• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
ঐক্যফ্রন্টের বাকিদের শপথ নিয়ে আ.লীগে জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে

লোগো ঐক্যফ্রন্ট

রাজনীতি

ঐক্যফ্রন্টের বাকিদের শপথ নিয়ে আ.লীগে জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৯ মার্চ ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত বাকি সাতজনের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগে জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে। একজনের শপথ নেওয়ার পর বিএনপি-গণফোরামের দলীয় কঠোর অবস্থান ও তাকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ক্ষমতাসীন দলে। বাকিরা নির্ধারিত সময়ে শপথ নেবেন কি না, নাকি ওই সাতটি সংসদীয় আসনে পুনর্নির্বাচনের দরকার হবে, আওয়ামী লীগের নজর এখন সেসব দিকে। ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতার সময় বাড়ানোর সুযোগ নিয়েও দলটির শীর্ষ নেতারা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।

সরকারি দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্রমতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সবাইকে না হলেও অন্তত কয়েকজনকে সংসদে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার ও আওয়ামী লীগে এক ধরনের তৎপরতা আছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে হলেও গণফোরামের দুজন ও বিএনপির একাধিকজন শপথ নেবেন বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতার কাছে তথ্য ছিল। বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদে যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ আশাবাদী ছিল নির্বাচনের পর থেকেই।

গণফোরামের দুজনের শপথের পর রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী কোণঠাসা বিএনপিকে আরো কোণঠাসা করার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষে ওই তৎপরতা চালানো হয়। এ দুজন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দিলে তাদের  আইনি পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের আলোচনার টেবিলে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মনসুর ও মোকাব্বির সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠিও দেন।

সে অনুযায়ী শপথ নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সংসদ সচিবালয়। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলিয়ে মোকাব্বির শপথ নেননি। এতে কিছুটা হলেও ‘হোঁচট’ খেতে হয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজনকে। মোকাব্বিরসহ অন্যরা কখন শপথ নেবেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত আটজনের মধ্যে বাকি সাতজন শপথ না নিয়ে সরকারকে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক চাপে’ ফেলার যে কৌশল বিএনপি নিয়েছে, সেদিকেও এখন তাই সতর্ক নজর রাখছে আওয়ামী লীগ।

সূত্র জানায়, ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে জিতলেও সেই প্রতীকের দল বিএনপি ও নিজের দলের সিদ্ধান্ত, অনুরোধ ও হুমকি উপেক্ষা করে সুলতান মনসুর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। তার এ সিদ্ধান্ত গণফোরামের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি করছে বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে। তা ছাড়া রাজনীতিতে নানা কৌশল ও কূটকৌশল থাকে। বিএনপির নির্বাচিতরা আপাতত শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও কৌশলগত কারণে শেষ পর্যন্ত তারা শপথ নেবেন বলেও আওয়ামী লীগের কেউ কেউ আশাবাদী।

তবে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় সুলতান মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে গণফোরাম। তাকে গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দুই দল থেকেই বহিষ্কারের কথা জানায় গণফোরাম। বহিষ্কারের কারণ হিসেবে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বহিষ্কারাদেশের কথা জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নেওয়ার নির্ধারিত সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ সংবিধানে আছে কি না, এ নিয়েও দলের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা আছে। নির্দিষ্ট কারণ থাকলে স্পিকার শপথের সময় বাড়াতে পারেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ চায়, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে ৯০ দিনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা শপথ না নিলে তাদের শপথের সময় দিতে। ৯০ দিনের মধ্যে শপথের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যের সামনে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত সময় আছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আশা করি, সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের অন্য যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারাও সংসদে আসবেন। সংসদে এসে সরকারের ভুল ধরিয়ে দেবেন। সরকারের কঠোর সমালোচনা করবেন।’

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ মনে করেন, ‘সুলতান মনসুরের পথ ধরে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত বাকিরাও অচিরেই শপথ নেবেন। তিনি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সংসদে যোগ দিয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের ভোটের মান রেখেছেন। সুলতান মনসুরের পথ ধরবেন ঐক্যফ্রন্টের বাকিরাও।’

অন্যদিকে শপথ নিয়ে সুলতান মনসুর নিজেকে ‘ছোট করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা’ করেছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কেউ একাদশ সংসদে যোগ দেবে না। বিএনপি আগের সিদ্ধান্তেই অনড়।’ সুলতান মনসুরের শপথ নেওয়াকে ‘রাজনৈতিক ছলনা’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এজন্য গণফোরামের সংসদ সদস্য ‘গণশত্রুতে’ পরিণত হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জোট থেকে জয়ী ৮ জন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না।

সরকারি দল ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানানো হলেও তারা এখনো সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ‘সংখ্যায় কম হলেও’ বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানান। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য শপথ নিলেও বিএনপি ও গণফোরামের বাকি সাতজনের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে সংসদ সচিবালয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে ইসি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads