• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মন্ত্রী-এমপিদের চাপে উপজেলা নির্বাচন

লোগো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সংক্ষিত ছবি

রাজনীতি

মন্ত্রী-এমপিদের চাপে উপজেলা নির্বাচন

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০১৯

চলমান উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের চাপে পড়েছে বেশিরভাগ উপজেলার নির্বাচন। তাদের বাড়াবাড়ি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে নিরুত্তাপ নির্বাচনও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তারা পেছন থেকে নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি প্রকাশ্যেও অনেকে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ও দায়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) উদ্যোগ নিয়েও অনেককে দমাতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সমালোচনার শিকার হচ্ছে। একই সঙ্গে দলটির তৃণমূলে ভ্রাতৃঘাতী বিরোধও বাড়ছে।

সূত্র জানায়, পঞ্চমবারের উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মিলিয়ে অন্তত ৩০ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে অন্তত ২২ জন সংসদ সদস্যকে চিঠিও দেয় ইসি। চিঠিতে ভোটের আগে তাদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলে। ইসির নির্দেশ অনুযায়ী কেউ কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী এলাকা ছাড়েননি বলেও অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগেরই তৃণমূল পর্যায় থেকে। ফলে দলীয় কোন্দলের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতার মধ্যেও কিছু কিছু স্থানে ভোট জালিয়াতি, বাক্স ছিনতাই, আগের রাতের ব্যালট ভরে রাখা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ইসির ঘোষিত নীতি অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা কোনো দলের বা নিজের পছন্দের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারেন না। তারা কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজও করতে পারেন না। কিন্তু দেশের বিভিন্ন উপজেলায় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যহার করে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তাদের নিবৃত্ত করতে পারছে না ইসি। আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ- ইসির নোটিশের বাইরেও অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আছেন, যারা নির্বাচনে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন।

ইসি সূত্র জানায়, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে ১২৭ উপজেলায় অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সাত সংসদ সদস্যকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইসি। গত বুধবার রাতে এ সংক্রান্ত নির্দেশ  সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ৭৮টি উপজেলায় নির্বাচনের আগে ৯ জন সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা শেষ পর্যন্ত এলাকা ছাড়লেও ইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এলাকা ছাড়েননি বলে অভিযোগ আছে। একইভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগেও কয়েকজন সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়তে চিঠি দেয় ইসি।

দলীয় সূত্র জানায়, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে। বামদলের জোট ও ধর্মপন্থি কয়েকটি দলও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে মহাজোটের শরিক দলগুলো আলাদা অংশ নেয়। অনেক উপজেলায় শরিক দলগুলো প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সমালোচনা এড়াতে আওয়ামী লীগ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে অনেকটাই ‘নমনীয়’ থাকে। এ সুযোগেই মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন উপজেলায় নিজের লোককে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। তবে তাদের এ তৎপরতার পরও সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চার ধাপে ৪৫০ উপজেলার ১০৮ জন চেয়ারম্যান বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এ হিসাবে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন।

সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দলীয় প্রধানের কঠোর নির্দেশনায় ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয়ে কাজ করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এর দুই মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বেশ বিপাকে দলটি। আওয়ামী লীগের তৃণমূলে কোন্দল এখন চরমে। প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব, একজন আরেকজনকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ, বক্তৃতা-বিবৃতিতে চরিত্র হনন; এমনকি মারামারি-খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকসহ সাধারণ নেতাকর্মীরা। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকেও।

নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে নানা উদ্যোগ শুরু থেকেই দলের পক্ষে নেওয়া হয়। তাদের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়নের বদলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া ও দলের মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে কোনো অবস্থাতেই যেন দলীয় কোন্দলের প্রকাশ না ঘটে, সেদিকে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই।

দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সময় ঘটা আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য এবার আগেভাগেই দল সতর্ক ছিল। এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধের কারণে উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে যেন খেসারত দিতে না হয়, সেজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দলীয় কোন্দল নিরসনের উদ্যোগও নেওয়া হয়। অনেক উপজেলায় সেসব উদ্যোগের  বাস্তবায়ন হয়নি বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

সূত্র বলছে, প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভিন্নমত ছিল আওয়ামী লীগে। এবার এ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার বিষয়েও মত ছিল দলের ভেতরে। বিএনপির বর্জন আর সবশেষ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় কোন্দল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শুরুতেই ছিলেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ। আইন সংশোধন করে নির্বাচনকে নির্দলীয় করা যায় কি না, এমন প্রস্তাবও দলের শীর্ষ বৈঠকে দেন কেউ কেউ। তাদের যুক্তি ছিল, এ বছর উপজেলা নির্বাচন অরাজনৈতিক হলেই ভালো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads