• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন কয়েক মন্ত্রী

আওয়ামী লীগের লোগো

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন কয়েক মন্ত্রী

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৫ এপ্রিল ২০১৯

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের মতো দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও চমক দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুনদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে জনপ্রিয়দের দায়িত্ব দিয়ে চমক সৃষ্টির পরিকল্পনা চলছে দলটিতে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যও বাদ পড়তে পারেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। সরকার ও দলের কার্যক্রম আলাদা রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সফল ও জনপ্রিয় কয়েকজন এবারের মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার পর থেকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আগের মতো সময় দিতে পারছেন না। তারা মন্ত্রিসভার দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করলেও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে তাদের কারো কারো। এতে দলীয় কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ছে। সরকারি কার্যক্রমে মন্ত্রীরা ব্যস্ত থাকায় দলীয় কর্মকাণ্ড আগের মতো চালিয়ে যেতে পারছেন না। ফলে মন্ত্রিসভার সেসব সদস্যকে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সামনের সারিতে না রাখার পরিকল্পনা চলছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে।

দলীয় সূত্রমতে, চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের সময় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের শীর্ষপদে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারেন। সভাপতি ছাড়া দলের অন্যান্য পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আলোচনা আছে। আলোচিত ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে যারা এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি, তাদের কেউ কেউ দল পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন। দল পরিচালনায় তাদের বর্তমান কার্যক্রম বিবেচনা করে দলের শীর্ষ পদ দেওয়া হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সাবেক যেসব মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতা দলের মনোনয়ন পাননি, তাদেরও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হতে পারে। দলের আগামী সম্মেলনের আগে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্তও আছে সরকারের। মন্ত্রিসভায় নতুন করে ঠাঁই হতে পারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আরো কয়েক নেতার। এ ক্ষেত্রে অন্তত ছয়জনের নাম বিশেষভাবে আলোচনায় আছে। তাদের মধ্যে যারা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হবেন, তাদেরও কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। তবে সবকিছুই জাতির পিতার কন্যা ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে বলে সূত্র জানায়।

সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। তাই দলকে নতুন করে সাজানোর পাশাপাশি সরকার থেকেও দলকে যতটুকু সম্ভব আলাদা করার পরিকল্পনা আছে। সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই পরিকল্পনাগুলোর বিশেষ উদ্দেশ্য। সরকারের গত ১০ বছরের সাফল্যে দলকে আরো সুসংহত ও সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে এবারের সম্মেলনে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

বঙ্গবন্ধু সব সময় চাইতেন দল ও সরকার আলাদা হবে। দল ও সরকার আলাদা হলে বেশ কয়েকটি লাভ হয়। এতে দল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, সরকারের ভুলত্রুটি হলে ধরিয়ে দিতে পারে। ফলে রাজনৈতিক দলটি শক্তিশালী হয় আর সরকারও ভুল-ভ্রান্তি শোধরাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু যা চাইতেন, তা বাস্তবায়ন করতে চান। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী দলে পরিণত হতে পারবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক এলাকায় উপদলীয় কোন্দল ও রেষারেষিতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও দল সরকারের সঙ্গে মিশে যাওয়ার অভিযোগ আছে। সেসব এলাকায় দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা কম। এজন্য দল ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানতে এবার জাতীয় সম্মেলনের আগে দলের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগেই আসছে দলটির তৃণমূলের নেতৃত্বে পরিবর্তন। ত্যাগী, নির্যাতিত ও যোগ্যদের দিয়ে ঢেলে সাজানো হবে তৃণমূলের কমিটিগুলোকেও। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরো গতি আনতে এমন পরিকল্পনা করছেন ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এর অংশ হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সারা দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটির নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদলের চিন্তাভাবনা চলছে। আগামী ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই সব ইউনিটের কাউন্সিল শেষ করতে চায় দলটি।

চলতি বছরের অক্টোবরে শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছরমেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের লক্ষ্যে সাংগঠনিক ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে দলে। চলতি মাসেই তৃণমূল সফরে বের হচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ উপলক্ষে দেশের আটটি বিভাগের জন্য ৮টি সাংগঠনিক টিমের খসড়া তৈরি করেছে দলের সম্পাদকমণ্ডলী।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads