেন বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘শুনেছি জামায়াত নাকি বিএনপি ছাড়ছে, তবে তারা এই সিদ্ধান্ত না নিলেও সময়সাপেক্ষে জামায়াতকে ছাড়বে বিএনপি। গত ২০ বছরে বিএনপির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।’

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএনপিকে অনেক আগেই জামায়াত ছাড়ার প্রয়োজন ছিল। তাহলে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন পেত বিএনপি।’

জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের অনেকেই যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের (যুদ্ধাপরাধ) কারণে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে কয়েকজন নেতার। সাজার রায় নিয়ে জেলে আছেন অনেকেই। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ব্যাপক বিজয় পায়। এ কারণে একত্রে সরকারও গঠন করে তারা। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ জোটের ভরাডুবি হয়। এরপর থেকে জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি অঙ্গন থেকে চাপ বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে জামায়াত দেশে ব্যাপক সহিংসতা চালায়। ২০১৪ সালের নির্বাচন রুখতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ব্যাপক মাত্রা পায়। ২০১৫ সালে সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে দলের শুভাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধিজীবীরাও চাপ দিতে থাকেন। বিএনপি তার এই রাজনৈতিক মিত্রকে ছাড়তে চায়নি।

তবে এরপর থেকে বিএনপি জোটের আন্দোলন প্রশ্নে জামায়াতের পিছুটান, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে দলটির নেতাদের মন্তব্য, আইনি লড়াইয়ে জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা, জামায়াতপ্রীতি অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলের মুখ ফেরানোসহ নানামুখী কারণে জামায়াত নিয়ে নতুন করে ভাবছে বিএনপি।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ বছরে দলের স্থায়ী কমিটিতে যত বৈঠক হয়েছে বেশিরভাগ বৈঠকেই জামায়াত প্রসঙ্গ এসেছিল। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খানসহ একাধিক সদস্য অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপটের কথা চিন্তা করে জামায়াতকে ত্যাগ করার পক্ষে মত দিয়েছে। কিন্তু দলের একাধিক প্রভাবশালী নীতিনির্ধারকদের জামায়াতপক্ষ সমর্থন করায় আলোচনা পাত্তা পায়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ২০ দলও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে। সেখানে আসন বণ্টন নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দর-কষাকষি চলে। মনের মতো আসন না পাওয়ায় জামায়াত তখন মনঃক্ষুণ্ন হয়। বিএনপি নির্বাচন বয়কট না করলেও ৩০ ডিসেম্বর তারিখ দুপুরেই জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এতেও জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্যেও বাদ সেধেছে জামায়াত। ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ইতোমধ্যে জামায়াত ছাড়তে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপিকে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ড. কামালের পরামর্শ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘জামায়াতে তো এখন অনেক কিছুই ঘটছে, দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়। আমরা সময়মতো সিদ্ধান্ত নেব। জামায়াতের কারণে বিএনপি অনেক প্রভাবশালী বন্ধু হারাচ্ছে বলে জানান এই নীতিনির্ধারক।’

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads