• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
টালমাটাল জাপা

রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

রওশন-কাদের দ্বন্দ্ব

টালমাটাল জাপা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৯

সকাল-বিকাল ভোল পাল্টান, পাল্টান মত-পথ-আদর্শ, ক্ষণে ক্ষণে বদলান সিদ্ধান্ত— দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এমনই একজন ব্যক্তি সাবেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ (এইচএম) এরশাদ। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ঘটন-অঘটনের জন্ম দেওয়া রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান। অনেকটা কাণ্ডারিবিহীন দিকভ্রান্ত তরীর মতোই হেলেদুলে চলছে তার পার্টি।

দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ এইচএম এরশাদ। জীবনসায়াহ্নে তার পার্টিতে শুরু হয়েছে নানামুখী তেলেসমাতি কারবার। পার্টির এক নেতা ল্যাং মারছে আরেক নেতাকে। সময়-অসময়ে প্রেস রিলিজ দিয়ে এরশাদ নিজে কখনো কোনো নেতার পদ হরণ করছেন, আবার কখনো পদায়ন করছেন অন্য কাউকে। হাল আমলে জাপায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ এমপি ও সহোদর জিএম কাদেরের পদায়ন-পদাপসারণ। দৃশ্যত দলে এ দুজনের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই এখন তুঙ্গে। এই লড়াইয়ের শেষ কে জিতবেন, কে হবেন জাপার পরবর্তী কাণ্ডারি তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে বলে নেতাকর্মীদের মন্তব্য।

পার্টির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এবং তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, কালে কালে খণ্ডিত পার্টিকে আরো খানখান করতে ঘরের শত্রুরা সক্রিয়। পার্টিকে হাইজ্যাক করতে তারা মরিয়া। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ফেরত জাপা নেতারা। সম্প্রতি এ চক্রে যোগ হয়েছেন ১/১১’র একজন কুশীলব। তিনিও সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা। স্বার্থ হাসিলের জন্য চক্রটি এরশাদের অসুস্থতাকে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। চাউর রয়েছে, অসুস্থ এরশাদকে চাপে ফেলে ইতোমধ্যে বেশকিছু অঘটন ঘটিয়েছে পার্টিতে। যে কারণে পার্টিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা বোধ করছেন অনেক সিনিয়র নেতাও।

গত দুই সপ্তাহ ধরে পার্টিতে গৃৃহবিবাদ চলছে। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত ২২ মার্চ গভীর রাতে আপন ছোটভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। পরের দিন বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকেও বাদ দেওয়া হয় তাকে। এতে বেঁকে বসেন বৃহত্তর রংপুরের নেতাকর্মীরা। সিদ্ধান্ত পাল্টাতে তারা এরশাদকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই ফের কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করা হয়। একই সঙ্গে ঘোষণা আসে এরশাদের অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান হবেন জিএম কাদের।

এর আগে গত ৩ এপ্রিল রংপুরের সিটি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে বৃহত্তর রংপুর বিভাগের র্শীষ নেতারা বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে এরশাদের সঙ্গে রুদ্ধধার বৈঠক করেন। বৈঠকের পরদিনই আবারো এরশাদ ‘বিশেষ সিন্ডিকেটের চাপ’ উপক্ষো করে জিএম কাদেরকে দলে আগের পদ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে যাতে চাপের মুখে এরশাদ আবার কোনো বৈরী সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন সেজন্য পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এরশাদের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ‘বিশেষ সিন্ডিকেটের চাপ’ সিনিয়র নেতারাও এরশাদের বাসভবন এড়িয়ে চলছেন।

এরশাদের দ্রুত সিদ্ধান্তের পরিবর্তনের বিষয়ে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রংপুরের কয়েকজন নেতাকর্মী এরশাদকে অনেকটা জিম্মি করে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করতে বাধ্য করেন।

তবে এর পাল্টা মন্তব্য করেছেন রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির। তিনি বলেন, বৃহত্তর রংপুরের মাটি ও মানুষ পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রাণের স্পন্দন। আমরা চাই জাতীয় পার্টি বেঁচে থাকুক। কিন্তু দলের ভেতর একটি কুচক্রীমহল জিএম কাদেরসহ পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ষড়যন্ত্রকারীরাই এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে পার্টিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করছেন।

জিএম কাদেরকে পূর্ব পদ ফিরিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জাপার একজন শীর্ষ নেতা জানান, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা না বলে জিএম কাদেরকে পূর্ব পদে পুনর্বহালে ক্ষুব্ধ তার বিরোধীরা। জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয়েছে, সংসদে ২২টি আসন পেয়েছে সরকারের সমর্থনেই। কিন্তু জিএম কাদের এ বাস্তবতা মানতে চান না। এছাড়া জিএম কাদের এখনো আমলাভাব ছাড়েননি। তিনি পার্টি চালাতে কারো সহযোগিতাও চান না। এভাবে দল চলতে পারে না।

জাপা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এ বিষয়ে বলেন, জাতীয় পার্টি সবসময় এরশাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে। আমরা তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে, সম্প্রতি জাপার নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহলে জাপার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও পার্টির অধিকাংশ নেতাকর্মী চেয়ারম্যানের যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল। এতে সমালোচনার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।

এদিকে জাপায় অভ্যন্তরীণ বিরোধের মধ্যে হঠাৎ এরশাদের বাসভবন ও বনানী কার্যালয়ে পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। তারা জোটবদ্ধ হয়ে উত্তপ্ত স্লোগান দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে কোনো নেতা এরশাদের বাসভবনে এলে তাদের প্রতিহত করা হবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, বিগত দুই সপ্তাহ যাবৎ পার্টির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রীরা পার্টিকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। ভেবে দেখতে হবে, এদের উৎপত্তি কোথায়? যারা ষড়যন্ত্র করছেন তারা এক সময় বিএনপি থেকে এই পার্টিতে এসেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ এরশাদের বুকে ছুরিকাঘাত করে চলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন।

তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কেউ যেন জাপার ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ অনেকে জাপাকে ভেঙে বিএনপি-জামায়াত জোটের মিশন বাস্তবায়ন করতে চায়।

জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল্লাহ শফি বলেন, জাতীয় পার্টির সব সময় আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। জিএম কাদের সব সময় সরকারকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। তাই জাপার মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছিল।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads