• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কে চালাচ্ছেন বিএনপি?

লোগো বিএনপি

রাজনীতি

সিনিয়র অনেক নেতাই অন্ধকারে

কে চালাচ্ছেন বিএনপি?

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১২ এপ্রিল ২০১৯

সংগঠন গতিশীল করতে হালনাগাদ হচ্ছে বিএনপি। সহযোগী সংগঠন ও জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হচ্ছে, বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে, সময়ের ব্যবধানে হচ্ছে নতুন কমিটি। নানা ইস্যুতে অহরহ ঘটছে নেতাকর্মী বহিষ্কারের ঘটনা। জোর তদবিরে আদেশ প্রত্যাহারের নজিরও আছে। কার নির্দেশে, কোন অভিযোগে বহিষ্কার, আকস্মিক কমিটি বিলুপ্তিই বা কেন, নতুন কমিটিতে হঠাৎ নেতাদের আগমন, মৃত নেতার নামও অন্তর্ভুক্তি কেন, কে চালাচ্ছেন বিএনপি- এমন অন্তত ডজন প্রশ্ন দলটির নেতাকর্মীদের। জবাবের আশায় তারা যাচ্ছেন গুলশান কার্যালয়ে, নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, স্থায়ী কমিটির সদস্যের চেম্বারে, দলের মহাসচিবের বাসায়, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে। রকমফের জবাব মেলে— ‘কিচ্ছু করার নাই, সিদ্ধান্ত আসে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে, আমরাও অনেক বিষয়ে জানি না’। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায় এড়াতে সিনিয়র নেতারা একে অপরকে দেখিয়ে দিচ্ছেন।

বিএনপি পরিচালনার ধরন প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বসেই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য ভালোমন্দ সবকিছুর দায়-দায়িত্ব স্থায়ী কমিটির সবার। গত এক বছর ধরে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি। সাজা নিয়ে এক যুগ ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে আছেন বাকিরা। দলীয় প্রধান কারাগারে যাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত হয়েছে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত নেতাদের যৌথ নেতৃত্বে চলবে দল। চলছেও তা-ই। দলের মনোনয়ন বোর্ডে সংযুক্ত হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্কাইপিতে কথা বলেছেন, এখনো বলছেন তিনি। কিন্তু অভিযোগের স্তূপ জমতে শুরু করে গত নির্বাচনের পর থেকে। বছরের পর বছর রাজনীতিতে নেই, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তারপরও দলীয় মনোনয়নের কর্তৃত্ব চলে গেছে ওইসব নেতার হাতে। চেয়ারপারসন মুক্ত থাকলে এমনটি হতো না। তবে এসব হলো কার নির্দেশে? দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন এবং বিজয়ী হওয়ার পর কেন পল্ট্রি দিলেন মোকাব্বির ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। মনোনয়নবঞ্চিতরা এ প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তখন থেকেই।

এদিকে, কারাগারে বছর পার করলেও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই কেন? এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মনে দেখা দেখা দেয় সন্দেহ-অবিশ্বাস। নেতায় নেতায় দূরত্ব, দোষারোপের তোপে দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন, অভিভাবকের দায়িত্ব নেবে কে— এসব প্রশ্নের জবাবও মিলছে না। অথচ নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর শুরু হয়েছে গায়েবি নির্দেশে গণবহিষ্কার আদেশ। রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা দল তার কর্মীদের কোনো সুবিধা দিতে পারছে না, ফলে এমনিতেই হতাশায় থাকে। তার ওপর গণবহিষ্কার দলকে সঙ্কুচিতই করবে।   

সম্প্রতি কয়েকটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁতিদল, ওলামা দলের নতুন কমিটিসহ মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ওলামা দলের সভাপতি মরহুম মাওলানা আব্দুল মালেকের নামও তালিকাভুক্ত হয়েছে। 

বিএনপির সূত্রমতে, যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালিত হওয়ার পরও কেন সিনিয়র নেতারা কিছু বলতে পারছেন না? এজন্য তৃণমূলে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি চালাচ্ছে কে? কেউ বলছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাই দল চালাচ্ছেন। আবার কেউ বলছেন, তারেক রহমান দলের মহাসচিবের সঙ্গে সমন্বয় করে বিএনপি চালাচ্ছেন। এমন গুঞ্জনও উঠেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার সবেচেয়ে আস্থাভাজনদের দিয়েই দল চালাচ্ছেন। এজন্য সিনিয়র নেতাদের অনেকেই কিছু জানছেনও না বলতেও পারছেন না। বলতে গেলে অনেক বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকছেন বেশিরভাগ সিনিয়র নেতা। দল পরিচালনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা থাকলেও শীর্ষ নেতারা অবশ্য প্রকাশ্যে তা বলতে চান না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দলের শীর্ষ নেতারাই আছেন এখন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায়। কারণ দলের হাইকমান্ড চাপ দিচ্ছেন দলীয় শৃঙ্খলা ঠিক করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। কিন্তু এমন কিছু বিষয় আছে যা স্থায়ী কমিটির কেউ জানতেই পারছে না। অথচ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরপরেও দলীয় বৃহত্তর স্বার্থে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আর নিজেদের ইচ্ছামতো কিছু বললে রোষানলের শিকার হতে হচ্ছে। কাউন্সিল ও দল পুনর্গঠনের বিষয়ে কথা বলে দুই নেতাকে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওই নেতার মতে, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যেমন তেমন, সবচেয়ে বেশি চাপে আছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের চরম এই বিপর্যয়ের জন্য অনেকে তাকে দায়ী করছেন। কেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া হলো, ঐক্যফ্রন্টকে কেন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি কেন দেওয়া হচ্ছে না— এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। শুধু দলীয় ফোরাম বা অনানুষ্ঠানিক আলোচনাতেই নয়, প্রকাশ্যেই নেতাকর্মীরা তার কাছে জবাবদিহি চাচ্ছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads